নির্বাচনের দিন ঘোষণা হয়ে গিয়েছে। খাতায়-কলমে বুধবার থেকে শুরু হয়েছে মনোনয়ন জমা নেওয়ার কাজও। কিন্তু উলুবেড়িয়ায় আসন্ন পুরভোটে বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করতে পারেনি কোনও দলই। ফলে, এ দিন মনোনয়নও জমা দেননি কেউ। তবে, চারটি বড় দলই জানিয়েছে, তারা ৩২টি আসনেই প্রার্থী দেবে। অর্থাত্, লড়াই চর্তুমুখী।
উলুবেড়িয়া পুরসভার নির্বাচন আগামী ২৫ এপ্রিল। মনোনয়ন জমা নেওয়ার শেষ তারিখ আগামী ২৫ মার্চ। এই পুরসভায় গতবারে আসন ছিল ২৯টি। এ বার বেড়ে হয়েছে ৩২টি। তবে, প্রার্থী বাছাই নিয়ে ক্ষোভ-বিক্ষোভ শাসক দলের অন্দরেই বেশি। বাউড়িয়ায় ৭ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল নেতা-কর্মীদের একাংশ প্রার্থী বাছাইকে কেন্দ্র করে দলীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে দিন দুয়েক আগেই বিক্ষোভ দেখান। কম-বেশি এই ছবি আছে অন্য আরও কয়েকটি ওয়ার্ডে।
২০১১ সালের বিধানসভা এবং ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের ফলের নিরিখে এই পুরসভায় ঢের এগিয়ে আছে তৃণমূল। তার উপরে গতবারের বোর্ডের একজন বড় মাপের কংগ্রেস নেতা তথা কাউন্সিলরকে দলে এনে চমক দিতে চাইছে তারা। অবশ্য তাঁকে প্রার্থী করা হবে কিনা সে বিষয়ে এখনও কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি বলে তৃণমূল নেতারা জানান।
উলুবেড়িয়ার তৃণমূল সাংসদ সুলতান আহমেদ এবং উলুবেড়িয়া দক্ষিণ কেন্দ্রের বিধায়ক পুলক রায়ের দাবি, “কোথাও কোনও বিক্ষোভ নেই. প্রার্থী-তালিকা প্রায় চূড়ান্ত। আমরা ধাপে ধাপে মনোনয়ন জমা দেব। চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা না-ও হতে পারে।”
২০১০ সালে কংগ্রেস এবং তৃণমূল জোট করে এই পুরসভায় ক্ষমতায় আসে। দু’দলই ১১টি করে আসনে যেতে। তবে, চেয়ারম্যান নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দু’দলের কাজিয়া বাধে। শেষ পর্যন্ত কংগ্রেস চেয়ারমান পদ পেয়ে ক্ষমতা দখল করলেও তা ভোগ করে মাত্র আট মাস। কংগ্রেসের বেশ কয়েক জন কাউন্সিলর তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় বোর্ড ভেঙে যায়। ক্ষমতা দখল করে তৃণমূল। তারপরেও কংগ্রেসের রক্তক্ষরণ অব্যাহত থাকে। আট কাউন্সিলর কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে দেখা যায় কংগ্রেসের ভোটের হার তলানিতে ঠেকেছে। কিন্তু কংগ্রেস নেতৃত্ব এ কথা মানতে নারাজ।
কংগ্রেসের দাবি, শীঘ্রই প্রার্থী-তালিকা প্রকাশ করা হবে। হাওড়া জেলা কংগ্রেস সভাপতি কাজি আব্দুল রেজ্জাক বলেন, “প্রার্থী হওয়ার জন্য আমাদের দলে যে ভাবে অনেকেই আগ্রহ দেখাচ্ছেন, তাতে মনে হচ্ছে কাউন্সিলরেরা দলত্যাগ করলেও মানুষ আমাদের সঙ্গেই আছেন।”
আজ, শুক্রবার তাদের প্রার্থী-তালিকা প্রকাশ করা হবে জানান জেলা বামফ্রন্ট সভাপতি তথা সিপিএমের জেলা সম্পাদক বিপ্লব মজুমদার। ২০১০ সালে বামফ্রন্ট পাঁচটি আসন পায়। দু’জন ফরওয়ার্ড ব্লকের, তিন জন সিপিএমের। পরে ফরওয়ার্ড ব্লকের এক কাউন্সিলর তৃণমূলে যোগ দেন। এ বার ফরওয়ার্ড ব্লক ১৩টি আসন দাবি করেছে বলে বামফ্রন্টের অন্দরের খবর। সিপিআইও আসন চেয়েছে। যদিও সিপিআই কোনওদিন ওই পুরসভায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেনি। এ নিয়ে শরিকি বিবাদ বেঁধেছে বলে জেলা বামফ্রন্টের নেতাদের একাংশের দাবি। যদিও বামফ্রন্টের জেলা সভাপতি তথা সিপিএমের জেলা সম্পাদক বিপ্লব মজুমদার বলেন, “কোনও সমস্যা নেই।”
লোকসভা নির্বাচনের ফলের নিরিখে এ বারে বিজেপি যথেষ্ট দাপট নিয়ে নির্বাচনে লড়বে বলে স্থানীয় রাজনৈতিক মহলের ধারণা। গত লোকসভা নির্বাচনে বেশ কিছু ওয়ার্ডে তারা তৃণমূলকে পিছনে ফেলে দিয়েছে। কাল, শনিবার বিজেপির প্রার্থী তালিকা প্রকাশিত হবে বলে জানিয়েছেন দলের হাওড়া (গ্রামীণ) জেলা সভাপতি গৌতম রায়।