করোনা আবহেও অবাধ জনসমাগম মহকুমাশাসক দফতরের সামনে। ছবি: তাপস ঘোষ
সচেতনতা ফিরছে না কিছুতেই!
চন্দননগরের ১২ নম্বর ওয়ার্ডের একাংশ ‘গণ্ডিবদ্ধ’ এলাকা। তার মধ্যেই পড়ছে উর্দিবাজারের কিছুটা। সেখানে পুলিশের ব্যারিকেড থাকা সত্ত্বেও সোমবার দুপুরে তার পাশ দিয়েই বেরোনোর চেষ্টা করছিলেন এক প্রৌঢ়। গণ্ডিবদ্ধ এলাকার কথা বলে সেখানে দাঁড়ানো পুরকর্মী তাঁকে বেরোতে নিষেধ করেন। কিন্তু প্রৌঢ় নাছোড়বান্দা। একপ্রকার জোর করেই বেরিয়ে গেলেন।
ওই ওয়ার্ডেই পড়ছে মহকুমাশাসকের দফতর। এ দিনই দফতরের এক ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটের মৃত্যু হয়েছে করোনায়। তারপরেও এক শ্রেণির মানুষের অ-সচেতনতার ছবি সামনে আসায় গোটা ওয়ার্ড জুড়ে সচেতনতা-বিধি মানাতে কড়া প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি উঠল। সেই দাবি তুললেন এলাকাবাসীরই একাংশ।
ওই ওয়ার্ডের বাসিন্দা, বৃদ্ধ কুণাল সেন বলেন, ‘‘যা পরিস্থিতি, তাতে পুরো ওয়ার্ডেই কড়া নজরদারি করুক প্রশাসন। না হলে করোনার বিপদ তো বাড়তেই থাকবে। এ নিয়ে প্রশাসনের কাছে সামাজিক সংগঠনের তরফে একাধিক বার আবেদন জানানো হয়েছে।’’
শহরের একটি ‘গণ্ডিবদ্ধ’ এলাকার যেখানে এই হাল, সেখানে বাকি তিনটি এবং তার বাইরের এলাকার পরিস্থিতি সহজেই অনুমেয়, বলছেন পরিবেশকর্মীরা। তাঁরাও কড়া পদক্ষেপের দাবি তুলেছেন। এক শ্রেণির লোক বিধিনিষেধের তোয়াক্কা না-করায় প্রশাসনের আধিকারিকরাও বিরক্ত।
পুর কর্তৃপক্ষের দাবি, মানুষকে যাতে বাড়ি থেকে বেরোতে না হয়, তার জন্য যাবতীয় ব্যবস্থা করা হয়েছে। শহরের চারটি গণ্ডিবদ্ধ এলাকার জন্য দু’টি দল করা হয়েছে। পুরসভার স্বাস্থ্যকর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে জ্বরের খবর নিচ্ছেন। দেহের তাপমাত্রা পরীক্ষা করা হচ্ছে। কারও মধ্যে সংক্রমণের লক্ষণ থাকলে হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে ভ্যান যাচ্ছে এলাকায়। কারও কিছু প্রয়োজন কিনা, জানতে পুরকর্মীরা এলাকায় যাচ্ছেন। লাগাতার প্রচার চলছে। তা সত্বেও কিছু লোক ইচ্ছেমতো বেরিয়ে পড়ছেন।
পুর-কমিশনার স্বপন কুণ্ডু বলেন, ‘‘আমাদের দফতরের কর্মী ঘুরছেন। কেউ মাস্ক না-পরে বেরোলে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কোনও বয়স্ক মানুষ ভুল করে মাস্কবিহীন অবস্থায় বেরোলে তাঁদের মাস্ক দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু ২৪ ঘণ্টা কী এই ভাবে নজরদারি সম্ভব! কিছু মানুষকে হাজারো চেষ্টা করেও বোঝানো যাচ্ছে না।’’
পুলিশ প্রশাসন এবং পুরসভার চিন্তা বেশি ১২ নম্বর ওয়ার্ডকে নিয়েই। মহকুমাশসকের দফতর ছাড়াও ওই ওয়ার্ডে পুলিশ প্রশাসনের বিভিন্ন দফতর রয়েছে। পাশের স্ট্র্যান্ডে দিনভর মানুষের আনাগোনা লেগে থাকে। অনেকেই আসেন স্রেফ সময় কাটাতে। এখনও অনেককে দেখা যাচ্ছে মাস্কবিহীন অবস্থায়। কারও মাস্ক নামানো থাকে থুতনিতে। এই ভাবে নিয়ম ভেঙে অবাধ ঘোরাফেরায় স্থানীয় বাসিন্দারা আশঙ্কিত। উটকো লোকজনের যাতায়াত নিয়ন্ত্রণের দাবি জানাচ্ছেন তাঁরা।
হুগলিতে প্রথম যাঁর করোনা ধরা পড়ে, তিনি এ শহরের বড়বাজারের একটি নার্সিংহোমে ভর্তি ছিলেন। নার্সিংহোমটি সিল করে দেওয়া হয়। পরে আশপাশে বেশ কিছু করোনা রোগীর সন্ধান মেলে। সংক্রমিতের সংস্পর্শে আসায় একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক স্যানিটাইজ় করতে হয়। মাসখানেক আগে উর্দিবাজারে বেশ কিছু বাসিন্দার করোনা সংক্রমণ হয়েছিল। সংক্রমণ রুখতে তখন প্রশাসনের তরফে এলাকা ঘিরে দেওয়া হয়েছিল।