পোকেমন
সাইবার জগতের নতুন গেম ‘পোকেমন গো’ নিয়ে উন্মাদনা ক’দিন ধরেই তুঙ্গে। পথঘাটে মোবাইল হাতে পোকেমন খুঁজতে গিয়ে বিদেশে দুর্ঘটনাও ঘটেছে। কলকাতায় ‘পোকেমন গো’ নিয়ে উন্মাদনা থাকলেও এখনও বিপদ ঘটেনি। তবে শনিবার রাতে পোকেমন ‘স্টিকারের’ উন্মাদনায় কার্যত বিপদে পড়েছিল ন’বছরের এক শিশু। শেষ পর্যন্ত হাওড়া স্টেশনে রেলরক্ষী বাহিনীর চোখে পড়ে যাওয়ায় উদ্ধার করা গিয়েছে তাকে।
কী হয়েছিল শনিবার রাতে?
পুলিশ সূত্রের খবর, শনিবার সন্ধ্যায় মধ্য হাওড়ার বনবিহারী বসু রোডের একটি বহুতলের ফ্ল্যাট থেকে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিল অনিমেষ সিংহ নামে এক শিশু। বেশ কিছু ক্ষণ খোঁজাখুঁজির পরে রাত সাড়ে দশটা নাগাদ হাওড়া থানায় একটি অপহরণের মামলা দায়ের করেন তার মা সরিতা সিংহ। অনিমেষের বাবা শৈলেশ সিংহ সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মী। বর্তমানে হাজারিবাগে রয়েছেন। দুই ছেলেকে নিয়ে সরিতাদেবী ওই বহুতলের পাঁচতলার ফ্ল্যাটে থাকেন। ওই বহুতলের চারতলার একটি ফ্ল্যাটে থাকেন সবিতাদেবীর শ্বশুর-শাশুড়িও। শনিবার বিকেলে ঠাকুরদা-ঠাকুরমার ফ্ল্যাটে খেলতে গিয়েছিল শিশুটি। তার পরে নিজেদের ফ্ল্যাটে আর ফেরেনি সে।
এই খোঁজ-খবর এবং অভিযোগ দায়েরের মধ্যেই অনিমেষের বাড়ির লোকেরা জানতে পারেন, শিশুটি সকালে তার মামাতো ভাইকে জানিয়েছিল, পোকেমনকে ধরতে সে মুম্বই যাবে। সেই কথার সূত্র ধরেই হাওড়া স্টেশনে যান সরিতাদেবীরা। সরিতাদেবীর প্রতিবেশী সন্দীপ গনেরিবাল জানান, আরপিএফকে অনিমেষের ছবি দেখাতে তারা জানায়, এমনই দেখতে একটি শিশুকে কিছু ক্ষণ আগে উদ্ধার করা হয়েছে। এর পরে হাওড়া থানার পুলিশও স্টেশনে যায় এবং অনিমেষকে তার মায়ের হাতে তুলে দেওয়া হয়। তার হাতে পোকেমন স্টিকার তো ছিলই, খাবারের প্যাকেটের ভিতরে মুম্বই যাওয়ার বিজ্ঞাপনও মিলেছে বলে পুলিশ সূত্রের খবর।
প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানিয়েছে, ২ জুলাইও বাড়ি থেকে উধাও হয়ে গিয়েছিল অনিমেষ। বাড়ির কাছে গঙ্গার ঘাট থেকে ওকে পাওয়া যায়। সে সময়ে ওই শিশু জানিয়েছিল, এক ব্যক্তি তাকে মামার বাড়ি নিয়ে যাবে বলেছিল। সেই কারণেই শনিবার রাতে অপহরণের অভিযোগ জানিয়েছিলেন সরিতাদেবী। অনিমেষ ওই ব্যক্তির কথা জানিয়ে তদন্তকারীদের জানিয়েছে, পোকেমন ধরতেই সে মুম্বই যাচ্ছিল। হাওড়ার পুলিশ কমিশনার দেবেন্দ্রপ্রকাশ সিংহ বলেন, ‘‘শিশুটি যে ব্যক্তির কথা বলছে, তার বিষয়ে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। রাস্তায় বসানো সিসিটিভি-র ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’
‘পোকেমন গো’ খেলাটি সাইবার জগতে নতুন আমদানি করা হলেও আদতে এই কার্টুন দীর্ঘদিন ধরেই জনপ্রিয়। তাই পোকেমনকে কাজে লাগিয়ে বিজ্ঞাপনও করছে বিভিন্ন বাণিজ্যিক সংস্থা। তেমনই একটি বহুজাতিক সংস্থার খাবারের প্যাকেটে এই স্টিকার পেয়েছিল অনিমেষ।
মনোবিদদের একাংশ বলছেন, বিভিন্ন ধরনের কার্টুন এমনিতেই শিশুমনের উপরে প্রভাব ফেলে। তার উপরে যে ভাবে বাণিজ্যিক সংস্থাগুলিও এই সব চরিত্রকে ব্যবহার করে বিজ্ঞাপন করছে, তাতে রীতিমতো উন্মাদনা ছড়াচ্ছে। সাইবার প্রযুক্তির সঙ্গে যুক্ত এক যুবকের কথায়, ‘‘পোকেমন গো নিয়ে উন্মাদনা ছড়াচ্ছে, তার পিছনেও কিন্তু এই কার্টুনের জনপ্রিয়তা রয়েছে।’’ তাঁর মতে, পোকেমন গো নিয়ে তরুণ প্রজন্মই এত অদ্ভূত আচরণ করছে, শিশুরা তো এমন কাণ্ড আরও বেশি করে ঘটাবেই। পুলিশের অনেকেও মনে করছেন, এই ধরনের উন্মাদনাকে কাজে লাগিয়ে শিশু চুরি বা পাচারের সঙ্গে জড়িত অপরাধীরাও সক্রিয় হয়ে উঠতে পারে।