হাতির হানায় মৃত্যু ঘিরে ক্ষোভ

বৃহস্পতিবার ভোরে দলছুট হাতিটি প্রথমে আসে গোঘাটের পশ্চিমপাড়া এলাকায়। সেখানে দাপাদাপির পর পাশের ভাটশালা গ্রামে ঢুকে তাণ্ডব চালায়। এ দিন হাতিটি যখন জমির ফসল নষ্ট করছিল, সেই সময় পাশের একটি জমি থেকে আলু তোলার কাজে ব্যস্ত ছিলেন জাহিরুদ্দিন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

আরামবাগ শেষ আপডেট: ১০ মার্চ ২০১৮ ০১:০৩
Share:

মৃত: জাহিরউদ্দিন। নিজস্ব চিত্র

মাত্র দু’মাসের ব্যবধান। ফের হাতির হামলা ঘিরে আতঙ্ক ছড়িয়েছে গোঘাটে। বৃহস্পতিবার ভোরে পশ্চিম মেদিনীপুরের চমকাইতলা থেকে যে দলছুট হাতিটি গোঘাটে ঢুকেছিল, তার পায়ই পিষ্ট হয়ে মারা গিয়েছেন জাহিরউদ্দিন খাঁ (২৬) নামে বহড়াশোলের এক যুবক। তাণ্ডবে নষ্ট হয়েছে জমির ফসল, বাড়ি। জখম হয়েছে গরু-মোষও।

Advertisement

বৃহস্পতিবার ভোরে দলছুট হাতিটি প্রথমে আসে গোঘাটের পশ্চিমপাড়া এলাকায়। সেখানে দাপাদাপির পর পাশের ভাটশালা গ্রামে ঢুকে তাণ্ডব চালায়। এ দিন হাতিটি যখন জমির ফসল নষ্ট করছিল, সেই সময় পাশের একটি জমি থেকে আলু তোলার কাজে ব্যস্ত ছিলেন জাহিরুদ্দিন। পালাতে গিয়ে হাতির পায়ের নিচে চাপা পড়ে যান তিনি। শুক্রবার দে়ড় বছরের মেয়েকে কোলে নিয়ে জাহিরুদ্দিনের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘‘পরিবারে ওই লোকটাই রোজগার করত। এ বার সংসারটা ভেসে যাবে।’’

বন দফতর এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এর আগে ২০১৬ সালের ৩১ জানুয়ারি স্থানীয় ভেউটিয়ার দাড়িপাড়ায় পূজা রায় নামে এক মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী হাতির শুঁড়ের আছাড়ে জখম হয়েছিল। পরে সে আরামবাগ মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি থেকে পরীক্ষা দিয়েছিল। ২০১৭ সালের ২৩ ডিসেম্বর দলমার দলছুট দুই হাতির হানায় গোঘাটের পশ্চিমপাড়া অঞ্চলের কৃষ্ণগঞ্জ, বহড়াশোল, কর্ণপুর, বাবুরামপুর এবং শান্তিপুরে এলাকার চাষের ক্ষতি হয়। পরে হুলা পার্টি তাদের ফেরত পাঠায়। রামানন্দপুর গ্রামের এক বাসিন্দার অভিজ্ঞতা, “আগে দেখেছি বুনো দলছুট হাতি মানুষকে এড়িয়ে চলত। এখন তারা মানুষকে ভয় পাচ্ছে না। উল্টে হামলাও করছে।’’

Advertisement

হাতির গতিবিধি রোখা এবং জঙ্গলে ফেরানো নিয়ে বন দফতরের উদাসীনতার অভিযোগ তুলে সোচ্চার হয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। স্থানীয় বিধায়ক মানস মজুমদারেরও ক্ষোভ, ‘‘কেন বারবার হাতি ঢুকছে? এলাকার মানুষদের জীবন ও সম্পত্তি রক্ষায় সমস্যা থাকলে বন দফতরের আধিকারিকদের লিখিত জানাতে বলা হয়েছে।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘বন দফতরের আরামবাগ রেঞ্জের চাঁদুর বা গোঘাটের ভাদুরে হাতি তাড়ানোর দলের পরিকাঠামো গড়তে সুপারিশ করেছি। বাঁকুড়ার জয়পুর কিংবা পাঞ্চেত থেকে হুলা পার্টি আনতে সময় লাগছে। তাতেই বাড়ছে ক্ষয়ক্ষতি।”

বন দফতরের একটি সূত্রের মতে, দক্ষিণবঙ্গের গোঘাট সংলগ্ন বাঁকুড়া এবং পশ্চিম মেদিনীপুরের জঙ্গল ক্রমশ কমছে। আর তার জন্যই হাতিদের গতিবিধিতে ব্যাঘাত ঘটছে। একটি হাতি সারা দিনে প্রায় ৪৫০ কিলোগ্রাম খাবার খায়। সমপরিমাণ খাবার তারা নষ্ট করতে পছন্দ করে। জঙ্গলে সেই ঘাটতির জেরেই লোকালয়ের দিকে পা বাড়াচ্ছে তারা।

তবে প্রতি বছর গোঘাটে হাতি ঢুকছে বলে মানতে নারাজ ডিভিশনাল (হাওড়া) ফরেস্ট অফিসার নিরঞ্জিতা মিত্র। তিনি বলেন, ‘‘গোঘাটে গত ২০১৫ সালের পর এ বার পথ ভুলে হাতি ঢুকেছে। হাতি তাড়াতে আমরা দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন