প্রস্তুতি: চলছে প্রতিমার চুল তৈরির কাজ। নিজস্ব চিত্র
কালো রং মেশানো পাটে লোহার চিরুনি দিয়ে আঁচড় কাটছিলেন এক ব্যক্তি। কালো রংয়ের সেই পাটই আরও কিছু প্রক্রিয়ার পরে চুলের আকার নেবে। সেই নকল চুলেই ঢাকবে প্রতিমার মাথা।
আজ পঞ্চমী। হাওড়ার জগৎবল্লভপুরের পার্বতীপুর গ্রামের মুসলমান মহল্লায় এখন হাঁফ ফেলার সময় নেই। কারণ এই গ্রামের কমবেশি ৪০টি মুসলমান পরিবার প্রতিমার নকল চুল তৈরির সঙ্গে যুক্ত। শেখ সইফুদ্দিন নামে এক শিল্পী বলেন, ‘‘এখন দুর্গাপুজোর শেষ মূর্হুতের কাজ চলছে। এরপর শুরু হবে কালী প্রতিমার মাথার চুল তৈরির কাজ।’’
প্রতিমার মাথার চুল তৈরির প্রধান উপাদান হল পাট। হুগলির মশাট, শিয়াখালা প্রভৃতি এলাকা থেকে পাট আনা হয়। সেই পাট ধুয়ে তাতে কালো রং করা হয়। তারপর সেই পাটের বাড়তি রোম ফেলে সেগুলিকে পাটকাঠিতে জড়িয়ে প্যাকেটে ভরা হয়। চুলের গুণগত মান অনুযায়ী নির্ধারিত হয় দাম। শুধু কুমারটুলি কিংবা বড়বাজার নয়, জগৎবল্লভপুরের ওই গ্রাম থেকে রাঁচি, পটনা-সহ দেশের অন্যান্য রাজ্যেও প্রতিমার চুল রপ্তানি হয়।
তবে সম্প্রতি পাট এবং রংয়ের দাম বেড়ে যাওয়ায় সমস্যায় পড়েছেন এই শিল্পে কিছুটা সমস্যা তৈরি হয়েছে। প্রতিমার চুল তৈরির সঙ্গে যুক্ত শেখ নাসিরুদ্দিন, শেখ মফিজুদ্দিনদের ক্ষোভ, ‘‘কিন্তু আমরা ব্যাঙ্ক থেকে কোনও ঋণ পাই না। নকল চুল তৈরির উপকরণগুলির দামও বেড়েছে। তাই ইচ্ছে থাকলেও ব্যবসা বাড়াতে পারছি না।’’ শেখ রিয়াজ নামে বছর কুড়ির এক তরুণের আক্ষেপ, ‘‘আমার বাবা প্রতিমার চুল তৈরি করেন। কিন্তু আমি এই ব্যবসায় আসিনি। কারণ চুল তৈরির উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসায় হাল তেমন ভাল নয়।’’
অনেক সমস্যা থাকলেও হাল ছাড়তে নারাজ পার্বতীপুর গ্রামের নকল চুল তৈরির কারিগরেরা। তাঁদের কথায়, ‘‘বাবা-কাকারা এই কাজ করতেন। তাই অসুবিধা থাকলেও পেশা বদল করিনি। কারণ এর সঙ্গে আমাদের আবেগও জড়িয়ে রয়েছে।’