পরিকল্পনা করে খুনের অভিযোগ দায়ের পরিবারের

ব্যবসায়ীর রক্তাক্ত দেহ ঘিরে রহস্য

গত ৪০ বছর আলুর ব্যবসা করছেন, এলাকায় নামডাক। রোজ সকালে হাঁটতে বেরতেন, গ্রামের রাস্তা ছেড়ে পাকা রাস্তায় প্রায় ১০ কিলোমিটার হাঁটা ছিল অভ্যাস। মঙ্গলবার ভোরে প্রাতর্ভ্রমণের বেরোনোর পর ওই রাস্তাতেই উদ্ধার হল বছর তেষট্টির ব্যবসায়ীর মৃতদেহ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

পোলবা শেষ আপডেট: ১৩ জুন ২০১৮ ০২:০০
Share:

অকুস্থল: দোষীকে ধরার দাবিতে অবরোধ গ্রামবাসীর। ছবি: তাপস ঘোষ

গত ৪০ বছর আলুর ব্যবসা করছেন, এলাকায় নামডাক। রোজ সকালে হাঁটতে বেরতেন, গ্রামের রাস্তা ছেড়ে পাকা রাস্তায় প্রায় ১০ কিলোমিটার হাঁটা ছিল অভ্যাস। মঙ্গলবার ভোরে প্রাতর্ভ্রমণের বেরোনোর পর ওই রাস্তাতেই উদ্ধার হল বছর তেষট্টির ব্যবসায়ীর মৃতদেহ।

Advertisement

পোলবার সুদর্শন শালুকগোড় গ্রামের ঘটনা। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের নাম মহাদেব ঘোষ। পরিবারের দাবি, পরিকল্পনা করে খুন করা হয়ে থাকতে পারে মহাদেববাবুকে। যদিও নির্দিষ্ট কারও নামে অভিযোগ জানায়নি পরিবার। খুনের কারণ সম্পর্কেও কিছু বলতে পারেননি পরিবারের লোকজন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, অন্য দিনের মতো এ দিনও ভোর সাড়ে ৪টে নাগাদ বেরিয়ে পড়েছিলেন মহাদেববাবু। চুঁচু়ড়া-পান্ডুয়া রাস্তা ধরে প্রায় অনেকক্ষণ হাঁটেন তিনি। অত সকালে ওই রাস্তায় গাড়ি বিশেষ থাকে না। বেলা বাড়লে ৩৯ নম্বর বাস চলে। এ দিন সকাল সাড়ে ৫টা নাগাদ কয়েকজন পথচারী রাস্তার ধারে চাষের জমির ভিতর তাঁকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। ওই এলাকা মহাদেববাবুর বাড়ি থেকে খুব দূর নয়।

Advertisement

প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশ জানিয়েছে, মহাদেববাবুর সারা গায়ে রক্ত লেগেছিল। জমাট বাধা রক্ত ছিল ওই জমিতেও। কপালে ও ঘাড়ে ছিল ভারী কোনও কিছুর আঘাত। মাঠের ভিতর যেখানে দেহ পড়েছিল সেখানে ভারী কিছু টেনে আনার দাগ রয়েছে বলেও মনে করছে পুলিশ। পরে ওই এলাকা থেকে প্রায় ৫০০ মিটার দূরে রামনাথপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে রাস্তার ধারেও রক্তের ছোপ দেখা যায়। ফলে পুলিশ কর্তাদের একাংশ মনে করছেন রাস্তার উপর মারধর করে, মহাদেববাবুকে টেনে এনে ফেলে দেওয়া হয়ে থাকতে পারে ওই জমির ভিতর।

ঘটনার তদন্তে পুলিশ-কুকুর মহাদেব ঘোষ (ইনসেটে)। ছবি: তাপস ঘোষ

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, আশপাশের প্রায় দু’তিনটি গ্রামের কয়েকশো মানুষ যুক্ত ছিলেন মহাদেববাবুর ব্যবসার সঙ্গে। পরোপকারী হিসাবে এলাকায় তাঁর সুনামও ছিল। এ দিন সকালে তাঁর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই হাজির হন আশপাশের গ্রামের লোকজন। খবর পেয়ে পুলিশ এলেও মৃতদেহ তুলতে দেননি এলাকার বাসিন্দারা। তাঁরা পুলিশ কুকুর নিয়ে এসে তদন্তের দাবি জানাতে থাকেন।

সকাল ৯টা নাগাদ একটি ট্রাকে মৃতদেহ রেখে চুঁচুড়া-পান্ডুয়া রাস্তা অবরোধ শুরু করেন তাঁরা। পান্ডুয়া, দাদপুর, গুড়াপ থানা থেকে বিশাল পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। তাতে আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন এলাকার বাসিন্দারা। পুলিশ কুকুর না এলে মৃতদেহ পুলিশের হাতে ছাড়া হবে না বলে জানিয়ে দেন তাঁরা। অবশেষ বেলা ১২ টা নাগাদ ঘটনাস্থলে আসে কুকুর ঘটনাস্থলে পৌছায়। দুপুর ১টা নাগাদ অবরোধ উঠে যায়। দেহ ময়নাতদন্তের জন্য চুঁচুড়া হাসপাতালে পাঠায় পুলিশ। পরিবারের তরফে খুনের অভিযোগ দায়ের করা হয়।

মহাদেববাবুর ছেলে শুভেন্দু ঘোষ বলেন, ‘‘আমাদের সন্দেহ পরিকল্পনা করেই খুন করা হয়েছে। কারণ বাবা ওই সময় একা হাঁটতে যান, তা সকলেই জানে। কিন্তু এমন যে হতে পারে আমরা কখনও ভাবিনি। বাবার কোনও শত্রু ছিল বলেও আমাদের জানা ছিল না। সকলের সঙ্গেই ওঁর সদ্ভাব ছিল।’’

স্থানীয় বাসিন্দা নারায়ণচন্দ্র ঘোষ বলেন, ‘‘আমাদের এমন ঘটনা আগে কখনও ঘটেনি। আমরা আতঙ্কিত। উনি ভাল মানুষ ছিলেন। দোষীদের কড়া শাস্তি দেওয়া হোক।’’ শুধু গ্রামে নয়, আতঙ্ক ছড়িয়েছে ব্যবসায়ীদের মধ্যেও। পোলবার সুদর্শন অঞ্চলের আলু ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আক্কাশ আলি মণ্ডল বলেন, ‘‘আমার আগে মহাদেববাবুই আলু ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ছিলেন। এই ঘটনায় আমরা আতঙ্কিত।’’

পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) সুকেশ জৈন বলেন, ‘‘খুনের অভিযোগ দায়ের হয়েছে। মৃতদেহ ময়না তদন্তের পর মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে। তবে পুলিশ সব দিক খতিয়ে দেখে তদন্ত শুরু করেছে।’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন