যানজটে আটকে গাড়ি। হেঁটেই গন্তব্যের দিকে পথচারীরা। — নিজস্ব চিত্র
পরিবহণ ব্যবস্থা নিয়ে গোলমাল অব্যাহত হুগলিতে। মাঝে-মধ্যেই দু’পক্ষের গাড়ি চালকদের মধ্যে গণ্ডগোল নেমে আসছে রাস্তায়। যেমনটা হল মঙ্গল এবং বুধবার সিঙ্গুরে। দুই অটোচালককে মারধরের অভিযোগ উঠল এক টোটো চালকের বিরুদ্ধে। প্রতিবাদে বুধবার সকালে রাস্তা অবরোধ করলেন টোটোচালকেরা। থানা-পুলিশ হল। সিঙ্গুরের দক্ষিণ গঙ্গাধরপুরে প্রায় সাড়ে ৩ ঘণ্টা অবরোধ চলে।
গোলমালের সূত্রপাত মঙ্গলবার রাতে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই দিন রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ শিয়াখালা-বারুইপাড়া রুটের একটি অটো শিয়াখালায় দাঁড়িয়েছিল। পিছনে একটি টোটো ছিল। যাত্রী তোলা নিয়ে দুই চালকের মধ্যে বচসা হয়। অটোচালকের কথা শুনে দুই যাত্রী টোটো থেকে নেমে অটোতে চেপে বসেন। দুই চালকেরই বাড়ি বারুইপাড়ায়। অটোচালক সুভাষ সাউ বারুইপাড়ায় ফিরলে ওই টোটোচালক তাঁকে মারধর করেন বলে অভিযোগ। তাঁকে বাঁচাতে গিয়ে অন্য এক অটো চালকও ওই টোটোচালকের হাতে প্রহৃত হন। রাতেই ওই টোটো চালকের বিরুদ্ধে পুলিশে ডায়েরি করেন প্রহৃত অটো চালক।
বিষয়টি চাউর হতেই অটোচালকদের মধ্যে ক্ষোভ দানা বাঁধে। বুধবার সকাল ৮টা নাগাদ তিনটি রুটের প্রায় ৪০ জন অটো চালক দক্ষিণ গঙ্গাধরপুরে শ্রীরামপুর-জাঙ্গিপাড়া ৩১ নম্বর রুট অবরোধ করেন। অবরোধকারীরা অবশ্য সব গাড়ি আটকাননি। শুধুমাত্র যাত্রীবাহি গাড়ি আটকানো হয়। ব্যস্ত সময়ে যাত্রীবাহি বহু গাড়ি দাঁড়িয়ে পড়ে। যাত্রীরা নাকাল হন। অবরোধকারী অটো চালকদের অভিযোগ, তাঁরা নির্দিষ্ট পারমিট অনুযায়ী গাড়ি চালান। সরকারকে এই বাবদ করও দিতে হয় তাঁদের। কিন্তু যত্রতত্র টোটো চলাচল করায় তাঁদের উপার্জন অনেক কমে গিয়েছে। অটোর রুটে টোটো চলাচল বন্ধের দাবি জানান তাঁরা।
অবরোধের খবর পেয়ে বড়া বিট হাউজের পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। পুলিশের আশ্বাসে বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ অবরোধ ওঠে। পুলিশ জানায়, ওই টোটোচালককে আটক করা হয়েছিল। জেলা পুলিশের এক অফিসার জানান, দু’পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সুষ্ঠু সমাধানের চেষ্টা করা হবে। যাত্রীদের দাবি, প্রশাসনের তরফে গাড়ি চলাচল নিয়ে সুষ্ঠু ব্যবস্থা করা হোক। না হলে দু’পক্ষের ঝামেলায় মাঝেমধ্যেই যাত্রীদের হয়রান হতে হচ্ছে।
টোটো, বেআইনি অটো চলাচল বন্ধের দাবিতে বেশ কিছু দিন ধরেই বৈধ রুটের অটো বা বাসমালিকদের আন্দোলন চলছে। তাঁদের অভিযোগ, দিনের পর দিন প্রশাসনের নানা স্তরে সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসনের শীর্ষ আধিকারিক থেকে রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী সকলেই পরিবহণ ব্যবস্থায় নিয়ন্ত্রণ এবং বেআইনি গাড়ি বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কিন্তু পরিস্থিতি বদলায়নি। সম্প্রতি খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানিয়ে চিঠি দিয়ে এসেছেন হুগলি জেলা বাস মালিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা। সুষ্ঠু পরিবহণ ব্যবস্থা নিয়ে প্রশাসন কবে ব্যবস্থা নেয় সেটাই দেখার।