হতশ্রী: হাসপাতাল না ভূতের বাড়ি! ছবি: দীপঙ্কর দে।
ঘরের দেওয়াল থেকে পলেস্তারা খসে পড়ছে। চিকিৎসক বাড়ন্ত। নার্স, অন্য স্বাস্থ্যকর্মী নেই বললেই চলে। ওষুধপথ্যও অমিল।
শ্রীরামপুর-উত্তরপাড়া ব্লকের চাঁপসরা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এখন নেশাড়ুদের আড্ডা। ইতিউতি নজরে পড়ে ছড়িয়ে থাকা মদের খালি বোতল, পোড়া সিগারেটের টুকরো।
হাতের কাছে পুরোদস্তুর স্বাস্থ্যকেন্দ্র থাকলেও তাই স্থানীয়দের অন্যত্র ছুটতে হয়। অবশেষে ৪ বিঘে জমির উপর গড়ে ওঠা স্বাস্থ্যকেন্দ্রটির হাল ফেরাতে রাস্তায় নেমেছেন সাধারণ মানুষ। কমিটি গড়ে জনমত তৈরি শুরু হয়েছে। আগামী রবিবার নাগরিক সমাবেশের ডাক দিয়েছে ‘চাঁপসরা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র বাঁচাও উদ্যোগ’ নামে ওই কমিটি।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সাড়ে তিন দশক আগে পিয়ারাপুর পঞ্চায়েতের চাঁপসড়া গ্রামে স্থানীয় একটি পরিবারের দান করা জমিতে স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি গড়ে ওঠে। চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীদের আবাসনও তৈরি হয়। সেই সময় এক জন চিকিৎসক বসতেন। পিয়ারাপুর পঞ্চায়েত ছাড়াও পার্শ্ববর্তী সিঙ্গুর ব্লক বা বৈদ্যবাটি পুরসভার একাংশের বাসিন্দারা চিকিৎসার জন্য এখানে আসতেন। কয়েক বছর আগে পরিকাঠামো সাজানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়। ১০ শয্যার অন্তর্বিভাগের জন্য একতলা ভবন তৈরি করা হয়। নতুন করে চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীদের আবাসনও হয়।
কিন্তু আসল কাজ কিছুই হয়নি। উল্টে পরিস্থিতি খারাপ হয়েছে। পুরনো ভবন জীর্ণ হয়ে পড়েছে। সেখানে গর্ভবতীদের ওষুধ দেওয়ার জন্য একটি ঘর খুলে রাখা হয়। বাকি ঘর বন্ধ। চতুর্দিকে ঝুল-আবর্জনা। ছাদের, দেয়ালের চাঙড় খসে পড়ছে। নামেই আউটডোর চলে। গ্রামবাসীদের দাবি, এক জন নার্স এবং চতুর্থ শ্রেণির কর্মী সেখানে বসেন। জ্বর, সর্দি-কাশি, পেটব্যথার মতো কয়েকটি রোগের ওষুধ দেওয়া হয়। আবাসনগুলিও কার্যত ভূতের বাড়ির চেহারা নিয়েছে।
বেশ কিছু দিন ধরেই গ্রামবাসীরা স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি পুনরুজ্জীবনের দাবি জানাচ্ছেন। তাঁরা জানান, মাস কয়েক আগে ব্লকের স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছে বিষয়টি নিয়ে দরবার করা হয়। স্বাস্থ্য দফতরের তরফে আশ্বাস দেওয়া হয়, পুজোর পরেই এক জন চিকিৎসক নিয়োগ করা হবে। দু’জন চিকিৎসক নিয়োগের ব্যবস্থা হলে অন্তর্বিভাগ চালু করা হবে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চৌহদ্দিতে পাঁচিল নেই। তার সুযোগে মাঝেমধ্যেই মদ-গাঁজার আড্ডা বসে বলে অভিযোগ।
স্বাস্থ্যকেন্দ্রের হাল ফেরাতে পাড়ায় পাড়ায় লিফলেট বিলি করছেন গ্রামবাসীরাই। গ্রামবাসীদের বক্তব্য, বহু মানুষ আশপাশের কারখানায় কাজ করেন। স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি চালু থাকলে তাঁরাও লাভবান হবেন। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পাশেই দিল্লি রোড। সেখানে অহরহ দুর্ঘটনা ঘটে। উপযুক্ত পরিষেবা মিললে দুর্ঘটনাগ্রস্তদের প্রাথমিক চিকিৎসাটুকু অন্তত এখানেই করা যাবে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট দফতর এ ব্যাপারে উদাসীন।
কমিটির তরফে স্থানীয় বাসিন্দা, পেশায় গৃহশিক্ষক জগন্নাথ রায় বলেন, ‘‘প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের জন্য ৩২ ধরনের ওষুধ বরাদ্দ রয়েছে। অ্যাম্বুল্যান্স ও অন্যান্য পরিষেবাও পাওয়ার কথা। এটিকে পুরোদমে চালু করতে সব চেষ্টাই আমরা করব।’’
জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক শুভ্রাংশু চক্রবর্তী বলেন, ‘‘পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখা হয়েছে। পরিষেবার কিছু খামতি রয়েছে। শীঘ্রই একজন চিকিৎসক ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সপ্তাহে দু-তিন দিন বসবেন।’’