ঝিলে মরা মাছের ঝাঁক, প্রশ্ন উঠছে রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে

কোনও ঝিলে কচুরিপানার মধ্যে দিয়ে খাবি খাচ্ছে বড় বড় মাছ। কোথাও আবার ঝাঁকে ঝাঁকে ভাসছে মরা মাছ। ঝিলের পাশে গেলেই নাকে এসে ঝাপটা মারছে দুর্গন্ধ। বর্তমানে এমনটাই চিত্র শিবপুর বটানিক্যাল গার্ডেনের। একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে নিউ টাউনের ইকো পার্কেও।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১২ মে ২০১৬ ০২:২৪
Share:

ইকো পার্কের ঝিলে মরা মাছ। বুধবার।ছবি: শৌভিক দে

কোনও ঝিলে কচুরিপানার মধ্যে দিয়ে খাবি খাচ্ছে বড় বড় মাছ। কোথাও আবার ঝাঁকে ঝাঁকে ভাসছে মরা মাছ। ঝিলের পাশে গেলেই নাকে এসে ঝাপটা মারছে দুর্গন্ধ। বর্তমানে এমনটাই চিত্র শিবপুর বটানিক্যাল গার্ডেনের। একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে নিউ টাউনের ইকো পার্কেও।

Advertisement

শিবপুর বটানিক্যাল গার্ডেনের প্রায় ২৭৬ একরের এই গার্ডেনে ২৪টি ঝিল। যেগুলি মাটিতে জলস্তর রক্ষার পাশাপাশি বজায় রাখে পরিবেশের ভারসাম্যও। সম্প্রতি এই ঝিলগুলির কয়েকটিতে মরা মাছ ভেসে ওঠায় সেগুলির রক্ষাণাবেক্ষণ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এলাকার বাসিন্দা ও প্রাতর্ভ্রমণকারীরা। তাঁদের অভিযোগ, গার্ডেন কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার জন্যই ঠিক মতো রক্ষণাবেক্ষণ হয় না ঝিলগুলির। এমনকী পাঁক ও কচুরিপানাও নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় না। তাই জলে অক্সিজেনের মাত্রা কমে গিয়ে দূষণের মাত্রা বেশি হওয়ায় এত মাছ মরে যাচ্ছে।

যদিও গার্ডেন-কর্তৃপক্ষ এই অভিযোগকে আমল দিতে রাজি নন। গার্ডেনের অধিকর্তা অরবিন্দ প্রামাণিক জানান, ঠিক কী কারণে ঝিলে মাছ মরছে তা এখনও বোঝা যায়নি। ঝিলের জল পরীক্ষার জন্য কেন্দ্রীয় মৎস্য দফতরে পাঠানো হয়েছে।

Advertisement

সম্প্রতি গার্ডেনের ভিতরে কয়েকটি ঝিলে মরা মাছ ভেসে ওঠার ঘটনাটি প্রথম দেখতে পান প্রাতর্ভ্রমণকারীরা। এই খবর ছড়িয়ে পড়ার পরেই গার্ডেন এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়ায়। খবর পেয়ে ছুটে আসেন গার্ডেনের পাহারাদারেরা। খবর দেওয়া হয় কর্তৃপক্ষকেও। যদিও অভিযোগ, খবর পেয়েও কোনও ব্যবস্থা নেননি গার্ডেন-কর্তৃপক্ষ। ফলে কয়েক দিন পর থেকে ঝিলের পাশে দুর্গন্ধ ছড়াতে শুরু করে।

নিত্য প্রাতর্ভ্রমণকারী, আইনজীবী স্মরজিৎ রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘ঝিলগুলির কচুরিপানা পরিষ্কার করা হয় না। এ ছাড়া, ঝিলগুলির মধ্যে আন্তঃসংযোগকারী ব্যবস্থা কাজ না করায় গঙ্গার জল ঢুকতে বা বেরোতেও পারছে না। এই দুই কারণেই জলে অক্সিজেনের পরিমাণ কমছে এবং মাছ মরে যাচ্ছে। যা নষ্ট করছে গার্ডেনের পরিবেশ।’’ একই মত মৎস্যবিজ্ঞানী অমলেশ চৌধুরীরও। তিনি বলেন, ‘‘গঙ্গার জল ঢুকতে বা বেরোতে না পারা যেমন একটি কারণ, তেমনি পুকুরের জলে আগাছা জন্মে জল দূষিত হওয়াতেও মাছ মরে যেতে পারে।’’

স্মরজিৎবাবু জানান, বছর তিনেক আগেই হাইকোর্ট গঙ্গার সঙ্গে ঝিলগুলির আন্তঃসংযোগকারী ব্যবস্থা ঠিক করার নির্দেশ দিয়েছিল কর্তৃপক্ষকে। কিন্তু তা মানা হয়নি। তাই এ বিষয়ে তিনি ফের কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেছেন।

একই অভিযোগ করেছেন পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্তও। তিনি বলেন, ‘‘ঝিলগুলি থেকে পাঁক ও কচুরিপানা তুলে পরিষ্কার করার কথা ছিল আগেই। কারণ এই ঝিলগুলি খনন করা হয়েছিল উদ্ভিদকুলকে বাঁচানোর জন্য। কিন্তু কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা না নেওয়ায় ঝিলগুলিতে এতটাই দূষণ ছড়িয়েছে যে মাছও বাঁচছে না।’’

তবে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে মাছ মরছে, তা মানতে রাজি নন অধিকর্তা অরবিন্দবাবু। তিনি বলেন, ‘‘মাছ মরে যাওয়ার পিছনে অন্য কারণ থাকতে পারে। কেউ ব্যক্তিগত স্বার্থে কর্তৃপক্ষকে হেনস্থা করার জন্য জল দূষিত করতে পারেন বা নর্দমার জল ঝিলের জলে মিশে গিয়ে দূষণ ছড়াতে পারে। আমরা সব দিক খতিয়ে দেখছি। প্রাথমিক ভাবে ঝিলের পানা তুলে, চুন দিয়ে জল শোধনের কাজ শুরু করেছি।’’

এ দিকে, নিউ টাউনের ইকো পার্কের ঝিলেও বুধবার দুপুরে বেশ কয়েকটি মাছ ভেসে উঠতে দেখা যায়। সেখানেও মাছ মরে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। যদিও এর পিছনে গরমকেই দায়ী করেছেন হিডকো কর্তৃপক্ষ। হিডকোর চেয়ারম্যান দেবাশিস সেন জানান, গত কয়েক দিন ধরে মাঝেমধ্যে মাছ মরে ভেসে উঠছে ওই ঝিলে। বিষয়টি নিয়ে তাঁরা মৎস্য দফতরের সঙ্গেও কথা বলেছেন বলে জানান দেবাশিসবাবু। তিনি বলেন, ‘‘মৎস্য দফতর জানিয়েছে গরমে এমনটা হয়। সিলভার কার্প জাতীয় মাছ এই তাপমাত্র সহ্য করতে না পেরে মরে ভেসে উঠছে। অনেক জায়গাতেই এটা হচ্ছে। বৃষ্টি হলেই ঠিক হয়ে যাবে।’’ এ প্রসঙ্গে মৎস্যবিজ্ঞানী অমলেশবাবু বলেন, ‘‘ইকো পার্কে জলাভূমির কৃত্রিম পরিবেশ নষ্ট করা হয়েছে। অত্যধিক মোটরবোট চলে এখানে, যা থেকে দূষণ ছড়ায়। এগুলি নিয়ন্ত্রণ করা দরকার।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন