বন্ধ ঘর থেকে বিদেশি নাগরিক প্রৌঢ়ের মৃতদেহ উদ্ধার করল পুলিশ। মৃতের নাম মাইকেল প্যাট্রিক (৫৪)। রবিবার রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে চুঁচুড়ার ধরমপুর এলাকায়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ধরমপুরের নজরুল সরণির বাসিন্দা দুলাল দাসের বাড়িতে গত দেড় মাস ধরে একটি ঘর ভাড়া নিয়ে বসবাস করছিলেন ওই প্রৌঢ়। তিনি আমেরিকার বাসিন্দা ছিলেন। ১৬ বছর আগে ইস্কনের সদস্য হয়ে মায়াপুরে এসে বাড়ি তৈরি করে বসবাস করছিলেন প্যাট্রিক। সেখানেই পুতুল মিস্ত্রি নামে এক মহিলার সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। তাঁকে বিয়েও করেন। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই প্যাট্রিকের বিরুদ্ধে বধু নির্যাতনের মামলা করে তাঁকে বাড়ি থেকে বের করে দেন পুতুল। এর পর প্যাট্রিক মায়াপুর ছেড়ে বলাগড়ের জিরাটে এসে বসবাস শুরু করেন। শুধু তাই নয়, তিনি চুঁচুড়া আদালতে ওই মহিলার বিরুদ্ধে জমি বাড়ি দখলের পাল্টা মামলা করেন। জিরাট থেকে চুঁচুড়ার দূরত্ব বেশি। ওই মামলা চলাকালীন যাতায়াতের সুবিধার জন্য স্থানীয় এক বাসিন্দার সহযোগিতায় গত দেড় মাস ধরে চুঁচুড়ার ধরমপুরে বাড়ি ভাড়া নিয়ে তিনি থাকছিলেন। একাই একটি ঘর নিয়ে থাকতেন। বাংলা ভাষা তিনি বুঝতে পারতেন না। ইশারায় কথা বার্তা বলতেন।
রবিবার সারাদিন ঘরে আলো জ্বলছিল। কিন্তু এতদিন দীর্ঘক্ষণ ধরে ওই ঘরে আলো জ্বলতে দেখা যায়নি। তা দেখে স্থানীয় বাসিন্দা এবং বাড়িওয়ালার সন্দেহ হয়। ঘরের দরজা ভিতর থেকে বন্ধ ছিল। ডাকাডাকি করে কোনও সাড়া না পেয়ে তাঁরা থানায় খবর দেন। পুলিশ এসে জানলার কাচ ভেঙে দেখে, খাটের পাশে মাথা নীচু করে বসে রয়েছেন প্রৌঢ়। এরপর পুলিশ রড দিয়ে দরজা খুলে দেখে তিনি বেঁচে নেই। মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়না-তদন্তের জন্য চুঁচুড়া হাসপাতালে পাঠানো হয়। বাড়িমালিক দুলাল দাস বলেন, ‘‘গত দেড় মাস ধরে উনি আমাদের বাড়িতে পিছনের দিকে একটা ঘর ভাড়ায় নিয়ে থাকছিলেন। ভাষাগত সমস্যার কারণে খুব একটা কথাবার্তাও হতো না। প্রায় প্রতিদিন সকালে বেরিয়ে যেতেন, আর সন্ধ্যার পরে ফিরে নিজের ঘরে ঢুকে পড়তেন।’’ তিনি জানান, ওই দিন দীর্ঘক্ষণ আলো জ্বলতে দেখে প্যাট্রিককে ডাকাডকি করা হয়। কোনও সাড়া না পেয়ে পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। আমেরিকায় তাঁর যে পরিবার আছে সে কথাও মাঝে মধ্যেই বলতেন তিনি। তাঁদের ছবিও দেখাতেন।
প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানিয়েছে, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েই ওই প্রৌঢ়ের মৃত্যু হয়েছে। মৃতের পরিবারকে খবর দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।