ধমক: মনোনয়ন জমা দিতে না পেরে চুঁচুড়া স্টেশন রোড অবরোধ বিজেপি কর্মীদের। নিজস্ব চিত্র
রাতেই জানা গিয়েছিল, মনোনয়ন দেওয়া যাবে মঙ্গলবারও। রাতারাতি কংগ্রেস এক প্রার্থী জোগাড় করে ফেলেছিল। সকালে ছোট্ট মেয়েকে কোলে নিয়েই শ্রীরামপুরে মহকুমাশাসকের অফিসে এসেছিলেন রিষড়ার এক বধূ। কিন্তু সেখানে এসে শোনেন, আর দেওয়া যাবে না মনোনয়ন। কাজ ফেলে আসা মহিলা বলেই ফেললেন, ‘‘আজব ব্যাপার বাপু। কাল বলল, হবে। আজ বলছে, হবে না। কোন রাজ্যে বাস করছি!’’
মনোনয়নের সময়সীমা বাড়িয়েও তা বাতিলের প্রতিবাদে মঙ্গলবার হুগলির নানা জায়গায় বিক্ষোভ দেখাল বিরোধীরা। নির্বাচন কমিশনারের পদত্যাগের দাবি উঠল। বিজেপির দাবি, ধনেখালি, মগরা, বলাগড়, পান্ডুয়া থেকে দলের বেশ কিছু প্রার্থী মনোনয়ন জমা দিতে যান চুঁচুড়া মহকুমাশাসকের দফতরে। ঘড়ির মোড় চত্বরে চন্দননগর কমিশনারেট দফতরের সামনেই তৃণমূলের লোকজন মারধর করে তাঁদের তাড়িয়ে দেয়। মহিলারাও ছাড় পাননি। পরে তাঁরা মনোনয়নের সিদ্ধান্ত বাতিলের খবর পান। এর পরেই দুপুর দেড়টা নাগাদ বিজেপির কয়েকশো কর্মী-সমর্থক টালিখোলায় চুঁচুড়া স্টেশন রোধ অবরোধ করেন। ঘণ্টা দু’য়েক অবরোধ চলে।
বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, একে শাসক দল মনোনয়নে বাধা দিচ্ছে। তার উপর নির্বাচন কমিশনের হঠকারী সিদ্ধান্তে আরও সমস্যা হচ্ছে। শাসকদলের অঙ্গুলিহেলনে কমিশন কাজ করছে বলেও অভিযোগ তোলা হয়। অবরোধে শহরে ঢোকার প্রধান রাস্তায় যানজট হয়ে যায়। মানুষজন নাকাল হন। বিশাল পুলিশবাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। বিজেপির হুগলি সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সুবীর নাগ বলেন, ‘‘একে শাসকের হামলা, তার উপর কমিশনের এই অবস্থান। যাচ্ছেতাই পরিস্থিতি।’’
শ্রীরামপুরের মহকুমাশাসক এবং বিডিও দফতরে মনোনয়ন জমা করতে এসে অনেকেই কমিশনের সিদ্ধান্ত জেনে হতাশ হয়ে ফিরে যান। মহকুমাশাসকের দফতরের সামনে বিক্ষোভ দেখান সিপিএমের নেতা-কর্মীরা। দলের জেলা কমিটির সদস্য তীর্থঙ্কর রায় বলেন, ‘‘নির্বাচনের নামে প্রহসন চলছে। কমিশনারের পদত্যাগ করা উচিত।’’ বিজেপিও ওই দফতরের সামনে এবং রিষড়ায় বিক্ষোভ দেখায়। চণ্ডীতলা ১ ব্লকে মনোনয়ন জমা দিতে না পেরে বিক্ষোভ দেখান কংগ্রেস কর্মী-সমর্থকরা। সিঙ্গুরে মনোনয়ন জমা দিতে না পেরে থানার সামনে রাস্তা অবরোধ করেন সিপিএমের লোকেরা। দলের নেতাদের অভিযোগ, মনোনয়ন জমা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছিল। পরে তা বাতিলের কথা জানানো হয়। পান্ডুয়া বিডিও অফিসেও মনোনয়ন জমা দিতে না পেরে সিপিএম এবং বিজেপির বেশ কয়েক জনকে ফিরে যেতে হয়।
আরামবাগের মহকুমাশাসকের দফতরের সামনে অবশ্য অন্য চিত্র। সেখানে আবির খেলায় মাতেন খানাকুল-১ ব্লকের কয়েকশো তৃণমূল কর্মী। তাঁদের বক্তব্য, নতুন করে কেউ দাঁড়াতে না পারায় জয়ের ব্যাপারে প্রশ্ন রইল না। দলের নেতা শেখ জামির আলির কথায়, ‘‘গোঁজ প্রার্থীরা কেউ থাকবেন না।’’ তপন পাল নামে অপর এক নেতার বক্তব্য, ‘‘আজ মনোনয়নপত্র জমা হল না। তার মানে, নতুন করে গোঁজ প্রার্থী হল না। যাঁরা আছেন, তাঁরা তুলে নেবেন। তাই জয়ের আনন্দে আবির খেলছি।’’
অন্য দিকে, মনোনয়নপত্র জমা দেওয়াকে কেন্দ্র করে সোমবার বিকেলে আরামবাগের পূর্ব কেশবপুরে জয়ন্ত পোড়েল নামে দলের এক যুবকর্মীকে রাস্তায় ফেলে পেটানোর অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের লোকজনের বিরুদ্ধে। তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। জয়ন্তবাবুর ছেলে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। অপর পক্ষের তরফেও পাল্টা মারধরের অভিযোগ দায়ের করা হয়। ওই রাতে আরামবাগেরই দক্ষিণ নারায়নপুর গ্রামে মিন্টু চক্রবর্তী নামে যুব তৃণমূল কর্মী প্রহৃত হন বলে অভিযোগ। গোঁজ প্রার্থী হয়ে দাঁড়ানোয় হামলা বলে অভিযোগ। এ ক্ষেত্রেও থানায় অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ হয়েছে।
মঙ্গলবার সকালে ধনেখালিতে তৃণমূলের কিছু লোক মনোনয়ন জমা দিতে চুঁচুড়ায় মহকুমাশাসকের দফতরে যাওয়ার সময় দলের লোকজনই গ্রামে তাঁদের আটকে দেয় বলে অভিযোগ। তৃণমূল নেত্রী তথা মন্ত্রী অসীমা পাত্রের অবশ্য দাবি, ‘‘এমন কোনও ঘটনার কথা জানা নেই।’’