বেহাল: বৈদ্যবাটি পুরসভা পরিচালিত স্বাস্থ্যকেন্দ্র। নিজস্ব চিত্র
নামেই তালপুকুর, অথচ ঘটি ডোবে না! বৈদ্যবাটি পুরসভা পরিচালিত অপরূপা মাতৃসদন সম্পর্কে এই প্রবাদই খাটে বলে দাবি স্থানীয় বাসিন্দাদের। অভিযোগ, এখানে চিকিৎসা মেলে না। আশপাশের এলাকায় জ্বরের প্রকোপ। অথচ কোনও চিকিৎসার বন্দোবস্ত নেই এথানে। রোগীদের নিয়ে পরিজনদের ছুটতে হচ্ছে অন্যত্র।
রবিবার বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ দেখা গেল, স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি তালাবন্ধ। পরিষেবা নিয়ে জিজ্ঞাসা করার লোক পর্যন্ত মেলেনি। স্বাস্থ্যকেন্দ্রটির দুরবস্থার কথা পুরপ্রধান অরিন্দম গুঁইন অবশ্য মানতে চাননি। তাঁর দাবি, একটি সংস্থার মাধ্যমে স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি চালানো হচ্ছে। নিয়মিত ভাবে বহির্বিভাগে চিকিৎসক বসছেন। তিনি বলেন, ‘‘অন্তর্বিভাগ চালানোর চেষ্টাও করা হচ্ছে।’’
স্থানীয় বাসিন্দাদের অবশ্য প্রশ্ন, ওখানে যদি ভাল মানের চিকিৎসাই মিলবে, তা হলে জ্বরে এত মানুষ আক্রান্ত হওয়ার পরে কেন ‘ফিভার ক্লিনিক’ খোলা হল না সেখানে? কেন অন্য চিকিৎসাকেন্দ্রে নিয়ে যেতে হয় রোগীদের? কেন পড়ে নষ্ট হয় দামি যন্ত্রপাতি? উত্তর কিন্তু অজানাই।
১৮৬৯ সালে বৈদ্যবাটি পুরসভা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার এক দশক আগেই তৈরি হয় ওই চিকিৎসাকেন্দ্র। এক সময়ে সেটি পুরসভার নিয়ন্ত্রণে আসে। ২০০৩-০৪ সালে বেশ কয়েক বছর আগে স্থানীয় তৎকালীন তৃণমূল সাংসদ (অধুনা প্রয়াত) আকবর আলি খোন্দকার এলাকা উন্নয়ন তহবিলের ৫৬ লক্ষ টাকা দেন। তৎকালীন রাজ্যসভার সাংসদ, কংগ্রেসের জয়ন্ত ভট্টাচার্যও ৫ লক্ষ টাকা দেন। ওই টাকায় এক্স-রে, আল্ট্রাসোনোগ্রাফি মেশিন-সহ নানা যন্ত্রপাতি ও চিকিৎসা সরঞ্জাম কেনা হয়। নতুন করে অপারেশন থিয়েটার তৈরি হয়। ২০০৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে নতুন করে চিকিৎসাকেন্দ্রটি চালু হয়।
সেই সময়ে পুরসভার ক্ষমতায় ছিল তৃণমূল। কিছু দিনের মধ্যেই মাতৃসদনের টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ তুলে সিটু এবং আইএনটিইউসি আন্দোলনে নামে। বাম কাউন্সিলররাও সামিল হন। ২১ দিন পুরসভায় ধর্মঘট হয়। ডামাডোলের জেরে ওই বছরের জুন মাসে মাতৃসদন বন্ধ হয়ে যায়। তখন থেকে দীর্ঘ সাত বছর সেটি তালাবন্ধই ছিল।
২০১১ সালে তৃণমূল রাজ্যের ক্ষমতায় আসার পরে তৎকালীন পুরবোর্ডের উদ্যোগে ২৫ শয্যার ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্র পুনরায় চালু হয়। ওই বছরের জুলাই মাসে নতুন করে সেটির উদ্বোধন করেছিলেন স্থানীয় সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘অপরূপা মাতৃসদন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন’ নামে চিকিৎসকদের একটি ফোরাম তৈরি করা হয়। তারাই পুরসভার সঙ্গে যৌথভাবে স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি চালাবে বলে ঠিক হয়। ফোরামের তরফে মাস ছ’য়েক বহির্বিভাগে পরিষেবা দেওয়া হয়। পুরসভার তরফে অন্তর্বিভাগ চালানোর আশ্বাস দেওয়া হলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি।
চিকিৎসকদের একাংশের আক্ষেপ, তাঁদের দায়িত্ব দিয়েই দায় সেরেছিল পুরসভা। কাউন্সিলরদের তেমন আগ্রহ ছিল না। পড়ে থাকার ফলে পুরনো যন্ত্রপাতি কতটা কাজে লাগবে, তা নিয়েও চিকিৎসকরা সন্দিহান। ফোরামের সভাপতি দীপ্তেন চট্টোপাধ্যায় এবং সম্পাদক প্রদীপ কুমার দাসের বক্তব্য, স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি ভাল ভাবে চালাতে হলে পুর-কর্তৃপক্ষকে অনেক বেশী দায়িত্বশীল হতে হবে।