জেলের প্রেমই কাল হল কাশীর

অনেক দিন ধরেই চন্দননগরের কুখ্যাত দুষ্কৃতী কাশীকে ধরার চেষ্টা করছেল পুলিশ। কিন্তু শেষ মুহূর্তে বারবার ফাঁদ কেটে পালাচ্ছিল সে।

Advertisement

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়

চন্দননগর শেষ আপডেট: ১৩ জুন ২০১৭ ১৬:০০
Share:

ধৃত: পুলিশের জালে কাশী। নিজস্ব চিত্র

জেলের মধ্যে সাংবাদিকতায় এমএ, সুশ্রী মেয়ের প্রেমে পড়াই কাল হল চন্দননগরের ‘ত্রাস’ কাশীর।

Advertisement

অনেক দিন ধরেই চন্দননগরের কুখ্যাত দুষ্কৃতী কাশীকে ধরার চেষ্টা করছেল পুলিশ। কিন্তু শেষ মুহূর্তে বারবার ফাঁদ কেটে পালাচ্ছিল সে। দিন কয়েক আগে পুলিশ খবর পায়, চন্দননগরের বিলকুলি এলাকা থেকে বেশ কয়েক কিলোগ্রাম গাঁজা নির্দিষ্ট ঠিকানায় পৌঁছে দেওয়ার কথা কাশীর। এ বার পুলিশ তাকে হাতেনাতে ধরে।

কীভাবে পুলিশের জালে ধরা পড়ল কাশী?

Advertisement

পুলিশের দাবি, জেলে থাকাকালীন কাশীর সঙ্গে আলাপ হয়েছিল বছর সাতাশের এক তরুণী বধূর। সেই মহিলাও তখন স্বামীকে আত্মহত্যায় প্ররোচনার দায়ে জেলবন্দি। আদালত যাওয়ার পথে চলত দু’জনের দুঃখের কথা আদান-প্রদান চলত। কাশীর প্রতি দুর্বলতা গোপন করেননি মহিলা। আর মহিলার অতীত জেনে কাশীও নিজেকে ধরে রাখতে পারেনি। পরিণতিতে প্রেম।

ক্রমশ সহকর্মীদের বিশ্বাস হারাতে শুরু করে কাশী। ওই মহিলার জন্য লক্ষাধিক টাকা ঢালার অভিযোগ তুলতে শুরু করে তার এক সময়ের বিশ্বস্ত সহকর্মীরাই। পরিণতিতে দল ভাঙল। বিকি, বিনোদ, সুমনেরা কাশীর কাছ থেকে ছিটকে গেল। নিজের হাতে গড়া ‘দল’ দুর্বল হয়ে পড়ল। সেই খবর ছড়াল পুলিশ আর প্রমোটারদের কাছেও। ফলে ‘হেভিওয়েটের’ তকমা হারাল এক সময়ের চন্দননগর, ভদ্রেশ্বর এলাকার ‘ত্রাস’ কাশী।

এটাই প্রথম নয়। তদন্তকারী প্রবীণ পুলিশ অফিসারদের মুখে মুখে ফেরে কাশীর আগের এক প্রেমের গল্প। এক সময় প্রেমের টানে পুলিশের জাল কেটে পালিয়ে বৈষ্ণোদেবী পালিয়ে গিয়েছিল মধ্য চল্লিশের কাশী। হাতে প্রচুর টাকা। সঙ্গে পাঁচ শাগরেদ। দামি হোটেল, গাড়ি আর সঙ্গী বান্ধবী। বহুদিন ভিন রাজ্যে কাটিয়ে ধানবাদে ডেরা গাড়তেই পুলিশের নজরবন্দি হল সে।

কাশীর টাকা আর ক্ষমতার উৎস? শোনা যায়, রাজনীতির কারবারিদের হাত ছিল তার মাথায়।

পুলিশই জানাচ্ছে, নেহাত মসৃণ ছিল না কাশীর উত্থান। এক সময় সে ডোমের কাজ করত। কোথাও কারও অস্বাভাবিক মৃত্যু হলেই ভ্যানে তুলে দেহ নিয়ে যেত সে হাসপাতালে। সেই কাজ করতে গিয়েই তার সঙ্গে বিবাদ হয় এলাকার এক দুষ্কৃতীর। তাকে সরানোর ছক কষে সে। সেই কাজে দুষ্কৃতীদের সঙ্গে যোগাযোগের সূত্রেই কাশীর আনাগোনা শুরু হয় অন্ধকার জগতে। ক্রমেই হাত পাকে তার সেই কাজে। এরপর তাকে আর ফিরে তাকাতে হয়নি।

এলাকার পুরনো বাড়ি ভাঙার কাজ চন্দননগর অঞ্চলে তাকেই দিতে হবে। কোনও জমি নিয়ে প্রমোটারেরা বিপাকে পড়েছে? মুক্তির উপায় খুঁজতে ডাক পড়বে কাশীর। ডান্ডা মেরে ঠান্ডা করার কাজে কাশীর জুড়ি মেলা ভার। ক্রমেই কাশীকে রেয়াত করা শুরু করে স্থানীয় রাজনীতির দাদারা। পুলিশের খাতায় অন্তত ২২টি মামলা ঝুলছে। খুনের মামলা রয়েছে পাঁচটি।

জেলা পুলিশের এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘পুলিশ কাশীকে হেফাজতে নেবে। একমাত্র তাকে নাগালে পেলেই অনেক পুরনো মামলার নিষ্পত্তি সম্ভব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন