মৃত: কৌশল্যা চৌধুরী। নিজস্ব চিত্র
আর ছ’দিন পরে ভদ্রেশ্বরের তেলেনিপাড়া ফেরিঘাটের নতুন জেটি উদ্বোধন হওয়ার কথা। তার আগে, বৃহস্পতিবার ওই ঘাটের কাছে কাঙালি ঘাট থেকে ছাড়া নৌকা ডুবে গেল গঙ্গায়। মৃত্যু হল এক প্রৌঢ়ার। প্রৌঢ়ার স্বামী-সহ পাঁচ জনকে অবশ্য বাঁচিয়ে দিয়েছেন স্থানীয়েরা। দুর্ঘটনার পরে অনেকের আলোচনায় উঠে আসে এক বছর আগে তেলেনিপাড়ায় জেটি দুর্ঘটনার কথা।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত কৌশল্যা চৌধুরী (৫৩) উত্তর ২৪ পরগনার নোয়াপাড়ার গারুলিয়ার ঠাকুরবাড়ি রোডের বাসিন্দা ছিলেন। নৌকার বাকি আরোহীরাও গারুলিয়ারই। প্রৌঢ়ার স্বামী সত্যনারায়ণই নৌকাটি চালাচ্ছিলেন। বেশ কয়েক বছর ধরে দম্পতি নিজেদের ওই ছোট নৌকায় আনাজ নিয়ে সকালে ভদ্রেশ্বর বাজারে বিক্রি করতে আসতেন। নৌকা বাঁধা থাকত কাঙালি ঘাটে। এ দিনও তা-ই ছিল। দুপুরে ফেরার সময়ে গারুলিয়ার চার জনও ওই নৌকায় ফিরতে চান। স্ত্রীর অনুরোধে সত্যনারায়ণ তাঁদের তুলে নেন। ঘাট ছেড়ে কিছুটা এগোনোর পরেই ওই দুর্ঘটনা।
এক বছর আগে তেলেনিপাড়া ফেরিঘাটের অস্থায়ী বাঁশের জেটি ভেঙে ২২ জনের মৃত্যু হয়েছিল। তার পর থেকেই বিভিন্ন ফেরিঘাটের অব্যবস্থা নিয়ে টনক নড়ে রাজ্য সরকারের। তেলেনিপাড়ায় অস্থায়ী জেটির পরিবর্তে পাকা জেটি তৈরি-সহ আনুষঙ্গিক অন্যান্য কাজে হাত দেওয়া হয়। ওই দুর্ঘটনার পর থেকেই হুগলির এই ঘাটের এবং উত্তর ২৪ পরগনার শ্যামনগরের মধ্যে ফেরি পরিষেবা বন্ধ রয়েছে। আগামী ৭ জুন থেকে তেলেনিপাড়া ফেরিঘাট চালু হওয়ার কথা। এতদিন ওই ঘাট বন্ধ থাকায় আশপাশের নানা ঘাট দিয়ে পারাপার চলছিল।
পুরসভা জানিয়েছে, কাঙালি ঘাটটি যাত্রী পারাপারের জন্য ব্যবহৃত হয় না। সাধারণত মৎস্যজীবীরা এবং কিছু স্নানার্থী ঘাটটি ব্যবহার করেন। ভদ্রেশ্বরের উপ-পুরপ্রধান প্রকাশ গোস্বামী জানান, তেলেনিপাড়া ঘাটে দুর্ঘটনার পর থেকে পুরসভার এলাকার সব ক’টি পারাপারের ঘাটে বিশেষ নজরদারি চালায়। ওই দম্পতি নিজেদের সুবিধার জন্যই ওই ঘাট ব্যবহার করতেন। এ দিন সকলের নজর এড়িয়ে নৌকার বহন ক্ষমতার বাইরে অতিরিক্ত যাত্রী নিয়েই নিজেদের বিপদ ডেকে আনলেন।
ঠিক কী হয়েছিল?
সত্যনারায়ণবাবু বলেন, ‘‘কয়েক বছর ধরে ওই ঘাট ব্যবহার করছি। সাধারণ আমরা কাউকে নৌকায় তুলি না। এ দিন ঘাটের কাছেই চার জন ও পাড়ে যাবেন বলায় স্ত্রী তুলে নিতে অনুরোধ করে। কিছুটা এগোতেই জোয়ার এল। নৌকা দুলে উঠল। আর টাল সামলাতে পারলাম না। স্ত্রীকেও বাঁচাতে পারলাম না।’’
মহম্মদ শামিম নামে তেলিনিপাড়ার এক যুবক প্রতিদিন ওই ঘাটে স্নান করতে আসেন। তিনি এ দিন ঘাটে এসে নৌকাটি ডুবে যাচ্ছে দেখে কয়েকজনকে নিয়ে আর একটি নৌকায় ঘটনাস্থলে পৌঁছন। তাঁর কথায়, ‘‘তেলেনিপাড়া-কাণ্ড আমরা এখনও ভুলিনি। তাই সবাই এগিয়ে যাই। সবাইকে বাঁচাতে পারলাম। শুধু মহিলাকে বাঁচানো গেল না। চন্দননগর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত বলে জানান।’’
এ দিন নৌকার বাকি পাঁচ জনের ওই হাসপাতালে প্রাথমিকি চিকিৎসা হয়। দুপুরের পরে সকলে বাড়ি ফিরে গেলেও স্ত্রীর দেহ আগলে বসে ছিলেন সত্যনারায়ণবাবু। ততক্ষণে এসেছেন আত্মীয়েরা। অপেক্ষা ময়নাতদন্তের।