ভাষাকে ভালবেসে নাচে-গানে স্মরণ দুই জেলায়

উলুবেড়িয়া মহকুমা তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের উদ্যোগে ও স্থানীয় আনন্দ ভবনের আয়োজনে বুধবার পালিত হল ভাষা দিবস। আনন্দ ভবনের পড়ুয়ারা কেউ চোখে দেখে না ঠিক মতো, কেউ বা কথা বলতে পারে না, শব্দের সঙ্গে যোগ নেই অনেকেরই।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

উলুবেড়িয়া ও আরামবাগ শেষ আপডেট: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০২:৪৪
Share:

ভাল-‘ভাষা’: উলুবেড়িয়ার আনন্দ আশ্রমে মূক-বধির পড়ুয়াদের শ্রদ্ধাজ্ঞাপন।

ভাষা ওদের কাছে অন্য মাত্রা আনে। কারও কাছে ভাষা বলে আসলে কিছুই নেই। আবার কারও কাছে ভাষাটুকুই এক পৃথিবী। বিমূর্ত ভাষা বড় বেশি মূর্ত হয়ে ওঠে চোখে-মুখে হাতে-আঙুলে।

Advertisement

ওরা মূক-বধির। কেউ আবার দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। তাই মাতৃভাষার ভাবনাটা অন্য সকলের থেকে আলাদা। তবু ছোট থেকেই ওদের মধ্যে মূর্ত করে তোলা হচ্ছে ভাষার ধারণা। তনুশ্রী, চৈতালি, পায়েলরা পালন করল আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস— ঠিক নিজেদের মতো করে। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী বন্ধুরা যখন গান ধরল ‘‘ও আমার দেশের মাটি’’, পায়েলরা তখন সে ভাষার সবটুকু আকুতি ছড়িয়ে নিল নিজেদের শরীরে— সুরে, নাচে।

উলুবেড়িয়া মহকুমা তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের উদ্যোগে ও স্থানীয় আনন্দ ভবনের আয়োজনে বুধবার পালিত হল ভাষা দিবস। আনন্দ ভবনের পড়ুয়ারা কেউ চোখে দেখে না ঠিক মতো, কেউ বা কথা বলতে পারে না, শব্দের সঙ্গে যোগ নেই অনেকেরই। তেমনই ৫০ জন মূক-বধির ও ৩০ জন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী পড়ুয়া স্কুলেই পালন করল দিনটি। সকাল থেকেই পড়ুয়াদের হাতে তৈরি হয়েছে শহিদ বেদি। দুপুরে স্কুলের প্রেক্ষাগৃহে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

Advertisement

সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী তনুশ্রী কারক, চৈতালি মণ্ডল, পায়েল মণ্ডলরা মূক-বধির, তাই গত কয়েকদিন ধরে তাদের দেওয়া হয়েছে নাচের তালিম। এ দিন মঞ্চে তারাই তাদের মতো করে শ্রদ্ধা জানাল ভাষা শহিদদের প্রতি— বাংলা ভাষার প্রতি। আবার সৌমেন মণ্ডল, সুস্মিতা সামন্তরা ভাষার সঙ্গে পরিচিত। বরং তাদের কাছে বাইরের পৃথিবীটা জেগে আছে ওই শব্দ-গন্ধের উপরেই। তাই ওরা শোনাল গান, কবিতা— মাতৃভাষায়। গত প্রায় এক মাস ধরে অনুষ্ঠানটির পরিকল্পনা করেছেন মহকুমা তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের আধিকারিক প্রদীপ্ত আচার্য ও স্কুলের টিচার ইনচার্জ আল্পনা জানা।

চুঁচুড়ায় ভাষা দিবস পালন।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মহকুমাশাসক আংশুল গুপ্ত। ছোট ছোট ছেলেমেয়েগুলির উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘‘সকলের কাছেই তাঁর ভাষা তাঁর পরিচয়। নিজের মাতৃভাষাকে আমরা যেমন সম্মান করব, তেমনই আমাদের উচিত সকলের মাতৃভাষাকে সমান সম্মান জানানো।’’

এ দিন আরামবাগে ‘ভাষা পদযাত্রা’র আয়োজন করে “সবুজায়ন” নামে স্থানীয় এক সংস্থা। সামিল হন বাংলাদেশের দুই প্রতিনিধিও। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের প্রাক্তন ডিন ৭৯ বছরের ওসমান গনি এবং বাংলাদেশ কবিতা সংসদের সভাপতি মানিক মজুমদার এসেছিলেন আরামবাগে। সকাল ৮টায় গৌরহাটি মোড়ে থেকে পুরাতন বাজার হয়ে রবীন্দ্রভবন পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার পদযাত্রা হয়। রবীন্দ্রভবনে শহিদ বেদিতে স্মরণ অনুষ্ঠানের পর শুরু হয় আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। আরামবাগ মহকুমা গ্রন্থাগার আয়োজিত অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন কবি অরুণ চক্রবর্তী।

ছবি: সুব্রত জানা ও তাপস ঘোষ

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন