গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জের, বাইক বাহিনী দাপাল কানাইপুরে

সোমবার সকাল থেকেই এখানে বিভিন্ন বুথে উত্তেজনা ছিল। চক্রবর্তীনগরের একটি বুথ থেকে সিপিএমের এজেন্টকে মারধর করে বের করে দিয়ে ছাপ্পা ভোট দেওয়ার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে।

Advertisement

প্রকাশ পাল

উত্তরপাড়া শেষ আপডেট: ১৫ মে ২০১৮ ০৩:৩৮
Share:

লন্ডভন্ড: রাস্তায় ছড়িয়ে রয়েছে মোটরবাইক। নিজস্ব চিত্র

পঞ্চায়েত ভোটকে কেন্দ্র করে সোমবার সকাল থেকে রীতিমতো তেতে উঠল শ্রীরামপুর-উত্তরপাড়া ব্লকের কানাইপুর। বাইক বাহিনীর দাপট, মারধর, অগ্নিসংযোগ কিছুই বাদ গেল না। গুলিচা‌লনার অভিযোগও উঠল। মার খেলেন সাংবাদিকরাও। গোটা ঘটনাতেই অভিযোগের তির শাসক দলের বিরুদ্ধে। গোটা পর্বে পুলিশের দেখা অবশ্য মেলেনি বললেই চলে।

Advertisement

সোমবার সকাল থেকেই এখানে বিভিন্ন বুথে উত্তেজনা ছিল। চক্রবর্তীনগরের একটি বুথ থেকে সিপিএমের এজেন্টকে মারধর করে বের করে দিয়ে ছাপ্পা ভোট দেওয়ার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, ওই ঘটনার ছবি তুলতে গেলে এবিপি আনন্দের সাংবাদিক-সহ দুই সংবাদকর্মীকে বেধড়ক মারধর করা হয়। মোবাইল ফোন ভেঙে দেওয়া হয়। ক্যামেরার চিপ কেড়ে নেওয়া হয়।

অভিযোগ, দিনভর শাসক দলের শতাধিক মোটরবাইক বাহিনী কানাইপুর জুড়ে চষে বেড়িয়েছে। প্রতি বাইকে দুই থেকে তিন জন ছিল। তাদের হাতে ছিল রড-লাঠি, হকিস্টিক। নেতৃত্বে ছিলেন শহরের তৃণমূল নেতারা। বিরোধীদের পাশাপাশি তৃণমূলের ‘গোঁজ’প্রার্থীদের যেন ভোট না দেওয়া হয়, ভোটারদের সতর্ক করা হয়।

Advertisement

বড় বহেরার একটি বুথে বাইক বাহিনী গিয়ে বিরোধী দলের সমর্থকদের ভোট দিতে বাধা দেয় বলে অভিযোগ। প্রাক্তন সিপিএম পঞ্চায়েত প্রধান তথা প্রার্থী বিপ্লব বসুকে মারধর করা হয়। সেই খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গেলে দু’জন‌ সাংবাদিককে রাস্তায় ফেলে পেটানো হয়।

দিনভর দাপিয়ে বেড়ালেও বিকেলে আদর্শনগরে গিয়ে প্রতিরোধের মুখে পড়তে হয় বাইক বাহিনীকে। তৃণমূল শিবিরের খবর, বাইক বাহিনীর ছেলেরা এলাকার বিধায়ক প্রবীর ঘোষালের গোষ্ঠীর। প্রবীরবাবুর সঙ্গে পঞ্চায়েত সমিতির বিদায়ী সহ সভাপতি আচ্ছালাল যাদব এবং তাঁর ভাই, উত্তরপাড়ার পুরপ্রধান দিলীপ যাদবের গোষ্ঠীলড়াই রয়েছে। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, আদর্শনগরে আচ্ছালালবাবুদের বাড়ির সামনে বাইক বাহিনীর ছেলেরা শূন্যে গুলি ছোড়ে। ভয় না পেয়ে গ্রামবাসী এবং নির্দল প্রার্থীদের সমর্থকরা প্রতিরোধ করেন। হামলাকারীদের তাড়া করে মারধর করা হয়। বেগতিক বুঝে তারা বাইক ফেলে পালায়। ক্ষিপ্ত জনতা ফেলে যাওয়া গোটা কুড়ি বাইক ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে।

বিষয়টি নিয়ে বিধায়ক প্রবীরবাবু মন্তব্য করতে চাননি। দিলীপবাবু বলেন, ‘‘অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। দলকেই সব বলব।’’

রিষড়া পঞ্চায়েতের বিভিন্ন বুথে শাসক দলের বিরুদ্ধে ছাপ্পা ভোটের অভিযোগ তোলেন বিরোধীরা। অন্তত দু’টি ক্ষেত্রে শাসক দলের বাহিনীকে প্রতিরোধের মুখে পড়তে হয়। রাজ্যধরপুর পঞ্চায়েতের মাদপুরে বেশ কয়েক জন দলীয় কর্মীকে নিয়ে ‘ভোট পরিস্থিতি দেখতে’ গিয়েছিলেন শ্রীরামপুর পুরসভার শাসক দলের দাপুটে কাউন্সিলর সন্তোষ সিংহ ওরফে পাপ্পু। অভিযোগ সিপিএম সমর্থকরা তাঁদের রাস্তায় ফেলে মারধর করেন। কাউন্সিলরের মাথা ফাটে। ছ’টি সেলাই পড়ে। এক ছাত্রনেতাও আহত হন।

তৃণমূল বিধায়ক প্রবীরবাবু বলেন, ‘‘সিপিএম ছাপ্পা ভোট দেওয়ার চেষ্টা করছি‌ল। বাধা দিতে গিয়ে আমাদের লোকেরা মার খেয়েছেন।’’ জেলা সিপিএম সম্পাদক দেবব্রত ঘোষের বক্তব্য, ‘‘তৃণমূলের লোকেরাই বুথ দখল করতে গিয়ে গ্রামবাসীদের প্রতিরোধের মুখে পড়েন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন