উলুবেড়িয়া

বহিরাগতদের রুখতে পাড়ায় নজরদারিতে জোর বিজেপির

নির্বিঘ্নেই শেষবেলার প্রচার মিটল উলুবেড়িয়ায়। কিন্তু শনিবার ভোটের দিন বহিরাগতদের এনে শাসকদল সন্ত্রাস করতে পারে, এই আশঙ্কা রয়েই গেল বিরোধীদের। যে আশঙ্কা ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টে পর্যন্ত শেষবেলার প্রচারে সব দলই বাড়ি বাড়ি ভোটার-স্লিপ বিলি করে জনসংযোগে জোর দেয়। চলে অটো-রিকশায় মাইক-প্রচারও।

Advertisement

নুরুল আবসার

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০১৫ ০২:১১
Share:

চেঙ্গাইলে শেষ প্রচারে বিজেপি। বৃহস্পতিবার সুব্রত জানার ছবি।

নির্বিঘ্নেই শেষবেলার প্রচার মিটল উলুবেড়িয়ায়। কিন্তু শনিবার ভোটের দিন বহিরাগতদের এনে শাসকদল সন্ত্রাস করতে পারে, এই আশঙ্কা রয়েই গেল বিরোধীদের। যে আশঙ্কা ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছেন তৃণমূল নেতৃত্ব।

Advertisement

বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টে পর্যন্ত শেষবেলার প্রচারে সব দলই বাড়ি বাড়ি ভোটার-স্লিপ বিলি করে জনসংযোগে জোর দেয়। চলে অটো-রিকশায় মাইক-প্রচারও। বিরোধীরা তার মধ্যেই তৃণমূল সন্ত্রাস চালাতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে। এ জন্য ভোটের আগের দু’দিন দলীয় কর্মীদের পাড়া ছেড়ে বেরোতে নিষেধ করেছেন বিজেপি নেতৃত্ব। তাঁরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, এই দু’দিন তৃণমূলের ‘বহিরাগত’রা ঢুকছে কিনা, তা নিয়ে নজরদারি চালাবেন দলীয় কর্মীরা। এক-এক জন কর্মীর উপরে চারটি করে বাড়িতে নজরদারি চালানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে জানান জেলা (গ্রামীণ) বিজেপির সভাপতি গৌতম রায়। ইতিমধ্যেই বিজেপির পক্ষ থেকে উলুবেড়িয়ার মহকুমাশাসকের কাছে অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের দাবিতে স্মারকলিপিও দেওয়া হয়েছে।

গৌতমবাবু বলেন, ‘‘দলীয় কর্মীদের বলা হয়েছে কোনও বহিরাগত দেখা গেলে পর্য়বেক্ষককে। পর্যবেক্ষক সেইমতো ব্যবস্থা নেবেন।’’

Advertisement

উলুবেড়িয়ায় মোট ওয়ার্ড ৩২টি। মোট বুথ হয়েছে ১৯৩টি। এর মধ্যে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৭৫টি বুথকে ‘স্পর্শকাতর’ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন এলাকায় রুট-মার্চ শুরু করেছে পুলিশ। চলছে গাড়ি থামিয়ে তল্লাশিও। ভোটে অশান্তি এড়াতে সব রকম ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে আশ্বস্ত করেছেন জেলা পুলিশের কর্তারা। কিন্তু বিরোধীদের আশঙ্কা যাচ্ছে না।

বহিরাগতদের দিয়ে তৃণমূল সন্ত্রাস করতে পারে বলে অভিযোগ রয়েছে বামেদেরও। কংগ্রেস মনে করছে, কিছু বুথ বেছে নিয়ে সন্ত্রাস চালাতে পারে শাসক দল। কংগ্রেসের দাবি, ১৯ নম্বর ওয়ার্ড, চেঙ্গাইল বা বাউড়িয়ার কিছু এলাকায় দলীয় প্রার্থীরা যথেষ্ট বেগ দেবেন শাসকদলের প্রার্থীদের। এ জন্য ওই সব ওয়ার্ডে শাসকদল সন্ত্রাস চালাতে পারে। বিভিন্ন থানা থেকে নিয়ে আসা সিভিক ভলান্টিয়ারদেরও তৃণমূল নির্বাচনের সময়ে নিজেদের কাজে লাগাতে পারে বলেও তাদের আশঙ্কা। বৃহস্পতিবার প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি মানস ভুঁইয়ার উপস্থিতিতে ১ থেকে ৭ নম্বর ওয়ার্ড পর্যন্ত পদযাত্রার আয়োজন করা হয়। সেখানেও ওঠে তৃণমূলের ‘সন্ত্রাসে’র প্রসঙ্গ।

১৯ নম্বর ওয়ার্ডের কংগ্রেস প্রার্থী পম্পা ধাড়ার স্বামী উত্তরবাবুর অভিযোগ, ‘‘ক’দিন ধরে তৃণমূল সভায় বলছে, এখানে টোয়েন্টি-টোয়েন্টি ম্যাচ হবে। এ তো পুরোপুরি সন্ত্রাসের ইঙ্গিত।’’ সে কথা উড়িয়ে দিয়ে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, ওই ওয়ার্ডে লড়াই কঠিন হবে বলেই প্রচারে ‘টোয়েন্টি-টোয়েন্টি ম্যাচ’-এর কথা তোলা হয়।

বিরোধীদের আশঙ্কা পুরোপুরি উড়িয়ে দিয়েছেন তৃণমূলের জেলা (গ্রামীণ) সভাপতি পুলক রায়। এ দিন কন্যাশ্রী প্রকল্প-সহ রাজ্য সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্প নিয়ে তাঁরা প্রচার করেন। পুলকবাবুর দাবি, ‘‘বিরোধীদের অভিযোগগুলি ভিত্তিহীন। উন্নয়নকে হাতিয়ার করেই আমরা নির্বাচনে লড়ছি। নির্বাচন অবাধ এবং শান্তিপূর্ণ ভাবেই হবে। তৃণমূল সন্ত্রাসে বিশ্বাস করে না।’’

প্রশাসনের হিসেবে, ভোটের দিন ঘোষণার পর থেকে এ পর্যন্ত উলুবেড়িয়ায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের তরফে পতাকা বা ফ্লেক্স ছেঁড়া, মারধর, হামলার ১৭টি অভিযোগ জমা পড়েছে। তার মধ্যে বেশির ভাগই বিরোধীদের তরফে শাসকদলের বিরুদ্ধে। প্রশাসনের দাবি, প্রতিটি ক্ষেত্রেই তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

ভোটের দিন বহিরাগতরা যাতে কোনও অশান্তি করতে না পারে, তার জন্যও বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জেলা পুলিশের দাবি। জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান, এ পর্যন্ত গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে, এমন ১২০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে ৩৮০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। দু’টি অবৈধ অস্ত্র বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। সাড়ে সাত হাজার লিটার বেআইনি মদ আটক করা হয়েছে। ভোটের জন্য সিভিক ভলান্টিয়ারদের আনা হচ্ছে জানিয়ে ওই পুলিশ কর্তার দাবি, ‘‘আইন মেনেই সিভিক ভলান্টিয়ারদের মোতায়েন করা হবে।’’

তবু, আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে বিরোধীদের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন