নির্যাতিতা।-নিজস্ব চিত্র।
সম্পত্তি নিয়ে ঝগড়া। তার জেরে এক বিধবাকে মারধর করে মাথার চুল কেটে নেওয়ার অভিযোগ উঠল ভাসুর, দুই দেওর এবং তিন জা’য়ের বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার সকালে পান্ডুয়ার মণ্ডলাই গ্রামে ওই ঘটনায় নির্যাতিতার অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ ভাসুর ও তিন জা’কে গ্রেফতার করেছে।
হুগলির পুলিশ সুপার প্রবীন ত্রিপাঠী বলেন, ‘‘মহিলার অভিযোগ পেয়ে চার জনকে ধরা হয়েছে। বাকিরা পলাতক। যত শীঘ্র সম্ভব তাদের গ্রেফতার করা হবে।’’
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, নির্যাতিতা মহিলার স্বামী ও শ্বশুর কয়েক বছর আগে মারা গিয়েছেন। অভিযোগ, তারপরই সম্পত্তি নিয়ে শ্বশুরবাড়ির লোকজন মহিলার উপর অত্যাচার করতে থাকেন। নানা রকম গঞ্জনাও দেওয়া হতো তাঁকে। বৃহস্পতিবার সকালে তিনি বাড়ির একটি গাছ থেকে দু’টি আম পাড়েন। এর পরেই দুই দেওর, ভাসুর ও তাঁদের স্ত্রী-রা তাঁর উপর চড়াও হয় বলে অভিযোগ। লাঠি দিয়ে তাঁকে মারধর করা হয়। গায়ের জামা ছিঁড়ে দেওয়া হয়। তাতেও না থেমে শেষে তাঁর মাথার চুল ব্লেড দিয়ে কেটে দেওয়া হয়। কোনওরকমে তাদের হাত থেকে পালিয়ে মহিলা স্থানীয় উপপ্রধান, সিপিএমের ভোলা হাজরার বাড়িতে পৌঁছন। ভোলাবাবু তাঁকে পান্ডুয়া থানায় নিয়ে যান। সেখানে ভাসুর হরিসাধন, দেওর জয়দেব ও সহদেব এবং তিন জা সুনিতা, পারুল ও সোমার নামে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন নির্যাতিতা। খবর পেয়ে বিদায়ী সিপিএম বিধায়ক আমজাদ হোসেন থানায় গিয়ে মহিলার সঙ্গে কথা বলেন। তাঁর পাশে থাকার আশ্বাস দেন। পুলিশ নির্যাতিতাকে পান্ডুয়া গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করায়। চিকিৎসকরা জানান, ঘটনার জেরে মহিলা আতঙ্কে ভুগছেন। তাঁকে চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। ভোলাবাবু বলেন, ‘‘মহিলা এতটাই ভয় পেয়েছিলেন যে আমার বাড়িতে এসে রীতিমত ঠকঠক করে কাঁপছিলেন। ওঁর মুখে সব শুনে থানায় নিয়ে যাই। উনি পালিয়ে না এলে ওঁর উপরে হয়তো আরও অত্যাচার হতো।’’
মহিলা পুলিশকে জানান, স্বামীর মৃত্যুর পর তিনি খেতমজুরি করেন। পঞ্চায়েতে ১০০ দিনের কাজও করেন। শ্বশুর রেলে চাকরি করতেন। তাঁর ৮ বিঘা জমি এবং ৩ বিঘা পুকুর রয়েছে যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়নি। ওই সম্পত্তির ভাগ থেকে তাঁকে বঞ্চিত করতেই দুই দেওর, ভাসুর এবং জায়েরা তাঁর উপর অত্যাচার করতেন। ঘটনার দিনও একই কারে তাঁকে মারধর করে চুল কেটে দেওয়া হয়। অভিযুক্তরা অবশ্য অভিযোগ মানতে চাননি। হরিসাধন বলেন, ‘‘আমরা ওঁকে মারিনি। মিথ্যা মামলায় আমাদের ফাঁসানো হচ্ছে। ও নিজেই নিজের চুল কেটেছে।’’ একই দাবি তাঁর স্ত্রী সুনিতার।
মহিলা সিপিএম সমর্থক এবং অভিযুক্তরা তৃণমূলের সমর্থক হওয়ায় ঘটনায় রাজনীতির রং লেগেছে। পান্ডুয়া ব্লক তৃণমূল সভাপতি আনিসুল ইসলামের বক্তব্য, ‘‘ওই মহিলা সিপিএম করেন। একই পরিবারের হলেও অন্যরা আমাদের দল করেন। তাই পরিকল্পনা করেই ওঁদের ফাঁসানো হয়েছে।’’
যদিও পুলিশ জানিয়েছে, অভিযোগ গুরুতর। গুরুত্ব দিয়েই তদন্ত শুরু হয়েছে। অভিযুক্তদের কাউকে ছাড়া হবে না।