ডেঙ্গির উপদ্রব তো ছিলই। এ বার পোকায় কাটা জ্বরেরও খোঁজ মিলছে হাওড়ার বালি-বেলুড়ে।
নতুন এই জ্বরের জন্য দায়ী ‘স্ক্রাব টাইফাস’ ব্যাকটিরিয়া। তাতে আক্রান্ত হয়ে ইতিমধ্যেই এক মহিলার মৃত্যু হয়েছে কলকাতায়। এডিস মশার কামড়ে যেমন ডেঙ্গি হয়, তেমনই এই ব্যাকটিরিয়া দেহে ঢোকে ছোট্ট একটা লাল পোকার কামড়ে। ‘ট্রম্বিকিউলি়ড মাইটস’ নামে ওই পোকা কামড়ালে কিছু বোঝা যায় না, পরে প্রবল জ্বর আসে। ঠিক সময়ে চিকিৎসা না হলে সব অঙ্গ বিকল হয়ে যেতে থাকে।
সম্প্রতি এই জ্বর নিয়েই ডাক্তারের কাছে এসেছিল দু’টি শিশু। তাদের এক জনের বাড়ি বেলুড়ে, অন্য জন লাগোয়া বালির। ঘটনাচক্রে, দু’টি শিশুকেই দেখেন হুগলির উত্তরপাড়ার শিশু চিকিৎসক অম্লান মুখোপাধ্যায়। তিনি জানান, কলকাতার ইনস্টিটিউট অব চাইল্ড হেলথে বিভিন্ন সেমিনারে তাঁরা স্ক্রাব টাইফাস ব্যাকটিরিয়ার আক্রমণে জ্বরের রোগী পেয়েছিলেন। তাঁর কথায়, ‘‘তখনই আশঙ্কা ছিল। এ বার এই দু’টি শিশু জ্বর নিয়ে আসায় আমাদের আশঙ্কা সত্যি হল।’’
দুই শিশুর এক জন বেলুড়ের ছ’বছরের রাজদীপ চৌধুরী। প্রবল জ্বর ও শরীরে ব্যথা থাকায় তার ডেঙ্গি সমেত সব ধরনের রক্ত পরীক্ষাই করা হয়েছিল। কিন্তু কিছু মেলেনি। তার মা দেবী চৌধুরী বলেন, ‘‘ছেলের পিঠে একটা দাগ হয়েছিল। সেটি দেখেই ডাক্তারবাবু সন্দেহ করেন। এর পরেই ওকে উত্তরপাড়ার একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করি। পরীক্ষায় পোকায় কাটা জ্বর ধরা পড়ে।’’
বালির আড়াই বছরের ইশান সেন শর্মাও জ্বর নিয়ে ডাক্তারের কাছে গিয়েছিল। তার বাবা অভি়জিৎ সেন শর্মা বলেন, ‘‘ও খুবই দুরন্ত বাচ্চা। কিন্তু ব্যথায় হাত-পা পর্যন্ত নাড়তে পারছিল না। ছেলের গলায় দাগ দেখেই ডাক্তারবাবু রোগটা ধরেন।’’ দু’টি শিশুই আপাতত সুস্থ।
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, মূলত জলা-জঙ্গল অথবা মেঠো ইঁদুরবাহিত হয়ে শিশুর শরীরে ওই পোকা ঢুকতে পারে। এই দু’টি শিশু কোথা থেকে ব্যাকটিরিয়া পেল, তা অবশ্য পরিষ্কার নয়। অম্লান বলেন, ‘‘ওই দু’জন ঠিক কোন পরিবেশের কারণে পোকার আক্রমণের শিকার হল, সেটা আগে দেখা দরকার।’’
বালি-বেলুড়ে যখন পোকায় কাটা জ্বর দেখা দিয়েছে, লাগোয়া উত্তরপাড়াতেও যে এর প্রাদুর্ভাব হতে পারে, সেই আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। এমনিতেই ডেঙ্গিতে কাবু উত্তরপাড়ার বিভিন্ন ওয়ার্ড। জ্বরে আক্রান্ত হয়ে পুরসভার হাসপাতালে মীরা সোনকার নামে এক মহিলার মৃত্যু হয়েছে। ২৪টি ওর্য়াডেই জ্বরজারি চলছে। এর মধ্যে ‘স্ক্রাব টাইফাস’ও ঢুকে পড়েছে কি না, নিশ্চিত করে বলা কঠিন। কেননা কলকাতার সরকারি হাসপাতালের ডাক্তারেরাই বলছেন, নির্দিষ্ট অ্যান্টিবায়োটিক পড়লেই এই জ্বর সেরে যায়। কিন্তু চিকিৎসকদের একটা বড় অংশ এখনও এই রোগ সম্পর্কে সচেতন নন।
উত্তরপাড়ার পুরপ্রধান দিলীপ যাদব বলেন, ‘‘দু’টি শিশুই পাশের জেলা থেকে এসেছিল। এখানে যাতে ওই পোকার উপদ্রব না হয়,তার জন্য আমরা শহর সাফসুতরো রাখার চেষ্টা করছি। সাধারণ মানুষকেও সর্তক থাকতে বলছি।’’