টিকিট থাকতেও ভেন্ডারে জরিমানা 

টিকিট কেটে লোকালের ভেন্ডার-কামরায় যাত্রার জন্য জরিমানা! ভাবতেই পারেননি চন্দননগরের নাডুয়ার অর্ঘ্য চট্টোপাধ্যায়। ভুক্তভোগী উত্তরপাড়া ভদ্রকালীর বিপিএমবি সরণির বাসিন্দা প্রভাস বিশ্বাস এবং তাঁর মতো আরও কয়েকজনও!

Advertisement

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়

চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০১৯ ০০:৪১
Share:

প্রতীকী ছবি।

টিকিট কেটে লোকালের ভেন্ডার-কামরায় যাত্রার জন্য জরিমানা! ভাবতেই পারেননি চন্দননগরের নাডুয়ার অর্ঘ্য চট্টোপাধ্যায়। ভুক্তভোগী উত্তরপাড়া ভদ্রকালীর বিপিএমবি সরণির বাসিন্দা প্রভাস বিশ্বাস এবং তাঁর মতো আরও কয়েকজনও! জরিমানা আদায়কারীরা ওই কামরায় উঠে নিজেদের ‘রেল পুলিশ’ পরিচয় দিয়েছে। সাফ জানিয়ে দিয়েছে, ভেন্ডার-কামরার নির্দিষ্ট টিকিট না-থাকলেই জরিমানা। দুরুদুরু বুকে কাকুতি-মিনতি করে টাকার অঙ্ক কমিয়ে সকলেই জরিমানা দিয়েছেন।

Advertisement

আর তারপরেই অর্ঘ্যবাবুরা জানতে পেরেছেন, ভয় দেখিয়ে তাঁদের থেকে টাকা আদায় করা হয়েছে। এর মধ্যে রেল পুলিশের কোনও ব্যাপারই নেই। পূর্ব রেলের হাওড়া-ব্যান্ডেল শাখায় তাঁরা দুষ্ট চক্রের কবলে পড়েছিলেন। পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক নিখিল চক্রবর্তী বলেন, ‘‘আমি নির্দিষ্ট ভাবে খোঁজ নিয়েছি, রেল সুরক্ষা বাহিনীর (আরপিএফ) কেউ ওইসব কাজে জড়িত নন। আর সাধারণ বা মাসিক (মান্থলি) টিকিট নিয়ে ভেন্ডার-কামরায় উঠতে যাত্রীদের কোনও বিধি-নিষেধ নেই। তবে অভিযোগ যখন উঠছে খতিয়ে দেখা হবে।’’

অর্ঘ্যবাবু হাওড়া পুরসভার অস্থায়ী কর্মী। কাজের সূত্রে ট্রেনে যাতায়াতের জন্য তাঁর ‘মান্থলি’ আছে। কিছুদিন আগে তিনি কাজে যাওয়ার জন্য চন্দননগর স্টেশন থেকে তাড়াহুড়োয় একটি ডাউন লোকালের ভেন্ডার-কামরায় ওঠেন। ট্রেন বালি স্টেশনে পৌঁছতেই সাধারণ পোশাকে কয়েকজন সেই কামরায় ওঠে। অর্ঘ্যবাবু জানান, রেল পুলিশ পরিচয় দিয়ে তারা টিকিট দেখতে চায়। তিনি ‘মান্থলি’ দেখান। অর্ঘ্যবাবু বলেন, ‘‘আমি বেআইনি করেছি বলে ওঁরা জানান। ভেন্ডারের মান্থলি ছাড়া নাকি ওই কামরায় ওঠা যায় না! সেই জন্য ১৬০০ টাকা জরিমানা চায় ওরা। শুনে আকাশ থেকে পড়ি।’’

Advertisement

ওই দিনেই জরিমানার চালান

ওই কামরার আরও অনেকের কাছেই একই ভাবে জরিমানা চাওয়া হয় বলে অভিযোগ। বেলুড় স্টেশনে অর্ঘ্যবাবু-সহ কয়েকজনকে নামানো হয়। অর্ঘ্যবাবু বলেন, ‘‘ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। আমার কাছে তখন অত টাকা ছিল না। ওরা লকআপে ঢুকিয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়। শেষে ৩৫০ টাকা দিয়ে ছাড় পাই। ওই দলের একজন নিজেকে রেল পুলিশের মুহুরি পরিচয় দিয়ে আমাকে একটি বিলও দেয়।’’

ভদ্রকালীর প্রভাস বিশ্বাসও ভুক্তভোগী। তাঁর কাছেও ট্রেনের বৈধ টিকিট ছিল। তাঁরও একই অভিজ্ঞতা হয়েছিল কিছুদিন আগে। প্রভাসবাবু বলেন, ‘‘আমাদের ট্রেন লিলুয়া ছাড়তেই তিন-চার জন উঠে পড়ে। তারা টিকিট দেখতে চায়। টিকিট দেখাতেই ওরা বলে, ভেন্ডার-কামরা ওই টিকিট বৈধ নয়। ওদের সঙ্গে বেলুড় স্টেশনে নামতে হয়। ৩৫০ টাকা গুনাগার দিয়ে রেহাই পাই।’’

ঘটনার পরে অর্ঘ্যবাবু হাওড়া রেল পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন। প্রভাসবাবুর দাবি, তিনিও অভিযোগ জানাতে গিয়েছিলেন। কিন্তু অভিযোগ নেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, ‘‘রেল পুলিশের হাওড়ার অফিস এবং টিকিট পরীক্ষকদের মেন অফিসে গেলেও অভিযোগে গুরুত্বই দেওয়া হয়নি।’’

প্রভাসবাবুর অভিযোগ নিয়ে হাওড়া রেল পুলিশ সুপার নীলাদ্রি চক্রবর্তী কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তিনি জানান, অভিযোগ নিশ্চয়ই খতিয়ে দেখা হবে। কারা যাত্রীদের সঙ্গে কোন পরিস্থিতিতে ওই ধরনের কাজ করছে, তার তদন্ত চলছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন