বন্যার জল নামতেই আমন চাষে চাহিদা ড্রাম-সিডারের

আধুনিক কৃষি-প্রযুক্তি হিসেবে ড্রাম-সিডার ব্যবহার করে চাষের জন্য এত দিন খানাকুল-১ ব্লকে প্রচার চালিয়ে কৃষি দফতর। কিন্তু চাষিরা চিরাচরিত পদ্ধতির বাইরে বেরিয়ে নতুন পদ্ধতি প্রয়োগে খুব একটা উৎসাহিত হননি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

খানাকুল শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০১৫ ০০:২১
Share:

আধুনিক কৃষি-প্রযুক্তি হিসেবে ড্রাম-সিডার ব্যবহার করে চাষের জন্য এত দিন খানাকুল-১ ব্লকে প্রচার চালিয়ে কৃষি দফতর। কিন্তু চাষিরা চিরাচরিত পদ্ধতির বাইরে বেরিয়ে নতুন পদ্ধতি প্রয়োগে খুব একটা উৎসাহিত হননি। কিন্তু এ বার বন্যার জল নামতেই ওই যন্ত্রের চাহিদা বাড়ছে চাষিদের মধ্যে। আর তা সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে কৃষি দফতর। এমনকী, দফতরের কর্মীরাও হেনস্থার মুখে পড়ছেন। কেননা, ব্লকে ওই দফতরের হাতে রয়েছে মাত্র দু’টি যন্ত্র। আর পঞ্চায়েতের সংখ্যা ১৩।

Advertisement

চাষিদের অভিযোগ, কৃষি দফতর লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে বছর ছয়েক ধরে আধুনিক কৃষি-প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ে প্রচার করছে। কিন্তু বন্যায় আমন ধান নষ্ট হয়ে যাওয়ার পর যখন ড্রাম-সিডার চাওয়া হচ্ছে, তখন সেই যন্ত্র চাষিদের হাতের কাছে নেই। যন্ত্রের অপ্রতুলতার কথা স্বীকার করে জেলার মুখ্য কৃষি আধিকারিক শান্তিরঞ্জন সরকার বলেন, ‘‘আগে যন্ত্রটির চাহিদা ছিল না। বর্তমান পরিস্থিতিতে ড্রাম সিডার প্রযুক্তি চাষিরা গ্রহণ করতে চাইছেন, এটা ভাল। পরবর্তীতে বেশি যন্ত্র সরবরাহের ব্যবস্থা করা হবে।’’

কৃষি দফতর সূত্রের খবর, এই যন্ত্র ব্যবহারে বীজতলা করতে হয় না। সরাসরি ধানবীজ যন্ত্রের সাহায্যে জমিতে ফেলা যায়। মাত্র তিন মাসেই ফসল ওঠে। তা ছাড়া জলও কম লাগবে। উপরন্তু ফসল বেশি পাওয়া যায়। চাষিদের বক্তব্য, কৃষি দফতরের এই প্রচার যে কতটা ঠিক, তা এখনই পরখ করার সঠিক সময়। পোল গ্রামের চাষি সুফল রায় বা সাইবোনা গ্রামের রহমত আলির কথায়, ‘‘বন্যায় অধিকাংশ জমির ধান এবং বীজতলা নষ্ট হয়েছে। আমরা দেখতে চাই, ওই যন্ত্রে কতটা উপকার হয়।’’ একই বক্তব্য রাধাবল্লভপুর গ্রামের চাষি বৃন্দাবন দে-রও।

Advertisement

ব্লক কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বার ১০ হাজার হেক্টর জমির মধ্যে ৭৬০০ হেক্টর জমিতে আমন চাষ হয়েছিল। তার মধ্যে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৫৬০০ হেক্টর জমির চাষ। সরকারি স্তরে নতুন করে ধানবীজ পাওয়া গিয়েছে ২০ টন (স্বল্প মেয়াদি ধানবীজ আইইটি-৪৭৮৬ বা শতাব্দী, এমটিইউ ১০১০, গোটরা-১ বিনামূল্যে কৃষকদের বিতরণ করা হচ্ছে)। যাতে ৪০০ হেক্টর জমিতে চাষ করা সম্ভব। সেই ৪০০ হেক্টরের মধ্যে কিছু জমিতে দফতরের তত্ত্বাবধানে ড্রাম-সিডার পদ্ধতিতে চাষের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে গত শনিবার থেকে। এর পরেই অন্য চাষিরাও ড্রাম-সিডারের দাবি তুলেছেন।

ব্লক কৃষি আধিকারিক হরষিত মজুমদার জানান, ব্লকের জন্য বছর পাঁচেক ধরে ২০টি যন্ত্র চাওয়া হচ্ছে। এতদিনে মাত্র দু’টি মিলেছে। তবু আশা করা হচ্ছে, ধানবীজ এবং যন্ত্রের ঘাটতি থাকা সত্ত্বেও চাষিরা নিজেরা ধানবীজ জোগাড় করে চাষে উদ্যোগী হবেন। যন্ত্রটির বিকল্প হিসেবে চাষিদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে একটি লম্বা দড়িতে ১০ ইঞ্চি অন্তর লাল সুতো (চিহ্নিত করার জন্য) বেঁধে জমিতে ওই দড়ি ফেলতে হবে। তার পরে একটি করে ১০-১২ দিনের চারা শিকড় ও জৈব সার-সহ লাল সুতো বাঁধা বিন্দুগুলিতে আলগা করে বসাতে হবে। যদিও এতে দক্ষ শ্রমিক লাগবে বলে চাষিদের উত্‌সাহিত করা সমস্যা হচ্ছে বলেও তিনি মেনে নিয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন