দুর্ঘটনার পরে ঘাতক বাসে ভাঙচুর উত্তেজিত জনতার। —নিজস্ব চিত্র।
মায়ের সঙ্গে বাড়ি ফেরার সময় স্কুলবাসের ধাক্কায় এক শিশুর মৃত্যুতে সোমবার দুপুরে তেতে উঠল উত্তরপাড়ার মাখলা এলাকা। জনতা বাসটিতে ভাঙচুর চালায়। স্কুলেও হামলার চেষ্টা করে। তার পরে প্রায় তিন ঘণ্টা রাস্তায় দেহ আটকে বিক্ষোভ দেখায়। অবরোধ তুলতে শেষমেশ পুলিশ লাঠি চালায় বলে অভিযোগ।
মৃত শিশুটির নাম রিঙ্কি বৈদ্য (৫)। সে মাখলার একটি স্কুলে আপার নার্সারিতে পড়ত। বাড়ি রঘুনাথপুর বাজারের কাছে। দুর্ঘটনায় জখম হন তার মা কাকলিদেবী। তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন দুপুরে মায়ের সাইকেলে চড়ে মাখলার হরিসভার কাছে টি এন মুখার্জি রোড ধরে বাড়ি ফিরছিল রিঙ্কি। উল্টো দিক থেকে আসছিল ফাঁকা ওই স্কুলবাসটি। বাসটি কাকলিদেবীদের রাস্তার ধারে চেপে দেয়। কাকলিদেবী সাইকেলের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ছিটকে নর্দমায় পড়ে যান। রিঙ্কি রাস্তায় আছড়ে পড়ে। তার পরে বাসটির পিছনের চাকায় পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই সে মারা যায়।
চোখের সামনে এই দুর্ঘটনা দেখে ক্ষিপ্ত মানুষজন বাসটি ভাঙচুর করে। শুরু হয় পথ অবরোধ। বাসটির চালক অবশ্য আগেই পালায়। যে স্কুলের বাসে পিষ্ট হয়ে ছাত্রীটি মারা যায়, সেই ইংরেজি মাধ্যম স্কুলটি ঘটনাস্থলের অদূরেই। জনতা সেখানেও চড়াও হয়। তবে, পুলিশ সেখানে পৌঁছে পরিস্থিতি সামলায়। কিন্তু দেহ উদ্ধার করতে নাকাল হয় পুলিশ।
দুপুর ২টো থেকে দেহ আটকে শুরু হয় অবরোধ। অবরোধকারীদের অভিযোগ, ওই স্কুলটির অন্তত ৫০টি বাস রয়েছে। কোনও রকম নিয়মরীতির তোয়াক্কা না করে বাসগুলিকে রাস্তায় যত্রতত্র দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে বার বার অভিযোগ জানিয়েও কোনও ফল হয়নি। স্কুল কর্তৃপক্ষ সময়মতো সচেতন হলে হয়তো এই দুর্ঘটনা এড়ানো যেত। পুলিশ গিয়ে অবরোধকারীদের সঙ্গে আলোচনাও করে। কিন্তু শেষমেশ লাঠি চালিয়েই অবরোধ তোলে বলে অভিযোগ জনতার।
লাঠি চালানোর কথা মানেননি জেলা পুলিশের এক কর্তা। তিনি বলেন, ‘‘একটি শিশু মারা গিয়েছে। তার দেহটি দীর্ঘক্ষণ আটকে রাখা হয়েছিল। পুলিশ ওখানে লাঠি চালায়নি। দেহটি তুলতে যেটুকু বলপ্রয়োগ করতে হয় তা করেছে।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘স্থানীয় মানুষজনের ওই স্কুল কতৃর্পক্ষের বিরুদ্ধে যে সব অভিযোগ রয়েছে, তা নিয়ে তদন্তকারী অফিসারেরা তাঁদের সঙ্গে কথা বলবেন।’’
অন্য দিকে, এ দিনই সকালে পাণ্ডুয়ার চাপারুইয়ে ছোট ট্রাক উল্টে জখম হন ১৬ জন পুণ্যার্থী। তাঁরা পাণ্ডুয়ার থইপাড়ার বাসিন্দা। নীলের পুজো উপলক্ষে ত্রিবেণী ঘাটে গঙ্গায় স্নান করে ফিরছিলেন। পুলিশ জানায়, ট্রাকটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে যায়। আহতদের চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে পাঠানো হয়। তিন জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাদের কলকাতার এসএসকেঅম হাসপাতালে স্থানান্তরিত করানো হয়। আহতদের মধ্যে সুপর্ণা চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ গাড়িটা এত দ্রুত গতিতে চলছিল যে প্রথম দিকে বুঝতে পারিনি উল্টে যাবে। চাপারুইয়ের কাছে রাস্তায় বাঁক নেওয়ার সময়েই বিপত্তি।’’