চল্লিশ বছর আগে পাট্টা পাওয়া জমি ব্লক ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দফতর ফের কেড়ে নিতে চাইছে এমন অভিযোগ তুলে মহকুমা শাসকের দ্বারস্থ হয়েছেন ৮টি আদিবাসী পরিবার। তাঁদের অভিযোগ, জমি ব্যবহার না করার অজুহাত দেখিয়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে তাঁদের জমি নিয়ে অন্যকে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। ঘটনাটি গোঘাট ২ ব্লকের দশঘরা মৌজার।
গত ১ এপ্রিল ওই আটটি আদিবাসী পরিবারের লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন আরামবাগের মহকুমা শাসক প্রতুলকুমার বসু। যদিও তিনি বলেন, ‘‘ওই আদিবাসী পরিবারগুলি ৪০ বছর ধরে পাট্টা পাওয়া জমি ব্যবহার করেননি। এতে ধরে নেওয়া যেতে পারে তাঁদের ওই জমির প্রয়োজন নেই! কেন তাঁরা জমি ব্যবহার করেননি তা খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।’’ অভিযোগ প্রসঙ্গে হুগলির অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি ও ভূমি রাজস্ব) আয়েশা রানি বলেন, ‘‘অব্যবহৃত জমির পাট্টা বাতিল করে সেই জমি পুনর্বন্টন করার আইন রয়েছে।
গোঘাট ২ ব্লক ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দফতর এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দশঘরা গ্রামের ওই আটটি আদিবাসী পরিবারকে গোঘাট ২ নম্বর ব্লকের কামারপুকুর সংলগ্ন দশঘরা মৌজায় জে এল নং-৮০, ১ নম্বর খতিয়ানভুক্ত ২৮০ দাগের প্রায় ১ একর ৮ শতক ডাঙা ভূমির মধ্যে ২৪ শতক বা ১২ কাঠা জায়গা পাট্টা দেওয়া হয় ১৯৭৫ সালে। পাট্টা প্রাপকরা নিজের অংশ ব্লক ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দফতর থেকে রেকর্ড করে নেন ২০০২ সালে। পাট্টা প্রাপক ছিলেন রামধন সরেন, সুন্দরী হাঁসদা, দুর্গাপদ হাঁসদা, লক্ষ্মীরাম হাঁসদা, মঙ্গলা মান্ডি, কোটাল সরেন, সুকুল মুর্মু এবং রামু হাঁসদা। পাট্টা প্রাপকদের মধ্যে বর্তমানে রামধন সরেন এবং সুন্দরী হাঁসদা ছাড়া কেউ জীবিত নেই। ওই ৮টি পরিবার বতর্মানে গ্রামেই বাকি ২২টি আদিবাসী পরিবারের সঙ্গেই একটি পুকুরপাড় দখল করে বাস করছেন। কেন পাট্টা পাওয়া জমিতে ঘর করেননি জানতে চাইলে রামধন সরেন বলেন, ‘‘ওই জমিতে ছিটেবেড়ার ঘর তৈরি করেছিলাম। কিন্তু তা ভেঙে গিয়েছে। একই কথা জানালেন মৃত সুকুল মূর্মূর জামাই সত্যপদ মান্ডি, দুর্গাপদ হাঁসদার ছেলে বৈদ্যনাথ হাঁসদা, মঙ্গলা মান্ডির নাতি সুকুমার মান্ডি প্রমুখ উত্তরাধিকারীরা। প্রসঙ্গত কামারপুকুর রেল স্টেশন থেকে মাত্র তিন-চারশো মিটার দূরত্ব ওই জমির দাম বতর্মানে কাঠা প্রতি ২০ লক্ষ টাকা।
গত ৩১ মার্চ ব্লক ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দফতরের আধিকারিক কৌশিক মুখোপাধ্যায় আমিন নিয়ে গিয়ে ওই জমি মাপজোক করান। সেই সময় জমি কেড়ে নেওয়ার আশঙ্কা করে মাপজোকের কাজে পাট্টা প্রাপকেরা বাধা দেন বলে অভিযোগ। কৌশিকবাবু বলেন, ‘‘নিজ গৃহ নিজ ভূমি প্রকল্পের জন্য খাস জমির খোঁজ চলছে। সেই কাজে গিয়ে যাতে পাট্টা দেওয়া জায়গায় ভুল করে ঢুকে না যাই সে জন্য মারৃপজোকের কাজ দেখছিলাম। তখনই নজরে পড়ে পাট্টা দেওয়া পুরো জায়গাটাই অব্যবহৃত পড়ে রয়েছে।’’ তিনি জানান, ওই জমির পাটটা প্রাপকদের বলা হয়েছে, এতদিন তাঁরা সেখানে কোনও ঘর তৈরি করেননি। এ ভাবে জায়গা ফেলে রাখলে সরকার তা অন্য গৃহহীনদের দিয়ে দেবে।
মহকুমা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, আরামবাগ মহকুমায় উদ্বৃত্ত খাস জমি প্রায় শেষ। জমির অভাবে মুখ থুবড়ে পড়েছে ‘নিজ গৃহ, নিজ ভূমি’ প্রকল্প। প্রকল্পের অধীন ভূমিহীন বা গৃহহীনদের জমি দানের জন্য এ বার জমি কিনতে হবে ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দফতরকে। জমি কেনার আগে সেচ ও পূর্তের মতো কিছু সরকারি দফতরের পড়ে থাকা জমির খোঁজ চলছে। খোঁজ চলছে অতীতে পাট্টা পাওয়া জমি অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে কি না। এমন জমি পাওয়া গেলে কেন তা ব্যবহার হয়নি তার তদন্ত করে প্রয়োজনে পাট্টা বাতিল করে জমি পুনর্বন্টন করা হবে।