গাছ কাটতে কাটারিই ভরসা হাওড়ার

একই অবস্থা বালি, বেলুড়, লিলুয়া-সহ জিটি রোডে। বিভিন্ন জায়গায় গাছ পড়ে থাকলেও পুরকর্মীদের দেখা মেলেনি। কারণ একটি মাত্র গাড়িতে চেপে গাছ কাটতে বেরিয়েছেন বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের কর্মীরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০১৮ ০৭:৩২
Share:

এ ভাবেই বাঁশ দিয়ে ঠেকিয়ে রাখা হয়েছে ভেঙে পড়া বাতিস্তম্ভ। বুধবার, হাওড়ার বৈষ্ণবপাড়ায়। নিজস্ব চিত্র

হাওড়া পুরসভার বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর যে আসলে নিধিরাম সর্দার, বৈশাখের প্রথম বড় ঝড়ই তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল।

Advertisement

ঝড়ের দাপটে লন্ডভন্ড শহরকে প্রায় ২৪ ঘণ্টা পরেও আগের চেহারায় ফেরাতে পারলেন না পুরসভার বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের কর্মীরা। উপড়ে যাওয়া গাছ কাটতে বৈদ্যুতিক করাত-সহ আধুনিক যন্ত্রপাতির বদলে দা, কাটারি, হাতকরাত ও দড়ি নিয়েই মঙ্গলবার রাতে কাজে নেমেছিলেন তাঁরা। ফলে সেই কাজ শেষ করা যায়নি বুধবার রাতেও। এ দিনও হাওড়ার বিভিন্ন এলাকায় পড়ে ছিল ভেঙে পড়া বহু গাছ। মেয়র রথীন চক্রবর্তী পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে করণীয় ঠিক করতে পারিষদদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। সেখানে ঠিক হয়, বিপর্যয়
মোকাবিলা দফতরের জন্য রাজ্য সরকারের থেকে আর্থিক সাহায্য নিয়ে যন্ত্রপাতি কেনা হবে এবং পুরকর্মীদের প্রশিক্ষণ দেবে হাওড়া সিটি পুলিশ।

হাওড়া পুরসভা সূত্রের খবর, মঙ্গলবার রাতের ঝড়ে হাওড়া ও বালি মিলিয়ে প্রায় তিনশো গাছ পড়ে গিয়েছে। বহু জায়গায় ধসে পড়েছে পাঁচিল। বেনারস রোডের বেলগাছিয়ায় একটি বড় গাছ ভেঙে পড়লে পাঁচটি বাড়ি মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর মধ্যে একটি বাড়ি পুরো মাটিতে মিশে গিয়েছে। ওই ঘটনায় গৃহকর্তা সুনীল পাঠক ও তাঁর স্ত্রী শর্মিলা পাঠক গুরুতর আহত। তাঁদের হাওড়া জেলা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। শর্মিলার মাথায় আটটি সেলাই পড়েছে। সুনীলবাবুর ভাই অনিল ঠাকুর বলেন, ‘‘কাল রাতে আমি বাড়ি ছিলাম না। দাদা-বৌদি ছিলেন। ওঁদের উপরে গাছটা পড়ে। তার পরে পুরসভাকে বারবার ফোন করা হলেও গাছ কাটার লোক আসেনি।’’

Advertisement

একই অবস্থা বালি, বেলুড়, লিলুয়া-সহ জিটি রোডে। বিভিন্ন জায়গায় গাছ পড়ে থাকলেও পুরকর্মীদের দেখা মেলেনি। কারণ একটি মাত্র গাড়িতে চেপে গাছ কাটতে বেরিয়েছেন বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের কর্মীরা। অনেক জায়গায় গাছ পড়ে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে নীচে পড়ে থাকলেও এ দিন বিকেল পর্যন্ত সিইএসসি কর্মীদের দেখা মেলেনি বলে অভিযোগ। সেই কারণে বুধবার ভোর পাঁচটা পর্যন্ত বন্ধ ছিল জিটি রোড।

বালির দেওয়ানগাজি, বাদামতলা, রাসবাড়ি এলাকায় জিটি রোড কার্যত পরিণত হয়েছে জঙ্গলের রাস্তায়। এলাকার ভিতরের রাস্তাঘাটেরও একই অবস্থা। বেলুড় মঠের সামনের রাস্তা, রাসবাড়ি, তারাচাঁদ গাঙ্গুলি স্ট্রিট-সহ বেশ কয়েকটি পাড়ার রাস্তাও বন্ধ হয়ে গিয়েছে গাছ পড়ে। আবার গাছ না সরানোয় বিদ্যুতের কাজেও সমস্যা হয়েছে সিইএসসি কর্মীদের। বালির দিকে গভীর রাতে বিদ্যুৎ এলেও বেলুড় ও লিলুয়ায় মঙ্গলবার সকালেও বিদ্যুৎ ছিল না। বুধবার রাতেও রাস্তায় গাছ পড়ে থাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে ছিল বেলুড়ের পালঘাট ও ঘোষেস লেন এলাকায়। ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী গাছ সরানোর দাবিতে রাত আটটা নাগাদ লালবাবা কলেজের সামনে জিটি রোড অবরোধ করেন। প্রায় আধ ঘণ্টা অবরোধ চলার পরে পুলিশ বড় ক্রেন নিয়ে গিয়ে গাছ সরিয়ে দিলে অবরোধ ওঠে।

ঝড়ের দাপটে পুরসভার ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে পাঁচটি বাতিস্তম্ভ নীলরতন মুখার্জি লেন ও দয়াল ব্যানার্জি লেনের মোড়ে বিপজ্জনক ভাবে পড়ে থাকলেও এ দিন বিকেল পর্যন্ত তা সরানো হয়নি। এলাকার কাউন্সিলর তথা মেয়র পারিষদ শ্যামল মিত্র বলেন, ‘‘কাল রাত থেকে সিইএসসি-কে ফোন করছি। কিন্তু কেউ ধরছে না। যে কোনও সময়ে দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। তাই আমরা রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছি।’’

এ দিন সিইএসসি-র আধিকারিকেরা বেলুড় ও লিলুয়া ঘুরে দেখেন। তাঁরা জানান, গোটা হাওড়া মিলিয়ে প্রায় ৪০টি জায়গায় তার ছিঁড়েছে। চারটি বাতিস্তম্ভ ভেঙেছে। দু’টি ট্রান্সফর্মারে সমস্যা হয়েছে। এ সব কারণে একসঙ্গে সব মেরামত করা যাচ্ছে না। তবে দ্রুত বিদুৎ সংযোগ দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন