সোনার গয়না ফেরাল চোর, হতবাক দম্পতি 

নেহাত মজা করেই এমন কথা শোনালেও চুরি যাওয়া গয়না যে ভাবে তাঁরা ফেরত পেয়েছেন,  সেটাকে আর মজা বলা যাচ্ছে না। বরং বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গিয়েছেন ভদ্রেশ্বর থানার মাধবপুরের ঘোষ দম্পতি। চোরদের এমন কাণ্ডে কিছুটা হলেও অবাক পুলিশও।

Advertisement

তাপস ঘোষ

ভদ্রেশ্বর শেষ আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০১৭ ০২:৪১
Share:

প্রাপ্তি: সোনার গয়না দেখাচ্ছেন পূর্ণিমাদেবী। নিজস্ব চিত্র

খবরটা শোনার পর প্রতিবেশীদের অনেকেই তাঁদের বলছেন, ‘এ বার লটারির টিকিট কাটুন।’

Advertisement

নেহাত মজা করেই এমন কথা শোনালেও চুরি যাওয়া গয়না যে ভাবে তাঁরা ফেরত পেয়েছেন, সেটাকে আর মজা বলা যাচ্ছে না। বরং বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গিয়েছেন ভদ্রেশ্বর থানার মাধবপুরের ঘোষ দম্পতি। চোরদের এমন কাণ্ডে কিছুটা হলেও অবাক পুলিশও।

ঠিক কী ঘটেছিল ঘোষ দম্পতির সঙ্গে?

Advertisement

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মাধবপুরের বাসিন্দা মদন ঘোষের চালের দোকান রয়েছে। দোকান থেকে তাঁর ফিরতে রাত হয়। গত রবিবার বিকেল চারটে নাগাদ রোজকার মতোই প্রতিবেশী আনন্দ ঘোষের বোনের সঙ্গে হাঁটতে বেরিয়েছিলেন মদনবাবুর স্ত্রী পূর্ণিমাদেবী। প্রতিদিনের মতো আনন্দবাবুর বাড়িতেই বাড়ির চাবি রেখে যান। ঘণ্টাখানেক পরে ফিরে চাবি আনতে গেলে সেটা আর পাননি তিনি। বোন হাঁটতে গেলেও বাড়িতেই থাকতেন আনন্দবাবু। তাঁর বক্তব্য, রাস্তার উপরেই দু’টি বাড়ি। ওঁরা হাঁটতে বেরোলে ফেরার কথা ভেবে দরজা ভেজানোই থাকে। তিনি জানান, রবিবারও পূর্ণিমাদেবী হাঁটতে যাওয়ার আগে তাঁর ঘরে ফ্রিজের উপরে চাবি রেখে যান। মাঝখানে তিনি একবার শৌচাগারে গিয়েছিলেন। ফিরে দেখেন দরজা খোলা। ভেবেছিলেন হাওয়ায় খুলে গিয়েছে। ইতিমধ্যেই তাঁর বোন ও পূর্ণিমাদেবী ফিরে আসেন। চাবি না পাওয়ায় পূর্ণিমাদেবী স্বামীকে খবর দেন। তিনি এসে ডুপ্লিকেট চাবি দিয়ে দরজা খুলতে গিয়ে দেখেন তা ভিতর থেকে বন্ধ। এর পরই তাঁরা দেখতে পান, বাড়ির পিছনের দিকে যে দরজা রয়েছে তা খোলা। পূর্ণিমাদেবী বলেন, ‘‘ওই দরজা দিয়ে ভিতরে ঢুকে দেখি ঘরের আলমারি খোলা। ভিতর থেকে শ’পাঁচেক টাকা, গয়নাগাটি উধাও।’’ তাঁর কথায়, ‘‘চুরি হওয়ায় হইচই শুনে পাশেই থাকা কাউন্সিলর পার্থ চক্রবর্তী বেরিয়ে আসেন। তিনিই পুলিশ খবর দেন।’’

পূর্ণিমাদেবী বলেন, ‘‘টাকার থেকেও বেশি দুঃখ হচ্ছিল গয়নাগুলোর জন্য। কারণ, কিছুদিন আগে মেয়ে এসে সেগুলো রেখে গিয়েছিল।’’ পুলিশ তদন্তের আশ্বাস দিলেও গয়না ফেরত পাওয়ার আশা একেবারেই ছেড়ে দিয়েছিলেন ঘোষ দম্পতি। কিন্তু সোমবার সকালটা ছিল তাঁদের হতবাক হওয়ার পালা। সকাল ৬টা নাগাদ মদনবাবু ঘুম থেকে উঠে বাইরে বেরোতেই দেখেন দরজার সামনে একটা বড়সড় কাগজের মোড়ক পড়ে। কৌতূহলে সেটি খুলতেই চক্ষু চড়কগাছ তাঁর। মদনবাবুর কথায়, ‘‘বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যাই। সম্বিৎ ফিরতে দেখি আমাদের চুরি যাওয়া গয়নাগুলো। সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবেশীদের ডাকি।’’ খবর পেয়ে আসেন কাউন্সিলারও। চুরি করেও এ ভাবে চোরের গয়না ফেরতের কারণ নিয়ে যখন নানা জল্পনা চলছে, তখন মেলে একটা সূত্র।

রবিবার চুরির ঘটনার পর ঘটনাস্থলে এসেছিলেন কাউন্সিলর পার্থবাবু। মদনবাবু বলেন, ‘‘এ ভাবে চুরি হয়েছে দেখে তাঁর সন্দেহ হয় , এটা কোনও পেশাদর চোরের কাজ নয়। আশপাশের কেউ হয়তো এর সঙ্গে জড়িত। তিনি হুমকি দিয়ে বলেছিলেন, ‘পুরপ্রধান খুনের ঘটনায় যে ভাবে পুলিশ ভিন রাজ্য থেকে অপরাধীদের ধরেছে, সে ভাবেই ঠিক চোর খুঁজে বের করবে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘সম্ভবত তাতেই চোর ভয় পেয়েছিল। টাকার পরিমাণ সামান্য হলেও গয়নাগুলো আর হজম করতে পারেনি।’’ একই মত পার্থবাবুরও। তিনি বলেন, ‘‘এখন তো মনে হচ্ছে যে সন্দেহ করা হয়েছিল সেটাই ঠিক। এলাকারই কেউ জড়িত। তাই ওই হুমকি শুনে ভয় পেয়ে গয়না ফেরত দিয়েছে।’’ যদিও গয়না ফেরতের পর পুলিশের বক্তব্য চোরকে ঠিক খুঁজে বের করবেন তারা।

আর গয়না ফেরত পেয়ে পূর্ণিমাদেবীর প্রতিক্রিয়া, ‘‘একটা বিস্ময়কর অভিজ্ঞতা। স্মৃতিও বটে। মেয়ের কাছে মুখরক্ষা হল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন