Cyclone Amphan

লকডাউনে বিপন্ন চাষিকে খাঁড়ার ঘা আমপানের, ধান বাঁচাতে মরিয়া লড়াই

আরামবাগ মহকুমা বন্যাপ্রবণ হওয়ায় অধিকাংশ জায়গাতেই বোরো চাষের উপর ভরসা করেন কৃষিজীবীরা

Advertisement

পীযূষ নন্দী

আরামবাগ শেষ আপডেট: ২৩ মে ২০২০ ০৪:৩৩
Share:

ঝড়বৃষ্টিতে নষ্ট হওয়া বোরো ধান বাঁচানোর চেষ্টা পান্ডুয়ার বেড়ুই গ্রামে। ছবি: সুশান্ত সরকার

যে সব জমির ধান কাটা হয়নি, তা মাটিতে লেপটে গিয়েছে। সেই ধান উদ্ধারের আশা ছেড়ে দিয়েছেন তাঁরা। আপাতত জলে ডুবে থাকা কাটা ধান বাঁচাতে মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছেন আরামবাগ মহকুমার চাষিরা।

Advertisement

আরামবাগ মহকুমা বন্যাপ্রবণ হওয়ায় অধিকাংশ জায়গাতেই বোরো চাষের উপর ভরসা করেন কৃষিজীবীরা। আমপানের আগে বোরো ধান অনেকটাই ঘরে তুলতে পেরেছিলেন চাষিরা। কিন্তু ঝড়ের ধাক্কায় বাকি ধান কতটা ঘরে তোলা যাবে, তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন চাষিরা। সংশয় প্রকাশ করেছে মহকুমা কৃষি দফতরও। মহকুমা কৃষি আধিকারিক সজল ঘোষ বলেন, ‘‘মহকুমায় বোরো চাষের এলাকা ২১ হাজার ৭৩০ হেক্টর। এর মধ্যে ১৯ হাজার ৫২ হেক্টর জমির ধান উঠে গেলেও আলু চাষের পর যে ২৬৭৮ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছিল তা নষ্টই হয়েছে মনে হচ্ছে।’’

ওই ২৬৭৮ হেক্টর এলাকার ধান উদ্ধার করতেই চেষ্টা চালাচ্ছেন চাষিরা। যে সব জমির ধান কাটা

Advertisement

হয়নি, সেই জমির জল কমাতে এক-দেড় কিমি নালা কেটে নিকাশির চেষ্টা হচ্ছে। আর যে সব জমির কাটা ধান জলে ভাসছে, তা ছেঁকে তুলে ঝাড়াই-বাছাই চলছে খানাকুলের পোল, পাতুল, গণেশবাজার, কাঁটাপুকুর, গোঘাটের কুমুড়শা, ভাদুর, নকুন্ডা, শ্যাওড়া, আরামবাগের বাতানল, তিরোল, সালেপুর, গৌরহাটি— সর্বত্রই।

খানাকুলের কাঁটাপুকুরের চাষি শেখ সালেকিন বলেন, “এখানে আমন চাষ হয় না। বোরো ধানের উপরই আমরা নির্ভরশীল। ধানদেনা করে ১৪ বিঘা জমিতে বোরো চাষ করেছিলাম। বিঘা পাঁচেক জমির ধান কেটে মড়াইয়ে তুলতে পেরেছি। বাকি ৯ বিঘা জমির ধান সবই প্রায় নষ্ট। শেষ হয়ে গেলাম।” একই রকম হাহাকার করেছেন পাতুল গ্রামের সুশান্ত দলুই, গোঘাটের নকুন্ডার বিমল কুণ্ডু, আরামবাগের বাতানলের মানিক মণ্ডল প্রমুখ চাষি।

জলে ডোবা ধান বাঁচাতে প্রচুর হয়রানি সত্ত্বেও কেউই হাল ছাড়ছেন না। জমি থেকে ধান ছেঁকে সঙ্গে সঙ্গে যন্ত্রে ঝাড়াই করে বিক্রিও করে দিচ্ছেন তাঁরা। চাষিরা জানান, ওই ধান রেখে দিলেই কল হয়ে যাবে। ধানের রংও বদলে যাবে। দাম মিলবে না। বাজারে এখন এক মণ (৪০ কেজি) বোরো ধানের দাম ৭৫০ টাকা। জলে ভেজা ধান বিক্রি হচ্ছে ৫০০-৫৫০ টাকায়।

চাষিদের বক্তব্য, বোরো ধান রোপণ থেকে ঘরে তোলা পর্যন্ত বিঘাপিছু সাধারণভাবে প্রায় ৯ হাজার টাকা খরচ হয়। এ বার আমপানের আগেও কয়েকবার বৃষ্টি এবং ঝড়ে ধানের ক্ষতি হয়েছিল। ধান শুকোতে বাড়তি খরচও হয়। লাভ বিশেষ থাকবে না, ধরেই নিয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় সেই সুযোগটুকুও রাখল না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন