ছন্দে: নজরদারিতে ভোট আরান্ডি গ্রামে। নিজস্ব চিত্র
নিজের তর্জনী এবং মধ্যমায় ভোটের কালি দেখিয়ে বৃদ্ধ বললেন, “আমাদের গ্রামটা লজ্জায় পড়ে গেল। ভোটের জন্য মারামারি আমাদের গ্রামে আগে কখনও হয়নি। এ বার তো গুলি-বোমা চলল। সোমবারে ভোট বাতিল হয়ে ফের ভোট করতে হল।”
নিজের ৮০ বছর বয়স জানিয়ে আরামবাগের হিয়াৎপুর গ্রামের শেখ মহম্মদ রফিক নামে ওই বৃদ্ধের অভিযোগ, “পুলিশ যদি ভোটের দিনটাতে এ রকম সক্রিয় থাকত, তাহলে এসব হত না। আজ যে পুলিশের মেলা বসে গিয়েছে!”
এ বার কেন বোমা গুলি চলল?
ভোটকেন্দ্রের পাশেই দোকানের দাওয়ায় বসে বৃদ্ধ বললেন, “আমাদের গ্রামের রেওয়াজ যখন যে দল শাসক তখন সেই দলকেই ভোট দেওয়া।’’ জানালেন, তিনি এবং তাঁর বয়সী সবাই দু’বার জোড়া বলদে ভোট দিয়েছেন। তিনবার গাই বাছুরে। তারপর থেকে টানা কাস্তে-হাতুড়ি-তারায় পড়েছে ছাপ। তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর তৃণমূলকেই ভোট দিতেন তাঁরা। বললেন, ‘‘কোনও বার অসুবিধা হয়নি। কিন্তু এ বার তৃণমূল যুবদের জন্য আলাদা দল হওয়াতেই যত গোলমাল। মানুষ বিভক্ত হয়ে গেল, আর অশান্তি।”
গ্রামের মাঝপাড়ার এই বৃদ্ধের কথায় সায় দিয়ে বছর চল্লিশের শেখপাড়ার শেখ সওকত বলেন, “দলের বিভাজনটা বড় কারণ তো বটেই। তবে বিভাজনের মূলে গ্রাম উন্নয়ন। গ্রামে একটা মোরাম রাস্তা সেই যে বাম আমলে হয়েছে, তারপর থেকে রাস্তাটার পিচ তো দূর অস্ত, সংস্কারই হয়নি। এসব রাগ আছে গ্রামের ছেলে-ছোকরাদের।”
হিয়াৎপুর সেতু থেকে স্কুল ও ভোট কেন্দ্রের গা দিয়ে দিগরুইঘাট পর্যন্ত প্রায় ২ কিলোমিটার ওই রাস্তাটি সংস্কারের দাবি দীর্ঘ দিনের। ভোট দিয়ে বের হচ্ছিলন আর এক বৃদ্ধ গ্রামের দাসপাড়ার যুগল দাস। শেখ মহম্মদ রফিককে দেখতে পেয়ে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, “রফিক ভাই তোমার ভোট দেওয়া হয়েছে? আজ তো খুব ভালভাবে ভোট দেওয়া গেল। পুলিশ চাইলে কি না পারে!”
রফিক বললেন, “আগের ভোটের সেই পরিবেশও আর নেই। কংগ্রেস এবং পরে বাম আমলে রাস্তায় চাটাই পেতে বসে থাকত দলের ছেলেরা। ভোট দিয়ে ফিরে যাবার পথে মুড়ি-ছোলা দিত। এখন কিছুই দিচ্ছে না!”
এক মধ্যবয়স্ক আবার ফুট কাটলেন, “কেন চাচা, এখন তো আমরা বোমা-গুলি দিচ্ছি।” বৃদ্ধ বললেন, “উনি শেখ হালিম। গ্রামে তৃণমূলের আদি নেতাদের একজন। দলের কাণ্ড-কারখানায় বিরক্ত।”
আজ ভোট গণনা বয়কট করছে ফরওয়ার্ড ব্লক। ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচনে ফরওয়ার্ড ব্লকের প্রার্থী বলতে গোঘাট-১ ব্লকের ১টি জেলা পরিষদ আসনে, ওই পঞ্চায়েত সমিতির ২টি আসনে এবং শ্যাওড়া পঞ্চায়েতে ৫টি আসনে। ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা তথা গোঘাটের প্রাক্তন বিধায়ক এবং এ বারের পঞ্চায়েত সমিতির প্রার্থী বিশ্বনাথ কারকের অভিযোগ, “তৃণমূলের ছাপ্পা ভোটের প্রতিবাদে ভোট গুনতে যাব না। আমাদের সমর্থকরা তো বটেই, আমরা প্রার্থীরাও ভোট দিতে পারিনি।”