চিকিৎসকদের চেম্বারে উপচে পড়ছে রোগী

শ্রীরামপুর-রিষড়ায় ডেঙ্গি এখনও বেলাগাম

তিন বছর আগে শ্রীরামপুরে ডেঙ্গির অত্যধিক প্রকোপের কথা মনে করাচ্ছে বর্তমান পরিস্থিতি। শহরবাসীরা মনে করছেন, সেই সময় পুরসভার প্রচারে অনেক জোর ছিল। সরকারি কর্তাব্যক্তিদের দৌড়ঝাঁপ বেশি চোখে পড়েছিল। এ বার তা নেই বলে অভিযোগ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শ্রীরামপুর শেষ আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০১৯ ০১:১১
Share:

প্রতীকী ছবি।

শুরুটা হয়েছিল দুর্গাপুজোর সময় থেকে। তার পরে লক্ষ্মীপুজো, কালীপুজো এবং জগদ্ধাত্রী পুজোও পার। বাতাসে অল্পবিস্তর ঠান্ডাও মালুম হচ্ছে। কিন্তু শ্রীরামপুর মহকুমায় ডেঙ্গি পরিস্থিতি বাগে আসার কোনও লক্ষণ নেই। চিকিৎসকদের ‘চেম্বারে’ উপছে পড়ছে জ্বরের রোগী। অনেকেই হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। শারীরিক অবস্থা জটিল হওয়ায় অনেককে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে কলকাতার হাসপাতালেও।

Advertisement

তিন বছর আগে শ্রীরামপুরে ডেঙ্গির অত্যধিক প্রকোপের কথা মনে করাচ্ছে বর্তমান পরিস্থিতি। শহরবাসীরা মনে করছেন, সেই সময় পুরসভার প্রচারে অনেক জোর ছিল। সরকারি কর্তাব্যক্তিদের দৌড়ঝাঁপ বেশি চোখে পড়েছিল। এ বার তা নেই বলে অভিযোগ।

শেওড়াফুলির কয়েকটি জায়গায় ডেঙ্গি আক্রান্তের খোঁজ মিলেছে। তবে, সমস্যা বেশি রিষড়া এবং শ্রীরামপুর শহরে। রিষড়া পুর এলাকায় রেল লাইনের পশ্চিমপাড়ে ডেঙ্গি ছেয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ ছিলই। মোড়পুকুর নবীন পল্লি, ১ নম্বর গভর্নমেন্ট কলোনির হরিসভা, সুভাষনগর তালপুকুর, ৩ নম্বর নতুনগ্রাম প্রভৃতি জায়গায় ঘরে ঘরে জ্বর। ডেঙ্গির উপসর্গ নিয়ে অনেকেই হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। হরিসভার বাসিন্দা শীলা দাস রবিবার বলেন, ‘‘আমার ভাসুর আর ভাসুরপোর ডেঙ্গি হয়েছে। ভাসুর এখনও হাসপাতালে ভর্তি। ভাসুরপো শনিবার ছাড়া পেয়েছে। এখানে অনেকেই জ্বরে আক্রান্ত। বড় নালাগুলি (হাইড্রেন) পুরো পরিষ্কার হচ্ছে না। পুকুরও সংস্কার হয় না। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি ভাল নয়।’’

Advertisement

অনেকেই শীলাদেবীর সঙ্গে একমত। কংগ্রেস নেতা সাবির আলি বলেন, ‘‘ডেঙ্গি রোধে প্রচারে পুরসভার ঘাটতি রয়েছে। কোটি টাকা খরচ করে নর্দমা হল, অথচ তা কাজেই আসেনি। উল্টে জল জমে পরিস্থিতি হাতের বাইরে।’’

নিকাশি সমস্যা সমাধানের দাবিতে সম্প্রতি শহরের বিভিন্ন জায়গায় অবরোধ করেন সাধারণ মানুষ। পরিকল্পনা অনুযায়ী কেএমডিএ-র নর্দমা তৈরি হয়নি বলে পুরকর্তারাও মানছেন। ফলে, জল নিকাশি ঠিকমতো হচ্ছে না। বিষয়টি নিয়ে তাঁরা কেএমডিএ-র আধিকারিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন।

পুরপ্রধান বিজয়সাগর মিশ্র বলেন, ‘‘মশা মারার তেল থেকে ব্লিচিং পাউডার ছড়ানো, রাস্তাঘাট, নর্দমা পরিষ্কার— সবই গুরুত্ব দিয়ে করছি। জ্বরে আক্রান্তদের বিনামূল্যে রক্ত পরীক্ষা করানো হচ্ছে।’’ সম্প্রতি পুরসভার ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের শ্রীকৃষ্ণনগরের এক যুবক জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। বাড়ির লোকের দাবি, ডেঙ্গিতেই তাঁর মৃত্যু হয়। স্বাস্থ্য দফতর অবশ্য দাবি করে, ডেঙ্গি হলেও মৃত্যুর কারণ তা ছিল না। তিনি এনসেফ্যালাইটিসে
মারা গিয়েছেন।

২০১৬ সালে শ্রীরামপুরে ডেঙ্গিকে ‘মহামারি’ ঘোষণা করে স্বাস্থ্য দফতর। এ বার ফের এই শহরকে ভোগাচ্ছে মশাবাহিত এই রোগ। জিতেন্দ্রনাথ লাহিড়ী রোড, রাইল্যান্ড রোড, বঙ্গলক্ষ্মী রোড, খটিরবাজার, জাননগর রোড, বিধান পার্ক-সহ মাহেশের বিস্তীর্ণ এলাকায় ডেঙ্গির প্রকোপ ছড়ায়। শনিবার ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের ডেঙ্গি আক্রান্ত এক বালিকাকে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে স্থানান্তরিত করা হয় শ্রীরামপুরের একটি নার্সিংহোম থেকে। শহরের পটুয়াপাড়ার বাসিন্দা সনৎ দে বলেন, ‘‘আমার এবং ভাইপোর ডেঙ্গি হয়েছিল। সরকারি হাসপাতালে জায়গা পাইনি। নার্সিংহোমে ভর্তি ছিলাম। পুরসভা হয়তো কিছু ব্যবস্থা নিচ্ছে বা প্রচার করছে। তাতে কাজ না হলে আধুনিক উপায় যা আছে, তা করা উচিত।’’

অনেকেরই দাবি, পুরসভায় স্থায়ী পতঙ্গবিদ নিয়োগ করতে হবে। পুরসভার চেয়ারম্যান-ইন-কাউন্সিল (সাফাই) গৌরমোহন দে জানান, পতঙ্গবিদের সঙ্গে বৈঠক করা হয়েছে। মশার লার্ভা মারতে তেলের বদলে পাউডার জলে গুলে দেওয়া হচ্ছে। ধোঁয়া দেওয়া হচ্ছে। সাফাইয়ে জোর দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্যকর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে মানুষকে সচেতন করছেন। জ্বরের তথ্য সংগ্রহ করছেন। তাতেও কেন পরিস্থিতি ‘কন্ট্রোল’ করা যাচ্ছে না, তা তাঁরা ভেবে পাচ্ছেন না।

এক কাউ‌ন্সিলরের কথায়, ‘‘আমরা সব চেষ্টাই করছি, কিন্তু ডেঙ্গির চোখরাঙানি কেন এখনও থামছে না, বুঝে উঠতে পারছি না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন