মাধ্যমিকের শেষ দিনের স্মৃতি এখনও ভুলতে পারেননি জানবাজ কিংবা সাহিরা ও নাসরিনের পরিবার।
সে দিন মোটরবাইক দুর্ঘটনায় মারা যায় জানবাজ। অন্য দুই মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী গুরুতর জখম হয়। তারা এখনও চিকিৎসাধীন। তার পরেও যে অন্য অভিভাবকদের হুঁশ ফেরেনি তার প্রমাণ মিলল বুধবার। এলাকাটি সেই পান্ডুয়া এবং জিটি রোড।
এ দিন উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রথম দিন। সকালে পান্ডুয়ার জি়টি রোডে দেখা গেল, শয়ে শয়ে মোটরবাইক ছুটে চলেছে পরীক্ষাকেন্দ্রের দিকে। অধিকাংশ বাইক আরোহী ও চালকের মাথায় হেলমেট তো নেই, তার উপরে এক একটি বাইকে তিনজন করে সওয়ারি রয়েছেন। আবার এমনও দৃশ্য দেখা গেল, হেলমেট ছাড়াই পরীক্ষার্থী বাইক চালিয়ে চালিয়ে পরীক্ষাকেন্দ্রের দিকে যাচ্ছে। নাবালকদেরও বাইক চালাতে দেখা গিয়েছে এদিন। কিন্তু সেটা বেআইনি। এ সবের দিকে অভিভাবকদের যেমন হুঁশ নেই তেমনি কোনও ব্যবস্থা নিতে দেখা গেল না পুলিশ-প্রশাসনকেও।
বেপরোয়া: সচেতনতার হাজারো প্রচারের পরেও বুধবার চোখে পড়ল এমনই ছবি। নিজস্ব চিত্র
অথচ চলতি মাসেই হুগলি জেলা পুলিশের উদ্যোগে চুঁচুড়ায় সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ নিয়ে একটি র্যালি বের হয়েছিল। তাতে স্লোগান ছিল— হেলমেট পরে গাড়ি চালান। শুধু চুঁচুড়া নয়। জেলা জুড়েই প্রায়ই এমন প্রচার চলে। কখনও কোনও ক্লাব বা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার তরফে সেই প্রচার অভিযান চলে। আবার কখনও পুলিশ-প্রশাসনের তরফেও সেই প্রচার করা হয়। সেই সব মিছিলে পা মেলাতে দেখা যায় সাধারণ মানুষকেও। এখানেই শেষ নয়। বিনা হেলমেটে পেট্রোল পাম্প থেকে তেল দেওয়াও নিষেধ ছিল। বাসিন্দাদের অভিযোগ, দুর্ঘটনা ঘটলে দু’একদিন কড়াকড়ি হয়। বিষয়টি থিতিয়ে গেলে ফের পুরনো অবস্থা ফিরে আসে।
প্রশ্ন উঠছে সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ কর্মসূচি করে কী লাভ? পাশাপাশি এও প্রশ্ন উঠছে, অভিভাবক, সাধারণ মানুষ কি সচেতন হবেন না? তার উত্তরও মিলেছে। এ দিন হেলমেট ছাড়াই বাইক চালিয়ে যাচ্ছিলেন মহানাদের বাসিন্দা প্রভাত মণ্ডল নামে এক ব্যক্তি। মাথায় কেন হেলমেট নেই? তাঁর সাফাই, ‘‘মেয়ে ও ভাইঝিকে নিয়ে পাণ্ডুয়ার পরীক্ষাকেন্দ্রে গিয়েছিলাম। কিন্তু হেলমেট আনতে ভুলে গিয়েছি। আরও অনেক অভিভাবকই তো হেলমেট ছাড়া তাঁদের ছেলেমেয়েদের নিয়ে যাচ্ছেন।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘লোকালে হেলমেট লাগে না। দূরে গেলে হেলমেট নিয়ে যাই।’’
কী বলছেন প্রশাসনিক কর্তারা? ডিএসপি (ডি অ্যান্ড টি) উৎপল সাহা বলেন, ‘‘ট্রাফিক দিয়ে সচেতনতা করা হচ্ছে। হেলমেট ছাড়া কেউ যেন গাড়ি চালাতে না পারে সেই প্রচারও চলছে।’’ কিন্তু নাবালকদের তো লাইসেন্স পাওয়ার কথা নয়! তাদেরও এদিন বাইক চালিয়ে যেতে দেখা গিয়েছে। এই প্রসঙ্গে উৎপলবাবু বলেন, ‘‘আঠারো বছরের নীচে কাউকে গাড়ি চালানোর লাইসেন্স দেওয়া হয় না। যদি কেউ এটা করে থাকে তা বেআইনি। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’’