চলছে ইটবৃষ্টি। রবিবার। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।
বাপের বাড়িতে এসে মাকে নিয়ে পুজোর বাজারে বেরিয়েছিলেন। কেনাকাটা শুরুর আগেই রিকশায় বেপরোয়া ডাম্পারের ধাক্কা। ছিটকে পড়ে তার চাকাতেই পিষে গেলেন বছর তিরিশের যুবতী। রবিবার দুপুরে এই দুর্ঘটনা ঘিরেই রণক্ষেত্র হয়ে উঠল হাওড়া টিকিয়াপাড়ার ইস্ট-ওয়েস্ট বাইপাস রোড। পুলিশকে লক্ষ করে বৃষ্টির মতো ইট পড়ল। ভাঙচুর হল গাড়ি। উত্তেজিত জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে বেধড়ক লাঠি চালাল পুলিশ। আহত হলেন সাত পুলিশকর্মী। প্রায় এক ঘণ্টা জনতা-পুলিশ খণ্ডযুদ্ধের পরে বিশাল পুলিশবাহিনী ও র্যাফ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
পুলিশ জানিয়েছে, মীরা রজক (৩১) নামে ওই গৃহবধূর শ্বশুরবাড়ি ব্যান্ডেলে। শনিবার টিকিয়াপাড়ার গঙ্গারাম বৈরাগী লেনে বাপের বাড়িতে এসেছিলেন তিনি। এ দিন দুপুরে মাকে নিয়ে পুজোর বাজার করতে যাচ্ছিলেন মীরা। বসেছিলেন রিকশার ডান দিকে। টিকিয়াপাড়ার কাছে ইস্ট-ওয়েস্ট বাইপাস মোড়ে তীব্র গতিতে আসা পুরসভার ওই ডাম্পারটি প্রথমে রিকশার সামনে ধাক্কা মারে। ছিটকে পড়েন মীরা। ডাম্পারের পিছনের চাকা তাঁর উপর দিয়ে চলে গেলে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তাঁর। জখম হন মীরার মা-ও। তাঁকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। এর পরেই ডাম্পার-সহ পালান চালক।
মীরার বাপের বাড়ি দুর্ঘটনাস্থলের কাছেই। এলাকাটিও বেশ জনবহুল। এই ঘটনার খবর ছড়াতেই শ’খানেক বাসিন্দা জড়ো হয়ে মৃতদেহ আটকে বিক্ষোভ শুরু করেন। স্থানীয় এক বাসিন্দা পবন ছেত্রী বলেন, “এই মোড়ে কখনও ট্রাফিক পুলিশ থাকে না। পুরসভার গাড়িগুলো বেপরোয়া ভাবে যায়। দুর্ঘটনাও লেগেই থাকে।” প্রায় আধ ঘণ্টা বিক্ষোভের জেরে ওই রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পুলিশ পৌঁছতেই তাদের লক্ষ করে শুরু হয় ইটবৃষ্টি। প্রথম দফায় পুলিশ-র্যাফ লাঠি চালিয়ে দেহ সরিয়ে নিয়ে যায়। স্থানীয়দের একাংশের অভিযোগ, বিনা প্ররোচনায় পুলিশ লাঠি চালিয়েছে। তাঁদের দাবি, অবিলম্বে বাইপাস মোড়ে ট্রাফিক পুলিশ এবং সর্বক্ষণের জন্য পুলিশ পিকেট মোতায়েন করতে হবে।
বাসিন্দাদের একাংশের আরও অভিযোগ, পুলিশ তাঁদের দাবি না শুনেই দেহ সরিয়ে নিয়ে যায়। কেন তাঁদের দাবি শোনা হয়নি, তার প্রতিবাদে চ্যাটার্জিপাড়ার মোড়ে প্রায় ৮-১০টি গাড়ি ভাঙচুর করে জনতা। পুলিশ পরিস্থিতি সামলাতে এলে ফের আশপাশের বাড়ির ছাদ এবং গলি থেকে বৃষ্টির মতো ইট পড়তে থাকে। তার আঘাতে জখম হন প্রায় সাত পুলিশকর্মী। এক পথচারীর মাথায় আঘাত লাগে। ঘটনার আকস্মিকতায় প্রথমে হকচকিয়ে যায় পুলিশও। পরিস্থিতি হাতের বাইরে যাচ্ছে দেখে আশপাশের চারটি থানা থেকে বিরাট বাহিনী আনা হয়। নামে আরও র্যাফ। বেধড়ক লাঠি চালিয়ে বিক্ষুব্ধ জনতাকে ছত্রভঙ্গ করে পুলিশ। প্রায় ১৫ জনকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এর পরে এলাকায় টহল শুরু করে ধীরে ধীরে পরিস্থিতি আয়ত্তে আনে পুলিশ।
এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, পরিস্থিতি থমথমে। রাস্তা জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে ইটের টুকরো, ভাঙা কাচ। তখনও লাঠি হাতে মাঝেসাঝে জনতাকে ধাওয়াও করছে পুলিশ। হাওড়া কমিশনারেটের পুলিশ কমিশনার অজেয় রানাডে বলেন, “ডাম্পার-চালককে গ্রেফতার করা হয়েছে। আটক হয়েছে ডাম্পারটি। ইটের আঘাতে আমাদের কয়েক জন কর্মী জখম হন। উত্তেজিত জনতা পুলিশকে আক্রমণ করায় বাধ্য হয়ে পুলিশ লাঠি চালিয়েছে। কিন্তু বাসিন্দাদের অভিযোগ ঠিক নয়। ওই রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশ সব সময়ে থাকে। তবে ঘটনাটি দুর্ভাগ্যজনক।”