ফের আলো ব্যবসায়ী খুন চন্দননগরে

মায়ের সঙ্গে বাড়ি ফেরার পথে খুন হলেন এক আলো ব্যবসায়ী। বুধবার রাতে ঘটনাটি ঘটে চন্দননগরের মহাডাঙা কলোনিতে। নিহতের নাম নারায়ণ সরকার (৩৪)।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০১:১৬
Share:

নিহত (ইনসেটে) নারায়ণ সরকারের শোকার্ত পরিবার। — তাপস ঘোষ

মায়ের সঙ্গে বাড়ি ফেরার পথে খুন হলেন এক আলো ব্যবসায়ী। বুধবার রাতে ঘটনাটি ঘটে চন্দননগরের মহাডাঙা কলোনিতে। নিহতের নাম নারায়ণ সরকার (৩৪)।

Advertisement

তবে চন্দননগরে আলো ব্যবসায়ী খুনের ঘটনা এই প্রথম নয়। কয়েক বছর আগে চন্দননগরের বাগবাজার এলাকায় রাতে বাড়ি ফেরার পথে দুষ্কৃতীদের গুলিতে খুন হয়েছিলেন এক আলো ব্যবসায়ী। এ দিনের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত বাপ্পা শীলের খোঁজে তল্লাশি শুরু করেছে পুলিশ।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, চন্দননগরের মহাডাঙা কলোনির একটি মন্দিরে কালী পুজো চলছিল। নারায়ণবাবু পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে পুজো দেখতে গিয়েছিলেন। রাত বাড়ায় পরিবারের অন্য সদস্যরা বাড়ি ফিরে যান। শুধু তিনি এবং তাঁর মা থেকে গিয়েছিলেন। রাত দেড়টা নাগাদ পুজো শেষ হওয়ার পরে নারায়ণবাবু মায়ের সঙ্গে বাড়ি ফিরছিলেন। বাড়ির কাছেই পড়শি কয়েকজন ব্যক্তির মধ্যে বচসা চলছিল। নারায়ণবাবু সেই বচসা থামাতে যান।

Advertisement

অভিযোগ, এমন সময় তাঁদের মধ্যে একজন চপার নিয়ে নারায়ণবাবুর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। তাঁকে প্রথমে লাথি মেরে রাস্তায় ফেলে দেয় হামলাকারীরা। ছেলেকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য মা সোমাদেবী হামলাকারীদের কাছে কাকুতি-মিনতি করেন। কিন্তু মায়ের কথায় কান না দিয়ে তারা নারায়ণবাবুর গলায় একের পর এক কোপ মারে। রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তায় লুটিয়ে পড়েন তিনি। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তাঁর। মা সোমাদেবীর বলেন, ‘‘কালী মন্দির থেকে আমারা দু’জনে একসঙ্গে বাড়ি ফিরছিলাম। বাড়ির কাছেই স্থানীয় এক যুবকের সাথে কয়েকজনের মধ্যে বচসা চলছিল।’’ তিনি জানান, ছেলে তাই দেখে থামাতে গিয়েছিল। তখন ওদের মধ্যে থেকে একজন ছেলেকে মারতে শুরু করে। রাস্তায় ফেলে দিয়ে গলায় কোপ মারতে থাকে। ছেলেকে ছেড়ে দিতে বললেও তারা শোনেনি।

সোমাদেবীর অভিযোগ, হামলাকারীরা তাঁর ছেলের কাছে দশ হাজার টাকা চেয়েছিল। তা না দেওয়ায় পরিণতি এই খুন। সোমাদেবীর চিৎকারে স্থানীয় বাসিন্দারা ছুটে এলে হামলাকারীরা পালায়। খবর পেয়ে পুলিশ এসে দেহ উদ্ধার করে নিয়ে যায়। বৃহস্পতিবার দেহটি ময়না তদন্তের চুঁচুড়া হাসপাতালে পাঠানো হয়। সোমাদেবী পড়শি বাপ্পা শীলের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ জানায়, বাপ্পার বিরুদ্ধে অসামাজিক কার্যকলাপ এবং খুনের অভিযোগ রয়েছে। ২০১৫ সালের ১৬ই অগস্ট চন্দননগরের আশ্রমপাড়া এলাকায় এক ব্যক্তিকে খুনের অভিযোগে পুলিশ বাপ্পাকে গ্রেফতার করেছিল। সম্প্রতি সে জেল থেকে ছাড়া পায়।

নিহতের স্ত্রী শিপ্রা সরকারের দাবি, ‘‘বেশ কিছুদিন ধরে এলাকার বাসিন্দা এক দুষ্কৃতী আমার স্বামীর কাছে ১০,০০০ টাকা চেয়েছিল। কিন্তু সেটা দিতে না পারায় তাঁকে মেরে ফেলা হল। যারা এই কাজ করল তাদের যেন উপযুক্ত শাস্তি হয়।’’

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, শুধু চন্দননগর নয়। গোটা জেলা জুড়েই খুন, ধর্ষণ, চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনা বেড়েই চলেছে। কখনও সাতসকালে ট্রাক-মালিকের বাড়িতে ঢুকে চালককে খুন করছে দুষ্কৃতীরা। কখনও পথচলতি তরুণীকে হাত ধরে ট্রাকে টেনে তোলার চেষ্টা হচ্ছে। কখনও আবার কারখানায় ডাকাতি করতে গিয়ে গুলি করে নিরাপত্তারক্ষীকে খুন করা। গত শনিবার ডাকাতি করতে এসে এক বৃদ্ধাকে মারধর এবং ধর্ষণের ঘটনা ঘটে কোন্নগরে। ওই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই ফের খুন। স্বাভাবিক ভাবে জেলার আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

চন্দননগরের এসডিপিও রানা মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘প্রাথমিক তদন্তের পরে মনে হচ্ছে, পুরনো শত্রুতার জেরেই এই যুবককে খুন করা হয়েছে। সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা-সহ নিরাপত্তার বিষয়ও দেখা হচ্ছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement