প্রতীকী ছবি।
গত বছর বর্ষার মরসুমে ডেঙ্গি ‘মহামারি’ হয়েছিল শ্রীরামপুরে। অন্তত চার জন মারা যান। আক্রান্ত হন বহু। আর এ বছর এখনও পর্যন্ত শহরে মাত্র তিন জন ডেঙ্গি আক্রান্ত হয়েছেন এবং তাঁরা সুস্থও হয়ে গিয়েছেন বলে পুরসভার দাবি। ফলে, কিছুটা স্বস্তিতে পুর কর্তৃপক্ষ।
কিন্তু কী ভাবে সম্ভব হল ডেঙ্গি প্রতিরোধ? এ জন্য গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে প্রচার এবং মশার লার্ভা মারতে লাগাতার অভিযানকেই হাতিয়ার করেছেন তাঁরা। অবশ্য চেয়ারম্যান-ইন-কাউন্সিল (জঞ্জাল ও জনস্বাস্থ্য) গৌরমোহন দে বলেন, ‘‘আমরা আত্মতুষ্ট নই। অভিযান চলবে।’’
পুরপ্রধান অমিয় মুখোপাধ্যায় জানান, সাফাই অভিযানের পাশাপাশি প্রচার চালিয়ে মানুষকে অনেক সচেতন করা গিয়েছে। গত বছর পুরকর্মীদের গৃহস্থ বাড়িতে ঢুকতে বেগ পেতে হয়েছিল। স্বাস্থ্য দফতরের মহিলা কর্মীরা বাড়িতে ঢুকে টবের জমা জল নষ্ট করে দিয়েছেন। জল জমার অভিযোগ পেলে সটান দোতলা-তিনতলাতেও উঠে পড়েছেন।
ডেঙ্গি রুখুন
• পুরনো টায়ার, ফুলের টব, ডাবের খোল বা পরিত্যক্ত পাত্রে জল জমতে দেবেন না
• বাড়ির আশেপাশের কোনও পরিত্যক্ত পাত্র বা খানাখন্দেও জল জমতে দেবেন না
• জলের ট্যাঙ্ক, চৌবাচ্চা এবং বাড়ির অন্য জলাধারের জল সপ্তাহে একদিন পরিষ্কার করুন
• বাড়ির চারপাশে জঞ্জাল জমতে দেবেন না
চিকিৎসকদের অনেকেই বলছেন, পতঙ্গবাহিত রোগের প্রকোপ একই এলাকায় দু’বছর হয় না। বিষয়টি পুরসভার আধিকারিকরাও মানছেন। চিকিৎসকদের সংগঠন আইএমএ-র শ্রীরামপুর শাখার সভাপতি প্রদীপকুমার দাস বলেন, ‘‘এটা ঠিক যে পতঙ্গবাহিত রোগের প্রকোপ কোনও নির্দিষ্ট জায়গায় পরপর দু’বছর হয় না। তবে, এটাও ঠিক ওই রোগ প্রতিরোধে যা করণীয়, পুরকর্মীরা তৎপরতার সঙ্গে তা করেছেন।’’ প্রদীপবাবু জানান, গত বছর কয়েকশো ডেঙ্গি আক্রান্তের চিকিৎসা করেছিলেন তিনি। এ বার তেমন রোগী এক জনও তাঁর কাছে আসেননি।
গত বছর পরিস্থিতি কার্যত হাতের বাইরে চলে গিয়েছিল পুরসভার। নানা মহলে সমালোচনার ঝড় উঠেছিল। তাই মাঠে নেমে পড়েন পুরকর্মীরা। জঞ্জাল দফতরের আধিকারিক অনুজ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ফেব্রুয়ারি থেকেই বিভিন্ন ওয়ার্ডে, সরকারি অফিস, হাসপাতাল, বিভিন্ন পরিত্যক্ত জায়গায় ঘুরে ঘুরে সাফাই অভিযান শুরু হয়। মশার লার্ভা মারার তেল ছেটানো হয়। বাড়ি বাড়ি নিবিড় কর্মসূচিতে নজরদারি চালিয়ে মশার ডিম পাড়ার জায়গা খুঁজে বের করা, তা নষ্ট করা, ডেঙ্গি প্রতিরোধের জন্য গৃহস্থের কী ব্যবস্থা নেওয়া উচিত তা নিয়ে প্রচার চালানো হয়। সাধারণ মানুষ চান, ডেঙ্গি প্রতিরোধে প্রতি বছরই নির্দিষ্ট সময় পুরকর্মীদের অভিযান নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে চলুক।