ডেঙ্গির মশা চিনবে কে

লোক-লস্কর, মশা তাড়ানোর কামান, লার্ভা ধ্বংস করার লার্ভিসাইড তেল— আছে সবই। কিন্তু যে কারণে এত আয়োজন, সেই মশা চিনবে কে? কে চিহ্নিত করবে মশার লার্ভা?

Advertisement

দেবাশিস দাশ

শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০১৭ ০১:৪০
Share:

লোক-লস্কর, মশা তাড়ানোর কামান, লার্ভা ধ্বংস করার লার্ভিসাইড তেল— আছে সবই। কিন্তু যে কারণে এত আয়োজন, সেই মশা চিনবে কে? কে চিহ্নিত করবে মশার লার্ভা?

Advertisement

এই প্রশ্নের উত্তর নেই রাজ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তম পুরসভা হাওড়ার পুর কর্তাদের কাছে। রাজ্যের মূল প্রশাসনিক ভবন নবান্ন এই পুর এলাকায়। কিন্তু আজ পর্যন্ত হাওড়া পুরসভায় না আছে কোনও পতঙ্গবিদ, না তৈরি হয়েছে ভেক্টর কন্ট্রোল ইউনিট। যার নিট ফল— ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়া, চিকুনগুনিয়া নিয়ন্ত্রণে এই পুরসভার হাল অন্ধকারে ঢিল ছোড়ার মতো। রোগের কারণ ধ্বংস করার জন্য প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ হচ্ছে, কিন্তু সেই রোগ বছর বছর সীমানা বাড়িয়েই চলেছে। শুধু গত বছরের হিসেবই বলছে, মশাবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন ১৮০৫ জন। তার মধ্যে ১১৩৫ জনের রক্তে এন এস ওয়ান পজিটিভ পাওয়া গিয়েছিল। ৬৭০ জনের রক্তে মিলেছিল ডেঙ্গির জীবাণু। মারা গিয়েছিলেন এক জন।

পুরসভা সূত্রে খবর, পতঙ্গবিদ থাকা তো দূর, দীর্ঘ দিন পুরসভায় স্থায়ী স্বাস্থ্য অফিসার নেই। আগে এক জন শিশু-চিকিৎসককে অস্থায়ী ভাবে ওই পদে বসিয়ে কাজ সামাল দিত বামফ্রন্ট পরিচালিত বোর্ড। ২০১৪ সালে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরেও অবস্থা বদলায়নি। শুধু বাম বোর্ডের মনোনীত স্বাস্থ্য অফিসারকে সরিয়ে স্বাস্থ্য দফতরের অফিসার অন স্পেশ্যাল ডিউটি (ওএসডি) পদে আনা হয় এক হোমিওপ্যাথি চিকিৎসককে। পাশাপাশি, ৬৬টি ওয়ার্ডে ভেক্টর কন্ট্রোল মজদুর পদে নেওয়া হয়েছে ২০০ বেকার তরুণ-তরুণীকে। বাড়ি বাড়ি সমীক্ষার জন্য নেওয়া হয় ২৫০০ মহিলাকে। ৫০ জন পুরকর্মী নিয়ে হয়েছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ফোর্স। তাঁদের মধ্যে ৩০ জনকে কলকাতা পুরসভার ভেক্টর কন্ট্রোল বিভাগ থেকে প্রশিক্ষণ দিয়ে আনা হয়েছে।

Advertisement

হাওড়া পুরসভার মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) ভাস্কর ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘দু’বছর ধরে আমরা রাজ্য সরকারের কাছে পতঙ্গবিদ চেয়ে আসছি। কিন্তু আজ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। তাই নিজেরাই চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীর সংখ্যা তিন গুণ বাড়িয়ে মশাবাহিত রোগের মোকাবিলা করছি।’’

পুর কর্তারাই মানছেন, এক জন পতঙ্গবিদ বা নিদেনপক্ষে ল্যাবরেটরি থাকলে বছর বছর মশার চরিত্র বদল থেকে শুরু করে এই সব রোগের মোকাবিলার পদ্ধতিগত পরিবর্তন জেনে কাজ করতে সুবিধা হতো। এখন শুধুমাত্র স্বাস্থ্যকর্মীদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ডেঙ্গিপ্রবণ এলাকা চিহ্নিত করে লার্ভা ধ্বংসের কাজ হচ্ছে। পাশাপাশি, বাড়ানো হচ্ছে সচেতনতা। নিজের টাকায় পুরসভা তৈরি করেছে নিখরচায় ডেঙ্গির জীবাণু আইজিএম পরীক্ষার ল্যাবরেটরি।

কিন্তু এত করেও কাজের কাজ কতটা হচ্ছে, তা নিয়ে চিন্তিত খোদ মেয়র রথীন চক্রবর্তী। তিনি বলেন, ‘‘পতঙ্গবিদ থাকলে এই রোগের মোকাবিলা করতে অবশ্যই সুবিধা হতো। আমরা চেষ্টা করছি পদ্মপুকুরে একটি ল্যাবরেটরি তৈরি করার।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন