চোখে ঠুলি প্রশাসনের কর্তাদের
Child Labourer

কম মজুরিতে শিশুশ্রমিক দিয়ে কাজ করানোর হিড়িক

শুধু গোঘাটেই নয়, আরামবাগ মহকুমার খানাকুল, আরামবাগ, পুরশুড়াতেও চালু ইটভাটাগুলির সবেতেই শিশু শ্রমিকের দেখা মেলে।

Advertisement

পীযূষ নন্দী

আরামবাগ শেষ আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৪:১০
Share:

অ-বৈধ: হাসপাতালে ইট নামাতে এসেছিল এই খুদে শ্রমিকরাই। ছবি: সঞ্জীব ঘোষ

ছোট ছোট হাত। কিন্তু ঝড়ের গতিতে হচ্ছে কাজ। গোঘাটের কুমুড়শা এলাকার একটি ইটভাটা থেকে ওই খুদেরাই আরামবাগ মহকুমা হাসপাতালের ইট নামিয়ে দিয়ে গিয়েছে।

Advertisement

শুধু গোঘাটেই নয়, আরামবাগ মহকুমার খানাকুল, আরামবাগ, পুরশুড়াতেও চালু ইটভাটাগুলির সবেতেই শিশু শ্রমিকের দেখা মেলে। ৬টা ইট মাথায় চাপিয়ে বইতেও দেখা যায়। খানাকুলের নতিবপুরের পরেশ কোটাল, আরামবাগের বিক্রমপুরের শঙ্কর রায়ের অভিযোগ, “শ্রম দফতর, শিশু কল্যাণ দফতর সহ এলাকার প্রশাসনের নজরদারির অভাবেই কম মজুরিতে শিশু শ্রমিক দিয়ে কাজ করানোর এত হিড়িক।”

শুধু ইটভাটা কেন, হোটেলে, চায়ের দোকানেও হামেশাই কাজ করতে দেখা যায়। এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রশাসন চোখে ঠুলি পরে রয়েছে। তাই অবাধে চলছে শিশুদের কাজে লাগানোর এই বেআইনি কারবার।

Advertisement

আইন বলছে, ১৪ বছরের নীচে কোনও শিশুকে কারখানা বা বিপজ্জনক কাজে লাগানো যাবে না। শিশুদের উন্নতির জন্য বিনামূল্যে এবং বাধ্যতামূলক শিক্ষার ব্যবস্থাও আছে। জাতীয় শিশু শ্রমিক কল্যাণ প্রকল্পের অধীন স্কুলগুলিতে তাদের পড়ার কথা।

তারপরেও শিশুদের কাজে লাগানো হচ্ছে কেন?

গোঘাটের বায়ুগ্রামের এক ইটভাটার মালিক শ্রীকান্ত মণ্ডলের দাবি, “আমরা শিশুদের কাজে লাগাই না। ওরা অনেক সময় নিজেরাই খেলার ছলে বাবা-মায়ের সঙ্গে হাত লাগায়।” শ্রীকান্তবাবুর দাবি, ‘‘রাঁচি থেকে আসা শ্রমিকদের ছেলে-মেয়েদের অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছি আমরা।’’ যদিও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ইটভাটার মালিক স্বীকার করেছেন, শ্রমিক মিলছে না। ফলে ভরসা এখন শিশু শ্রমিকরাই। ট্রাক্টর চালক সুকুমার দাস বললেন, “ইট বোঝাই এবং নামোনো শুধু নয়, ইট তৈরি, ইট টানায় বাবলা, শঙ্করদের জুড়ি মেলা ভার! ওরাই তো ইটভাটাগুলোর ভরসা।’’

১৪ বছরের নীচে এক একজন শিশুর দিনে রোজগার হয় ২৫০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত। মহকুমা হাসপাতালে ইট নামাতে আসা বাবলা মালিক নামে এক শিশু বলে, ‘‘মাল বোঝাই আর নামানোর কাজে তিন বার কাজ করলেই ৩০০ টাকা পাই। পড়াশোনা ভাল লাগে না বলে বাবা বলেছে কাজ কর। কাজ করতে ভাল লাগছে। টাকাও জমাচ্ছি।’’

এইসব শিশুরা কি স্কুল ছুট? সংশ্লিষ্ট এলাকার বায়ুগ্রাম প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলেন, “স্কুলের রেজিস্ট্রারে যাদের নাম আছে। তাদের মধ্যে কেউ স্কুলছুট নেই।”

সরকারি নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও নজরদারির অভাবেই কি ইটভাটা সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে চলছে শিশু শ্রম? বিভিন্ন ব্লকের শিশু সুরক্ষা কমিটিরগুলির একই বক্তব্য, “নিয়মিত পরিদর্শন হয়। সচেতন করা হয়। কিছু নজরে পড়ে না।” ইটভাটাগুলির ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্লক ভূমি ও ভূমি রাজস্ব আধিকারিকরা জানিয়েছেন, ইটভাটায় শিশু শ্রমিকের অভিযোগ পেলে শ্রম দফতরকে জানানো হয়।

বিষয়টি নিয়ে আরামবাগ শ্রম দফতরের আরামবাগ মহকুমা আধিকারিক (অ্যাসিস্ট্যান্ট লেবার কমিশনার) সুভাষ মুখোপাধ্যায় বলেন, “শিশু শ্রম নিয়ে সর্বত্রই সতর্কতা জারি আছে। ইটভাটা-সহ বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালানো হবে। শিশু শ্রমিকের সন্ধান পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন