বা়ড়ি ভাঙায় সতর্কতা, কড়া হচ্ছে উত্তরপাড়া পুরসভা

স্বপ্ন সাজানো মেয়ে হেঁটে গেল শ্মশানে

ভাঙা বাড়ির খসে পড়া চাঙড়ের নীচে চাপা পড়ে গেলেন বাবা। লড়াই করার শক্ত চোয়াল তাই একেবারে ভেঙে পড়েছে শোকে।

Advertisement

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়

উত্তরপাড়া শেষ আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০০:০৯
Share:

স্বপ্নভঙ্গ: কান্নায় ভেঙে পড়েছেন সুকুমারবাবুর মেয়ে। ছবি: দীপঙ্কর দে

মাস খানেক আগেই ৩০ হাজার টাকা ধার করে মেয়েকে ভর্তি করে দিয়েছিলেন কলকাতার একটি বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে। পুষ্টি বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করা মেয়েও স্বপ্ন দেখেছিলেন নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে বাবার পাশে থাকার। সময় পেলেন না। ভাঙা বাড়ির খসে পড়া চাঙড়ের নীচে চাপা পড়ে গেলেন বাবা। লড়াই করার শক্ত চোয়াল তাই একেবারে ভেঙে পড়েছে শোকে।

Advertisement

বৃহস্পতিবার বিকেলে উত্তরপাড়ার সরোজ মুখার্জি স্ট্রিট ধরে দোকানে যাওয়ার পথে দুর্ঘটনার মুখে পড়েন সুকুমার দাস। সতর্কতা ছাড়াই রাস্তার উপর বাড়ি ভাঙার কাজ করছিলেন নির্মাণ শ্রমিকেরা। ভাঙা পড়া চাঙড়ের তলায় চাপা পড়ে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তাঁর।

তারপর থেকে আলো নিভে গিয়েছে সুকুমারবাবুর বাড়িতে। প্রায় দশ বছর আগে ছোট্ট একতলা বাড়িটি তৈরি করেছিলেন সুকুমারবাবু। স্ত্রী, দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে ছিল তাঁর সংসার। রোজগার বলতে রেডিমেড পোশাকের একটি ছোট্ট গুমটি দোকান। সামনেই পুজো, তাই নতুন জামাকাপড় কিনে এনেছিলেন দোকানে। সব শেষ হয়ে গিয়েছে বৃহস্পতিবার বিকেলে।

Advertisement

শুক্রবার ভর দুপুরে অন্ধকার ঘরে বসে ছিলেন একুশ বছরে স্বর্ণালী আর তাঁর অসুস্থ মা। বছর ছাব্বিশের ছেলে পার্থ দু’দিন ছুটে চলেছেন— কখনও থানা, কখনও শ্রীরামপুর হাসপাতালের লাশকাটা ঘরে। অনেক দিন ধরেই সুকুমারের স্ত্রী লিপিকাদেবী অসুস্থ। তাঁর স্নায়ুর রোগ রয়েছে।

স্বর্ণালী বলেন, ‘‘বাবা প্রায় একাই আমাদের এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন। দাদা একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরি পেয়েছে। আমিও ভেবেছিলাম চাকরি পাব, বাবার কষ্ট ঘুচবে!’’

প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, ছেলেমেয়ের পড়াশোনা নিয়ে কখনও আপোস করেননি সুকুমারবাবু। পার্থ, স্বর্ণালী দু’জনেই বিজ্ঞানের ছাত্র। সম্প্রতি একটি ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থায় ছোট একটি চাকরি পেয়েছেন পার্থ। স্বর্ণালী বিহারীলাল কলেজ থেকে পুষ্টিবিজ্ঞানে স্নাতক হয়েছেন। তারপরেই যাদবপুরের এক বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে স্নাতকোত্তর পড়া শুরু করেছিলেন তিনি।

কিন্তু সে পড়া কি শেষ হবে? আশঙ্কার মেঘ জমেছে। তবে সে কথা ভাবার অবকাশ এখনও পাননি স্বর্ণালী। বরং তাঁর মনে পড়ে, ‘‘মা অসুস্থ। বাবা চলে গেল। এ বার মাকে সামলাব কী করে!’’

বিকেলের দিকে দেহ এসেছে বাড়িতে। গুমোট ঘরে ফের উঠেছে কান্নার রোল। দাদার পাশে হেঁটে মেয়েও গিয়েছে বাবার শেষকৃত্যের কাজে। দুর্ঘটনার পর থেকেই সরোজ মুখার্জি স্ট্রিটে ‘নো এন্ট্রি’ বোর্ড লাগিয়েছে পুলিশ। শ্মশানে যেতেও সেই পথই ভরসা। স্বর্ণালীর মামা প্রদীপ দে বলেন, ‘‘বা়ড়ি ভাঙার সময় যদি রাস্তায় একটা দড়িও লাগিয়ে দিত, তা হলে এমন বিপদ ঘটত না আমাদের পরিবারে। ভগ্নীপতির বিমা করার মতো আর্থিক ক্ষমতা ছিল না। ফলে এর পরে আমার বোনের বা ভাগ্নীর কী হবে জানি না। সরকার যদি আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ভাবে, তবে ওদের খানিকটা সুরাহা হতে পারে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন