অকুস্থল: নর্দমার পাশে পড়ে শ্যামলবাবুর দেহ। ছবি: প্রকাশ পাল
এলাকায় এলাকায় নিয়মিত পুলিশি টহল চলছে। দুষ্কৃতীরা ধরাও পড়ছে। কিন্তু হুগলির শহরাঞ্চল তথা চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেট এলাকায় দুষ্কৃতীদের বাড়বাড়ন্তে লাগাম পরছে না।
বৃহস্পতিবার ভরদুপুরে কোন্নগর স্টেশনের কাছেই নবগ্রাম হীরালাল পাল কলেজের সামনে প্রকাশ্য রাস্তায় গুলি করে শ্যামল দাস (৩৭) নামে এক ইমারতি ব্যবসায়ীকে গুলি করে খুন করল দুষ্কৃতীরা। মোটরবাইক নিয়ে শ্যামলকে ধাওয়া করে এসেছিল তিন দুষ্কৃতী। এই ঘটনায় ফের সাধারণ মানুষের নিরপত্তা বেআব্রু হয়ে পড়েছে। আতঙ্কিত সাধারণ মানুষ।
চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেটের এক কর্তা বলেন, ‘‘ব্যবসায় লেনদেন সংক্রান্ত কারণে ওই ব্যবসায়ীর উপর হামলা হতে পারে। নিহতের সঙ্গে কার কার লেনদেন ছিল, তা নিয়ে গোলমাল ছিল কিনা, সব খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’ নিহতের ভাই বিমল দাস বলেন, ‘‘কারা দাদাকে মারল বুঝতে পারছি না। ওর সঙ্গে কারও শত্রুতা ছিল বলেও জানি না।’’
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শ্যামলের বাড়ি ডানকুনির জগন্নাথপুরে। নবগ্রামে একটি আবাসন নির্মাণের জন্য ইট-বালি সরবরাহ করছিলেন তিনি। এ দিন ওই আবাসনে এসে ব্যবসায়িক সঙ্গীর (বিজনেস পার্টনার) সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বলেন। বেলা পৌনে ২টো নাগাদ মোটরবাইকে চেপে প্রায় নির্জন কলেজ রোড ধরে বাড়ি ফিরছিলেন। একটি মোটরবাইকে তিন দুষ্কৃতী তাঁকে অনুসরণ করছিল। কলেজের গেটের সামনেই দুষ্কৃতীরা কাছ থেকে তাঁকে লক্ষ করে তিনটি গুলি ছোড়ে। একটি গুলি শ্যামলের বাঁ কানে এবং একটি গুলি বুকের ডান দিকে লাগে। বাইক থেকে ছিটকে নর্দমায় পড়ে যান তিনি। পাশের গলি দিয়ে দুষ্কৃতীরা পালায়। পুলিশ উত্তরপাড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা শ্যামলকে মৃত ঘোষণা করেন। দেহটি ময়নাতদন্তের জন্য শ্রীরামপুর ওয়ালশ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
দুষ্কৃতীরাজ
৭ জানুয়ারি: হুগলি স্টেশনের কাছে শিশুর দেহ উদ্ধার। সৎ বাবার হাতে খুনের অভিযোগ।
১৩ জানুয়ারি: চুঁচুড়ার মিলনপল্লিতে গুলিতে জখম কিশোর।
৩০ এপ্রিল: শ্রীরামপুরের বিবিবেড়ে দুষ্কৃতীর গুলিতে নিহত ১।
৩ মে: গুপ্তিপাড়ায় দুষ্কৃতীদের গুলির লড়াইয়ে মৃত ১, আহত ৩।
চলতি বছরের গোড়া থেকেই একের পর এক দুষ্কৃতী তাণ্ডবের ঘটনা ঘটেছে এই জেলায়। অনেকেই ভেবেছিলেন, কমিশনারেট গঠন হওয়ার পরে দুষ্কৃতী-দৌরাত্ম্যে লাগাম পড়বে। কিন্তু তা হয়নি। মাস কয়েক আগে ব্যান্ডেল স্টেশনের কাছেই বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে গিয়ে এক দুষ্কৃতীকে গুলি করে খুন করা হয়। এলাকায় আতঙ্ক ছড়াতে শূন্যে গুলি ছুড়তে ছুড়তে দুষ্কৃতীরা চম্পট দেয়। তার আগে দুষ্কৃতীদের এলাকা দখলের লড়াইকে কেন্দ্র করে কোন্নগরের কাঁসারিপুকুর এলাকায় গুলি চলে। মারধর করা হয় স্থানীয় একটি ক্লাবের ছেলেদের। একটি গুলি এক তরুণের পা ছুঁয়ে চলে যায়। শ্রীরামপুরের বিবিরবেড়ে এক যুবক গুলিতে খুন হন। বৈদ্যবাটিতেও জমির কারবারি এক ব্যক্তি গুলিতে জখম হন। দশমীর ভোরে শ্রীরামপুরের একটি নার্সিংহোমে আইসিইউ-তে ঢুকে রিভলভার উঁচিয়ে আতঙ্ক ছড়ায় দুষ্কৃতীরা। তার পরে এ দিনের নবগ্রামের ঘটনা।
নবগ্রামের কলেজ রোডের বাসিন্দা এক প্রৌঢ় বলেন, ‘‘দুপুরে হঠাৎ ফটফট দু’টো শব্দ পেলাম। ভেবেছিলাম গাড়ির চাকা ফেটেছে। এমন সময় একটা ছেলে ভয়ে হুড়মুড়িয়ে আমাদের বাড়িতে ঢুকে পড়ল। শুনলাম, খুন হয়ে গিয়েছে।’’ এলাকার এক মহিলা বলেন, ‘‘সমাজবিরোধী ধরা পড়ছে। কিন্তু এই ধরনের দুষ্কর্ম যাতে না ঘটে, পুলিশ সেটা নিশ্চিত করুক।’’
কমিশনারেট সূত্রের বক্তব্য, নিরাপত্তা ব্যবস্থা সাজাতে পুলিশ তৎপর। এমন ঘটনা যাতে না ঘটে, ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দুষ্কৃতীদের ই গ্রেফতার করে ঘটনার কিনারা করার চেষ্টা চলছে। দুষ্কৃতীদের পিছনে কে রয়েছে, তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।