লাগানো হচ্ছে রথের রশি। মাহেশে।
মাহেশ থেকে গুপ্তিপাড়া— আজ রথযাত্রাকে কেন্দ্র করে মেতে উঠতে তৈরি দুই শহর। মঙ্গলবার থেকেই ভিড় করতে শুরু করেছেন পূণ্যার্থীরা। শুধু রথ নয় মেলা দেখতেও উপচে পড়ে ভিড়। আর ভিড়ের কথা মাথায় রেখেই রথযাত্রাকে নিরাপদ, নির্বিঘ্ন করতে তৎপর গুললি জেলা পুলিশ-প্রশাসন।
মাহেশের রথযাত্রার এ বার ৬২০ বছর। স্নানপিড়ি মাঠের সামনে থেকে জিটি রোড ধরে রথ পৌঁছবে মাসির বাড়ি। অন্য বছর রাস্তার কারণে নির্দিষ্ট সময়ে রথের টান শেষ করা নিয়ে পুলিশ-প্রশাসনের যে মাথাব্যথা থাকত, তা অবশ্য এ বার নেই। কেননা, জিটি রোডের পূর্ণাঙ্গ সংস্কার হয়েছে। পিচ রাস্তার ধারে কংক্রিটের ঢালাই করা হয়েছে। ফলে রথের চাকা বসে যাওয়ার সম্ভাবনা কার্যত নেই।
মঙ্গলবার মাহেশ এবং গুপ্তিপাড়ায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখেন জেলার পুলিশ সুপার প্রবীণ ত্রিপাঠী-সহ পদস্থ পুলিশ আধিকারিকরা। জেলা পুলিশ সূত্রে খবর, মাহেশে অন্তত ছ’শো পুলিশকর্মী মোতায়েন থাকবেন। এর মধ্যে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, ডিএসপি এবং ইন্সপেক্টর পদমর্যাদার প্রায় ২৫ জন অফিসার থাকবেন। সাব-ইনস্পেক্টর এব অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব-ইনস্পেক্টর মিলিয়ে প্রায় ১৮০ এবং কনস্টেবল ও হোমগার্ড থাকবেন প্রায় ৪০০ জন। ৬০ জন মহিলা কনস্টেবল ও শ’চারেক সিভিক ভলান্টিয়ারও মোতায়েন করা হবে।
জগন্নাথ মন্দির চত্বর, মাসির বাড়ির মন্দির চত্বর এবং জিটি রোডে ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। ছিনতাইবাজদের আটকাতে মহিলা এবং পুরুষ পুলিশকর্মীরা সাদা পোশাকে ভিড়ে মিশে থাকবেন। রেল স্টেশন এবং গঙ্গার ঘাটগুলিতেও পুলিশ কড়া নজরদারি চালাবে। জিটি রোড-সহ অন্যান্য রাস্তায় যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হবে। বেলা ১২টার পর থেকে বটতলা পর্যন্ত গাড়ি চলবে। মাহেশের দিকে কোনও গাড়ি ঢুকতে দেওয়া হবে না। একই ভাবে রিষড়ার দিক থেকে মৈত্রী পথের পর থেকে গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকবে।
বাঁশবেড়িয়ার রথে বসেন রাধা-কৃষ্ণ।
গুপ্তিপাড়ায় শ’তিনেক পুলিশকর্মী এবং প্রায় চারশো সিভিক ভলান্টিয়ার থাকবেন নিরাপত্তার দায়িত্বে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, ডিএসপি এবং ইন্সপেক্টর পদমর্যাদার অফিসার থাকবেন ১৪ জন। এসআই-এএসআই মিলিয়ে প্রায় ৭০ জন। শান্তিপুর থেকে গুপ্তিপাড়া ফেরিঘাট হয়ে বহু মানুষ রথ দেখতে আসেন। কালনার দুর্ঘটনার কথা মাথায় রেখে ফেরি চলাচল নিয়ে পুলিশ এ বার অতিমাত্রায় সতর্ক। পুলিশ জানিয়েছে, আজ এই ঘাটে গাড়ি পারাপার বন্ধ থাকবে। গুপ্তিপাড়ায় রথযাত্রা উপলক্ষে সোজারথ এবং উল্টোরথের দিন ব্যান্ডেল থেকে কাটোয়া পর্যন্ত এক জোড়া স্পেশ্যাল ট্রেন চালানো হবে বলে পূর্ব রেল সূত্রে জানানো হয়েছে।
জগন্নাথের নয়, হুগলির বাঁশবেড়িয়া মেতে ওঠে রাধাগোবিন্দের রথযাত্রায়। এখানে রথে জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রা চড়েন না। রথে বসেন রাধাকৃষ্ণ। রথের দিন পিতলের রাধা আর কষ্টিপাথরের কৃষ্ণের বিগ্রহ রথে চাপিয়ে সন্তান সঙ্ঘ থেকে গন্ধেশ্বরী ঘাট হয়ে পুরসভার মাঠে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে বিগ্রহদু’টি নামিয়ে ফের সন্তান সঙ্ঘের কাছে মন্দিরে নিয়ে আসেন পুরোহিত। সেখানে মোলা বসে। মাঠে থেকে যায় রথ। উল্টোরথের দিন রাধাকৃষ্ণকে সেখানে নিয়ে গিয়ে রথে চাপিয়ে ফিরিয়ে আনা হয় মন্দিরে।
ছবি: দীপঙ্কর দে ও সুশান্ত সরকার