ফের মৃত্যু সরকারি হোমের আরও এক আবাসিকের

হাসপাতালে জঞ্জাল, ক্ষোভ জেলাশাসকের

প্রত্যেকেই তাঁর কাছে খাবারের মান, পোশাক, বিছানার অপরিচ্ছন্ন চাদর নিয়ে নানা অভিযোগ জানান।

Advertisement

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়

উত্তরপাড়া শেষ আপডেট: ২৬ অক্টোবর ২০১৭ ০০:৩৭
Share:

উত্তরপাড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতাল চত্বরে ঘুরছে শুয়োর।

দেখতে গিয়েছিলেন অব্যবস্থার শিকার অসুস্থ কয়েকজন মহিলাকে। আর সেটা দেখতে গিয়ে সামনে এল আরও এক অব্যবস্থারই ছবি। ঊর্দি পরা এক পুলিশকর্মীকে দেখা গেল অবৈধভাবে তৈরি একটি দোকান থেকে খাবার কিনে খেতে।

Advertisement

পরিদর্শক হুগলির জেলাশাসক সঞ্জয় বনশল। আর ঘটনাস্থল উত্তরপাড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতাল।

মহিলা ভবঘুরেদের উত্তরপাড়ার সরকারি হোমে গত তিন-চারদিন ধরে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। প্রাথমিকভাবে চিকিৎসকদের অনুমান, খাদ্যে বিষক্রিয়ার জেরেই এমন ঘটনা। বুধবারও বমি-পেট ব্যথার উপসর্গ নিয়ে দুই আবাসিক ভর্তি হয়েছেন উত্তরপাড়া জেনারেল হাসপাতালে। এ দিন মৃত্যু হয়েছে আরও একজনের। এই নিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৬। আর অসুস্থদের দেখতে হাসপাতালে গিয়ে চক্ষু চড়কগাছ জেলাশাসকের।

Advertisement

হাসপাতালে ঢোকার মুখে আস্তাকুঁড়ের পাহাড় দেখে বিরক্তি প্রকাশ করেন তিনি। হাসপাতালের দেওয়ালের সর্বত্র পানের পিক, কফ ভর্তি। অপরিচ্ছন্ন হাসপাতালের পাশাপাশি কেন হাসপাতাল চত্বরে বাইরের গাড়ি ভিড় করে দাঁড়িয়ে রয়েছে, তাও হাসপাতাল সুপারের কাছে জানতে চান তিনি। হাসপাতালের ভিতরে সরকারি সুলভ মূল্যের ওষুধের দোকানের হাল-হকিকত খতিয়ে দেখেন। জানতে চান, প্রয়োজনীয় ওষুধৃ দোকানে আছে কি না। হাসপাতালের কয়েকজন রোগীর সঙ্গেও কথা বলে তিনি। প্রত্যেকেই তাঁর কাছে খাবারের মান, পোশাক, বিছানার অপরিচ্ছন্ন চাদর নিয়ে নানা অভিযোগ জানান।

এরপরই তাঁর নজর যায় দোকানের বাইরে ডাঁই করে ফেলে রাখা খালি ওষুধের প্যাকেটের উপর। বিরক্তিতে দোকানের মালিককে ধমকে বলেন, ‘‘আপনারাই যদি দোকানের পাশে এভাবে নোংরা ফেলে রাখেন, তাহলে পরিষ্কার করবে কে? আর কারাই বা মানুষকে সচেতন করবে?’’ হাপাতালের পরিদর্শনের ফাঁকেই তাঁর চোখে পড়ে একটি বেআইনি দোকান থেকে এক পুলিশ কর্মী জলখাবার সারছেন। ওই পুলিশ কর্মীকে ডেকে নেন তাঁর সটান প্রশ্ন, ‘‘আপনি সরকারি পোষাক পরেই ওই বেআইনি দোকানে খান? তাহলে আর লোককে আমরা কি বোঝাই বলুন তো! আর কারাই বা এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে?’’ জেলাশাসকের কথা শুনে ওই পুলিশ কর্মী রীতিমতো অপ্রস্তুত।

হাসপাতাল পরিদর্শনে জেলাশাসক।

জেলাশাসকের হাসপাতাল পরিদর্শনের পুরোটা সময়ই তাঁর সঙ্গে ছিলেন হাসপাতাল সুপার দেবাশিস চট্টোপাধ্যায়। হাসপাতালের ভিতর অবৈধ পার্কিং নিয়ে সঞ্জয় বনশলের নির্দেশ, ‘‘হাসপাতালের ভিতরে বেআইনি গাড়ির পার্কিং না সরালে, ওইসব গাড়ির চাকার হাওয়া খুলে দিতে হবে। প্রয়োজনে পুলিশকে ধারাবাহিকভাবে অভিযান চালাতে হবে।’’

হোমের অসুস্থ আবাসিকদের সঙ্গে কথা বলেন জেলাশাসক। জানা গিয়েছে, হোমে যে খাবার আবাসিকদের সরবরাহ করা হয়েছিল, কোনওভাবে সেখান থেকেই বিষক্রিয়া হয়। মৃতদেহগুলির ময়নাতদন্তের রিপোর্ট থেকেই আবাসিকদের মৃত্যুর কারণ জানা যাবে। এ দিন হাসপাতালের পরিষেবা নিয়ে এত ক্ষোভ প্রকাশ করলেও সরকারি হোমে পাঁচ আবাসিকের মৃত্যু নিয়ে মুখ খুলতে চাননি জেলাশাসক। অসুস্থ মহিলাদের সঙ্গে সাংবাদিকদের কথা বলতে বাধা দেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। বুধবার রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের প্রতিমন্ত্রী শশী পাঁজা বলেন, ‘‘আবাসিকদের মৃত্যুর ঘটনায় প্রশাসনিক স্তরে যা যা করণীয় তার সবই করা হচ্ছে। এর বেশি কিছু এখনই বলা সম্ভব নয়।’’

ছবি: দীপঙ্কর দে

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন