Coronavirus

রক্ত দিলেন শ্রমিকেরা, উদ্বুদ্ধ হলেন গ্রামবাসী

লকডাউনে ছোটবড় সব শিল্প-কারখানাই দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল। অর্থসঙ্কট এবং ভবিষ্যতের চিন্তায় ঘুম উবে যায় বহু শ্রমিকের। সেই দুশ্চিন্তাকে সরিয়ে রেখে হঠাৎ এমন উদ্যোগ?

Advertisement

প্রকাশ পাল

শ্রীরামপুর শেষ আপডেট: ১০ মে ২০২০ ০১:২৫
Share:

বাঁকুড়ার কোতুলপুর ব্লকের লাউগ্রামের একটি ছোট ইট কারখানায় চলছে রক্তদান। —নিজস্ব চিত্র

এই কঠিন সময়ে অসহায়তায় ওঁদের হাহাকার শোনা যাচ্ছে সর্বত্র। ওঁরা অবশ্য বিপদে বহু মানুষের সহায় হলেন!

Advertisement

ওঁরা— হুগলির সীমানাঘেঁষা বাঁকুড়ার কোতুলপুর ব্লকের লাউগ্রামের একটি ছোট ইট কারখানার শ্রমিক। তাঁদেরই উদ্যোগে শনিবার ওই কারখানায় হয়ে গেল রক্তদান শিবির। তাঁরা তো রক্ত দিয়েছেনই, তাঁদের কথায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সপরিবারে এসেছিলেন বেশ কিছু গ্রামবাসীও।

ওই অজগাঁয়ের কারখানাটি বেলঘরিয়ার বাসিন্দা চন্দন রায়ের। কারখানা খোলার সরকারি ছাড়পত্র মিলেছে। কিন্তু শনিবার সেখানে কোনও মেশিন চলেনি। পালা করে চলেছে রক্তদান। শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখেই।

Advertisement

লকডাউনে ছোটবড় সব শিল্প-কারখানাই দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল। অর্থসঙ্কট এবং ভবিষ্যতের চিন্তায় ঘুম উবে যায় বহু শ্রমিকের। সেই দুশ্চিন্তাকে সরিয়ে রেখে হঠাৎ এমন উদ্যোগ?

কারখানা-মালিক বলেন, ‘‘গত সোমবার শ্রমিকেরা এই দুঃসময়ে মানুষের জন্য কিছু করতে চেয়ে আমার কাছে আর্জি জানান। আমি রক্তদান শিবিরের কথা বলতেই ওঁরা একবাক্যে রাজি। নিজেদের বাড়ির লোক এবং গ্রামবাসীদেরও বুঝিয়ে রাজি করিয়ে ফেলেন।’’

কারখানার মেশিন অপারেটর অমিত রায়ের দু’বছর আগে কনভেয়ার বেল্টে হাত ভেঙেছিল। শ্রমজীবী হাসপাতালে অস্ত্রোপচার হয়। এক বোতল রক্ত দিতে হয়। শ্রমিকদের মধ্যে এ দিনের শিবিরের তিনি অন্যতম উদ্যোক্তা। মোবাইলে তিনি বলেন, ‘‘দুর্ঘটনার পরে রক্তের গুরুত্ব আরও বেশি করে বুঝি। রক্ত দিয়ে আনন্দ পেলাম। বউ আর ভাইও এক কথায় রক্ত দিয়েছে। আমাদের রক্তে কারও প্রাণ বাঁচবে, এর থেকে ভাল আর কী হতে পারে! ভবিষ্যতে আবার দেব।’’

এ দিন শ্রীরামপুরের শ্রমজীবী হাসপাতাল রক্ত সংগ্রহ করে। চন্দন জানান, প্রথম রক্ত দেন স্থানীয় পঞ্চায়েতের উপপ্রধান বিধান মণ্ডল। তারপর একে একে শ্রমিকদের মধ্যে প্রসেনজিৎ, অরুণ, অমিত, সমিত, ইন্দ্রজিৎ-সহ ১০ জন রক্ত দেন। শ্রীকান্ত রায়, মিলন দিগর, বুলাম রায়, বাবলু মুর্মু, রঞ্জিত রায় প্রমুখ গ্রামবাসীও রক্ত দিয়েছেন। শিবিরে এসেছিলেন পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মোজাফ্‌ফর মিদ্দা।

শ্রমজীবী হাসপাতালের কার্যকরী সভাপতি ফণিগোপাল ভট্টাচার্য বন্ধ কারখানার শ্রমিক। লকডাউনে বিভিন্ন জায়গায় যে হারে রক্তদান শিবির বাতিল হচ্ছে তাতে রক্তসঙ্কট মোকাবিলায় এই উদ্যোগ কাজে লাগবে বলে তিনি মনে করেন। তাঁর কথায়, ‘‘ওঁরা অনন্য নজির রাখলেন। আমাদের রক্তের বন্ধনে বাঁধলেন।’’

মালিক চন্দন মাঝেমধ্যে কারখানায় আসেন। লকডাউনের সময় থেকে তিনি অবশ্য এখানেই আছেন। শ্রমিকেরা জানান, লকডাউন-পর্বে উৎপাদন বন্ধ থাকলেও চন্দন পাশে দাঁড়ানোয় তাঁদের সংসার চলে যাচ্ছে। মজুত কাঁচামালে আগামী চার-পাঁচ দিন উৎপাদন‌ চলবে। অমিত জানিয়ে দেন, কাজের মাঝেই যাতে বছরে একবার কারখানার শেডে রক্তদান শিবিরের আয়োজন করা যায়, মালিককে সেই অনুরোধ করবেন।

অন্য শ্রমিকদের গলায় এক সুর। বিপদে মানুষ মানুষের পাশে না দাঁড়ালে কে দাঁড়াবে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন