রিষড়ায় শেখ আলাউদ্দিনকে খুনের ঘটনায় এ বার নাম জড়াল সাংসদ অপরূপা পোদ্দারের স্বামী, রিষড়া পুরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর সাকির আলির। নিহতের স্ত্রী সালমা খাতুন বুধবার শ্রীরামপুরের এসডিপিও কামনাশিস সেনের দফতরে ওই অভিযোগ জমা দেন।
তবে, পুলিশকর্তারা জানিয়েছেন, অভিযোগটি আপাতত বিবেচিত হচ্ছে না। নিহতের এক আত্মীয়ের লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতেই তদন্ত শুরু হয়েছে। এ দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত চার জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তার মধ্যে সাংসদের এক প্রাক্তন গাড়ি-চালকও রয়েছেন। অভিযোগ ‘ভিত্তিহীন’ দাবি করে সাকির বলেন, ‘‘রাজনৈতিক ভাবে আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা হচ্ছে। পুলিশ সঠিক তদন্ত করলেই বুঝতে পারবে, আলাউদ্দিনের স্ত্রীকে দিয়ে কারা এই সব করাচ্ছে।’’
মঙ্গলবার সকালে রিষড়ার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের গাঁধী সড়কে বাড়ির অদূরে দুষ্কৃতীরা আলাউদ্দিনকে গুলি করে খুন করে। ওই এলাকাতেই পাশাপাশি তিনটি পুকুরে মাছচাষ করত আলাউদ্দিন। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জেনেছে, পুকুরের দখল নিয়ে আলাউদ্দিনের সঙ্গে কিছু দুষ্কৃতীর বিরোধ বেঁধেছিল। খুনের নেপথ্যে পুকুরের দখলদারিও থাকতে পারে বলে তদন্তকারীদের অনুমান। নিহতের বিরুদ্ধে হেরোইন পাচার, খুন, ডাকাতি-সহ নানা সমাজবিরোধীমূলক কাজকর্মেরর অভিযোগ রয়েছে পুলিশের খাতায়। কয়েক বছর আগে তার এক দাদা বোমা বিস্ফোরণে মারা যায়। অপর দাদা খুন হয়। সালাউদ্দিন টিটাগড়ে একটি খুনের মামলায় বছর সাতেক জেলও খেটছে।
লিখিত অভিযোগে সালমা জানান, মঙ্গলবার সকালে ঘটনার খবর পেয়ে মুদি দোকানে গিয়ে তিনি দেখেন স্বামী গুলিবিদ্ধ অবস্থায় মুখ থুবড়ে পড়ে রয়েছে। স্বামী তাকে জানায়, ২-৩টি মোটরবাইকে দুষ্কৃতীরা এসে গুলি করেছে। এর পিছনে সাকির আলির হাত রয়েছে। সালমার আরও অভিযোগ, ঘটনাস্থলে সাকিরের দেহরক্ষী এবং গাড়িচালক দাঁড়িয়ে থাকলেও আলাউদ্দিনকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে সাহায্য করেননি। ঘটনার সময় সাংসদ নিজে বাড়িতে থাকলেও আসেননি।
সালমা বলেন, ‘‘কয়েক মাস আগে সাকির মেরে স্বামীর হাত ভেঙে দেন এবং প্রাণে মারার হুমকি দেন। সম্প্রতি সাকিরের কয়েক জন আত্মীয় স্বামীকে শাসায়। তারপরেই এই ঘটনা। সাকির এবং তাঁর লোকজনই স্বামীকে খুন করেছে।’’ পক্ষান্তরে সাকিরের দাবি, ‘‘ময়লা ফেলা নিয়ে স্থানীয় সাফাইকর্মীদের সুপারভাইজারের সঙ্গে ওদের গণ্ডগোল হয়েছিল। আমি তখন কাউন্সিলর হিসেবে গিয়েছিলাম মাত্র। ওদের পরিবারের পরিচয় এলাকার সবাই জানে।’’
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, আলাউদ্দিন এক সময়ে সাকিরের ঘনিষ্ঠ ছিল। সতেরো বছর আগে একটি খুনের ঘটনায় দু’জনেরই নাম জড়ায়। ইদানীং দু’জনের বনিবনা ছিল না। সাকির অবশ্য আলাউদ্দিনের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতার কথা মানেননি। রিষড়ার উপ-পুরপ্রধান শেখ জাহিদ মনে করেন, পুলিশ ঠিকঠাক তদন্ত করলে অনেক রাঘব-বোয়াল ধরা পড়বে।