তৎপর: উলুবেড়িয়া-২ ব্লকে গণনাকেন্দ্রের বাইরে আবির খেলা বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের। ছবি: সুব্রত জানা
পাঁচ বছর আগে প্রধান বিরোধীর হাতে ছিল ৩৭টি পঞ্চায়েত। এ বার তা দাঁড়িয়েছে সাতে। প্রধান বিরোধীর রাজনৈতিক পরিচয় অবশ্য বদলেছে। বামেদেরে তিনে ঠেলে বিজেপি উঠে এসেছে দুইয়ে। তবে শাসকের আশপাশে দাঁড়াতে পারেনি তারা। চার মাসে আগে উলুবেড়িয়া লোকসভা উপনির্বাচনের সঙ্গেও বড় মিল পঞ্চায়েত নির্বাচনের ফলাফলে।
এ বার নির্দল প্রার্থীরাও জিতেছেন বহু আসনে। কিন্তু শাসকের দাপটে তাদের আর কিছুই করার নেই। এমনকী কোনও পঞ্চায়েত গঠনে নির্ণায়কের ভূমিকাও তাঁরা নিতে পারবেন না।
জেলার ১৫৭টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে তৃণমূল পেয়েছে ১৪৪টির দখল। বিজেপি পেয়েছে ৭টি। টাই হয়েছে ৬টি পঞ্চায়েতে। সেখানেও যুযুধান তৃণমূল ও বিজেপি।
বামেরা এ বার তৃতীয় স্থানে। কংগ্রেস কার্যত নিশ্চিহ্ন। জেলায় কংগ্রেসের একজন বিধায়ক থাকলেও পঞ্চায়েতের ভোট বাক্সে তার প্রতিফলন দেখা যায়নি।
জেলায় গ্রাম পঞ্চায়েতের মোট আসন ২৪৩১টি। তার মধ্যে প্রায় ৫০০ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তৃণমূল জিত গিয়েছে। তারই জেরে তৃণমূলের দখল চলে গিয়েছে ৫০টি পঞ্চায়েত। গত সোমবার ভোট হয়েছে বাকি আসনগুলিতে। বৃহস্পতিবার জানা গেল তার মধ্যে তৃণমূল জিতেছে ১৩৯৬টি আসনে। বিজেপি জিতেছে ২৯১টি আসনে। বামেরা পেয়েছে ৫৮টি আসন। কংগ্রেস জিতেছে ১১টি আসনে। নির্দল জিতেছে ৪৮টি আসনে।
ব্লক ভিত্তিক ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, বিজেপি সব থেকে ভাল করেছে উলুবেড়িয়া-২ ব্লকে। এখানে তারা তৃণমূলের সঙ্গে প্রায় সমানে টক্কর দিয়েছে। শুধু তাই নয়, সরাসরি তৃণমূলকে হারিয়ে এই ব্লকের ৮টি পঞ্চায়েতের মধ্যে ৪টি ছিনিয়ে নিয়েছে। একটি পঞ্চায়েত বিজেপির সঙ্গে টাই হয়ে গিয়েছে। জেলার আর কোনও ব্লকে এতগুলি পঞ্চায়েত বিজেপি পায়নি। আসন পাওয়ার নিরিখেও তারা জেলার আর কোনও ব্লকে এই সাফল্য দেখাতে পারেনি।
তবে ২০১৩ সালে প্রধান বিরোধী হিসাবে বামেরা ৩৭টি পঞ্চায়েতের দখল করেছিল। তার ধারেকাছে পৌঁছতে পারেনি বিজেপি। এ বার অবশ্য তৃতীয় স্থানে থাকা বামেরা একটি পঞ্চায়েতও তারা পায়নি। ২০১৩ সালে উদয়নারায়ণপুরের পাঁচারুল পঞ্চায়েতটি পেয়েছিল কংগ্রেস। পরে অবশ্য তা তৃণমূলের হাতেই চলে যায়। কিন্তু এ বার কংগ্রেসের অবস্থা আরও খারাপ। গোটা জেলায় তারা মাত্র ১০টি আসন পেয়েছে।
অনেক আসনেই জিতেছেন নির্দল প্রার্থীরা। তাঁদের মধ্যে বেশিরভাগই তৃণমূলের টিকিট না পাওয়া পাওয়া বিক্ষুব্ধ। কিছু নির্দল আছেন বিক্ষুব্ধ বিজেপিরও। তবে মাত্র ৬টি পঞ্চায়েতের নিরঙ্কুশ সংখ্যা গরিষ্ঠতা নেই। ফলে নির্দলরা তেমন ভাবে নির্ণায়ক হয়ে উঠতে পারলেন না।
পঞ্চায়েত সমিতি এবং জেলা পরিষদেও তৃণমূলের প্রাধান্য। বাগনান-২, উদয়নারায়ণপুর এবং আমতা ১ ব্লক আগেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে নেয় তৃণমূল। অন্য ব্লকগুলিতে নির্বাচন হলেও সেগুলি তৃণমূলের দখলেই এসেছে। এখানেও অবশ্য ব্যতিক্রম উলুবেড়িয়া ২ পঞ্চায়েত সমিতি। বিজেপি ভালো ফল করেছে এখানে। জেলা পরিষদের বেশিরভাগ আসনও দখলে এসেছে তৃণমূলের।
তৃণমূলের হাওড়া সদর সভাপতি অরূপ রায় এবং গ্রামীণ জেলা সভাপতি পুলক রায় এই জয়কে উন্নয়নের জয় বলে জানিয়েছেন। বিজেপির গ্রামীণ জেলা সভাপতি অনুপম মল্লিক এবং সিপিএমের জেলা সম্পাদক বিপ্লব মজুমদার বলেন, ‘‘এই নির্বাচনে মানুষের প্রকৃত মত প্রতিফলিত হয়নি। সন্ত্রাসের আবহ তৈরি করে ভোট লুট করা হয়েছে।’’ কংগ্রেসের জেলা সভাপতি পলাশ ভাণ্ডারীও দলের খারাপ ফলের জন্য সন্ত্রাসকেই দায়ী করেন।