—ফাইল চিত্র।
ছড়াচ্ছে জ্বর হাওড়া, হুগলির বিভিন্ন এলাকায়। তিনটি এলাকায় চারজনের ডেঙ্গি সংক্রমণের খবরও মিলেছে বলে জানা গিয়েছে উত্তরপাড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতাল সূত্রে। ফলে আতঙ্কও ছড়াচ্ছে দ্রুত।
হাসপাতাল সূত্রের জানা গিয়েছে, গত সাত থেকে দশ দিনে জ্বর নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন বহু মানুষ। তাঁদের মধ্যে অনেকেই সাধারণ জ্বরে আক্রান্ত। কিন্তু তিন জনের রক্ত পরীক্ষার রিপোর্টে ডেঙ্গির জীবাণু মিলেছে। হাসপাতাল সুপার দেবাশিস চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘দু’জন বালির বাসিন্দা। একজন কোন্নগরের আদর্শনগরের বাসিন্দা। সকলেই ডেঙ্গিতে আক্রান্ত। তবে তিনজনেই আপাতত স্থিতিশীল। তাঁদের উপর নজর রাখা হয়েছে।’’
উত্তরপাড়ার ভদ্রকালীর হরনাথপুর রোডের এক বাসিন্দাও ডেঙ্গি আক্রান্ত বলে জানিয়েছেন স্থানীয় চিকিৎসক ঐশ্বর্য্যদীপ ঘোষ। তিনিও বলেন, ‘‘জ্বরে আক্রান্ত রোগী আসছেন প্রতিদিন। তবে সকলেই ডেঙ্গি বা মশাবাহিত অন্য কোনও জ্বরে আক্রান্ত নন। ঋতু পরিবর্তনের সময় ঠান্ডা লেগেও জ্বরে ভুগছেন অনেকে।’’
বর্ষা আসার সঙ্গে সঙ্গেই উত্তরপাড়া পুর এলাকায় জ্বরের দাপটে আতঙ্কিত এলাকার বাসিন্দারা। গত বর্ষায়ও এমনই জ্বর ছড়িয়েছিল। পুর এলাকার কোনও কোনও অঞ্চলে মারাত্মক থাবাও বসিয়েছিল ডেঙ্গি। এক তরুণ-সহ দু’জন মারা গিয়েছিলেন।
গত মরসুমের তুলনায় এ বার জ্বরের প্রকোপ অবশ্য কিছুটা কম বলে দাবি করছেন চিকিৎসকেরা। এখন পর্যন্ত ডেঙ্গির উপদ্রবও তুলনায় কম। কিন্তু আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দারাই বলছেন গতবার উত্তরপাড়া বাজার লেন, জিটি রোড লাগোয়া টিপটপের গলি, মাখলা এবং হিন্দমোটরের কয়েকটি এলাকায় ছিল ঘরে ঘরে জ্বরের আতঙ্ক। সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এ বার মানুষও অনেকটা সচেতন। এ বার জ্বর হলেই মানুষ সরাসরি উত্তরপাড়া হাসপাতালে আসছেন। উত্তরপাড়া, ভদ্রকালী, হিন্দমোটর এলাকায় যে সমস্ত চিকিৎসকেরা নিয়মিত রোগী দেখেন তাঁদের কাছেও রীতিমতো ভিড় জ্বরে আক্রান্তদের। এক চিকিৎসক বললেন, ‘‘এটা কিন্তু ভাল দিক। আতঙ্কেই হোক বা স্বাস্থ্য দফতরের প্রচারের কারণেই হোক, মানুষ আগের থেকে বেশি সচেতন হয়েছেন। সামান্য জ্বর হয়েছে ভেবে আর বাড়িতে বসে থাকছেন না।’’ ওই চিকিৎসকের দাবি, এতে প্রাণের সঙ্কট কমবে। ডেঙ্গি হলেও প্রথমেই চিকিৎসা করা সম্ভব হবে।
পুর কর্তৃপক্ষও দাবি করেছেন, এ বার তাঁরা একটু আগে থেকেই সচেতন। বাড়ি বাড়ি জ্বরের খবর সংগ্রহ করে পুরসভা তালিকা তৈরি করে রাখছএ। সে জন্য স্বাস্থ্যকর্মীরা নিয়ম করে এলাকার বাড়ি বাড়ি ঘুরছেন। আগেই সমস্ত বাড়ির সেপটিক ট্যাঙ্কের পাইপগুলির মুখ মশারির ব্যাগ দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে পুরসভার তরফে।
মশা মারার রাসায়নিক ছড়ানোর পাশাপাশি নর্দমাগুলিও ঢেকে দেওয়ার কাজও শুরু হয়েছে বলে দাবি করেছেন পুর কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সবটা যে বাস্তবে হচ্ছে না, তা জানাচ্ছেন বাসিন্দারা। হিন্দমোটর এলাকার বাসিন্দা আরতি চৌধুরী বলেন, ‘‘এখানে নর্দমা উপচে প্রতিদিন জল জমছে। পুরসভা থেকে নর্দমার পাঁক তুলে রাস্তায় রেখে যাচ্ছে, বৃষ্টিতে তা ফের নর্দমাতেই মিশছে। মাঝখান থেকে রাস্তা নোংরা হচ্ছে, হাঁটা চলা দায়। মশাও বাড়ছে।’’ একই অভিযোগ করেছেন উত্তরপাড়ার বাসিন্দা শান্তিপ্রিয়া ঘোষ। তিনিও বলেন, ‘‘নর্দমা পরিষ্কার করা হলেও তা যথেষ্ট নয়। গলির ভিতর জল জমছেই। মশাও হচ্ছে।’’
জ্বরের কথা স্বীকার করে পুরপ্রধান দিলীপ যাদব বলেন, ‘‘জ্বর পুরোপুরি কমানো যায়নি। তবে আমরা সাধ্য মতো চেষ্টা করে যাচ্ছি। দিলীপবাবু দাবি করেছেন, পতঙ্গবিদেরা জানিয়েছেন মশা মারার রাসায়নিক মাত্র সাতদিন কাজ করতে পারে। তাই পুরসভা চেষ্টা করেছে যে জায়গায় আজ মশার রাসায়নিক দেওয়া হচ্ছে, ঠিক তার সাতদিনের মধ্যেই সেখানেই আবার ফিরে যেতে। তাতে জ্বরের ঝুঁকি কিছুটা কমবে বলে মনে করছেন পুরপ্রধান। তিনি বলেন, ‘‘আমরা চেষ্টা করছি তবে সাধারণ মানুষকেও অনুরোধ করব, এলাকা পরিষ্কার রাখতে।’’