ভরা: চলছে টানা বৃষ্টি। কানায় কানায় জল দামোদরে। ছবি: সুব্রত জানা।
বৃষ্টি থেমেছে। কিন্তু চিন্তা কমছে না হাওড়ার সেচ দফতরের। কারণ, মঙ্গলবার একসঙ্গে ৮০ হাজার কিউসেক জল ছেড়েছে ডিভিসি। আজ, বুধবার সেই জল উদয়নারায়ণপুর ও আমতা-২ ব্লকে ঢোকার কথা।
সোমবার আমতায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে প্রশাসনিক বৈঠক করতে এসে সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘‘বৃষ্টি যদি আর না হয়, তাহলে বড় বিপদের আশঙ্কা নেই।’’ তবে একই সঙ্গে তিনি জানিয়েছিলেন, ডিভিসিকে বাড়তি জল ছাড়তে বারণ করা হয়েছে। কিন্তু ডিভিসি মঙ্গলবার জল ছাড়ায় তৈরি হয়েছে প্লাবনের আশঙ্কা। সেচ দফতরের হাওড়া ডিভিশনের কর্তাদের দাবি, অন্য বছরের বর্ষায় ডিভিসি দফায় দফায় গড়ে ২০ হাজার কিউসেক করে জল ছাড়ে। কিন্তু এ বার এক সঙ্গে ৮০ হাজার কিউসেক জল ছেড়েছে। যা গত ১৫ বছরের হয়নি বললেই চলে।
প্রায় প্রতি বর্ষাতেই ডিভিসির ছা়ড়া জলে উদয়নারায়ণপুর এবং আমতা ২— এই দু’টি ব্লক কমবেশি প্লাবিত হয়। কারণ, এই দু’টি ব্লক দামোদরের ডান দিকে রয়েছে। সেচ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, পদ্ধতিগত কারণে নদীর ডান দিকে বাঁধ দেওয়া যায় না। তাই বাঁধের বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে জয়পুরের থলিয়া থেকে বাগনানের বাকসি পর্যন্ত খাল কাটা হয়েছে। মজা দামোদর, রামপুর খাল সংস্কার হয়েছে। ডিভিসির ছাড়া জল এই খালগুলি দিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু সেটি তখনই সম্ভব, যখন ডিভিসির জল ছাড়ার মাত্রা ৬০ হাজার কিউসেকের মধ্যে থাকে। এ বার সেই মাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ায় সেচ দফতরের আশঙ্কা, ডিভিসির ছাড়া জল দামোদরের ডান দিকের পাড় ঝাঁপিয়ে জনপদে ঢুকতে পারে।
মঙ্গলবার বিকেল থেকেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে হাওড়া জেলা প্রশাসন। মনসুকা, ঠাকুরানিচক, হোঁদল-সহ কয়েকটি নিচু এলাকায় বালির বস্তা ফেলা হয়েছে। সোমবার বিকেলে নির্মীয়মাণ বকপোতা সেতুর কাছে দামোদরের পাড়ে ধস নেমেছিল। সেটিও মেরামত করা হচ্ছে। উদয়নারায়ণপুরের বিধায়ক সমীর পাঁজা বলেন, ‘‘আমরা জেলা প্রশাসনের কাছে চিঁড়ে, গুড়, শিশুখাদ্য, পানীয় জল চেয়েছি। ত্রাণ শিবিরের জন্য ৪৯টি জায়গা চিহ্নিত হয়েছে।’’ আমতার বিধায়ক অসিত মিত্রও জেলা প্রশাসনের কাছে প্রয়োজনীয় ত্রাণের দাবি জানিয়েছেন।
জেলা প্রশাসনের এক কর্তা জানান, ডিভিসির ছাড়া জল সাধারণত উদয়নারায়ণপুরে আগে ঢোকে। তাই ওই ব্লককে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে দেখা হচ্ছে। তবে আমতা ২ ব্লকের জন্যও ত্রাণের পরিকল্পনা হয়েছে। হাওড়া (গ্রামীণ) পুলিশের এক কর্তা জানান, প্লাবিত এলাকায় কালোবাজারি রুখতে কড়া নজর
রাখা হচ্ছে।