Indian Railways

হকারহীন ট্রেনে ‘সচেতন’ যাত্রা

প্ল্যাটফর্মে কার্যত সব দোকানেই তালা। কেটলি হাতে সুর করে ‘চায়ে গরম’ হাঁকও নেই। আছে শুধু পুলিশের নজরদারি।

Advertisement

প্রকাশ পাল

ব্যান্ডেল শেষ আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০২০ ০৫:৩৮
Share:

ব্যান্ডেল স্টেশনে ঢোকার মুখে থার্মাল স্ক্রিনিং এবং পুলিশের প্রচার চলছে। ছবি: তাপস ঘোষ

জুতো পালিশের জন্য মুচির অনুরোধ নেই।

Advertisement

চা-বিস্কুট থেকে চপ-মুড়ি— ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা হরেক কিসিমের স্টল সব বন্ধ।

প্ল্যাটফর্মের শুরু থেকে শেষ প্রান্ত জুড়ে গোল দাগ কাটা।

Advertisement

কড়া নজর খাকি উর্দিধারীদের।

সকাল ন’টার শ্রীরামপুর স্টেশন বুধবার সকলের কাছেই যেন অচেনা! অফিসের ব্যস্ত সময়ে টিকিট কাউন্টারে অবশ্য চেনা ভিড় ফিরেছে। তার সামনে স্থানুবৎ দাঁড়িয়ে দুই পুলিশ। টিকিট কাউন্টার থেকে বেরিয়ে প্ল্যাটফর্মে ওঠার মুখ থেকেই অবশ্য ভাবগতিক অচেনা ঠেকে! অপেক্ষমাণ সিভিক ভলান্টিয়ার তরুণীর হাতের যন্ত্রে শরীরের তাপমাত্রা মাপার পরে এগোনোর ছাড়পত্র মেলে।

এই সময়ের আপ ব্যান্ডেল লোকাল বিলকুল ফাঁকা থাকবে, কেউ কোনও দিন ভেবেছিলেন! বসার তিনটি আসনের মাঝেরটায় ‘কাটা’ চিহ্ন। অর্থাৎ, সেখানে বসতে মানা। রেলের তরফে হিন্দিতে সে কথা লেখাও আছে। যাত্রী যতই কম থাক— সচেতনতা ভরপুর। যে মানুষটি কার্যত একা কামরার একটি খোপ দখল করে আছেন, তাঁর মুখেও মাস্ক। মানব সভ্যতার নয়া বর্ম। ট্রেনঢোকে শেওড়াফুলিতে। সেখানেও কোলাহল নেই। একে একে বৈদ্যবাটী, ভদ্রেশ্বর, মানকুণ্ডু, চন্দননগর, চুঁচুড়া, হুগলি— ট্রেনের কামরা থেকে চোখ মেলে দেখা গেল সর্বত্রই একই অবস্থা। স্টেশনগুলি যেন তাদের চরিত্র হারিয়েছে! ট্রেনের কামরায় বাদাম, চিঁড়েভাজা, কাঠিভাজা নিয়ে বিচিত্র সুরে হকারের হাঁকডাক নেই। এক সহযাত্রীর স্বগতোক্তি, ‘‘কেমন আজব লাগছে, বলুন! কী সরগরম থাকে এই সব স্টেশন! পুরো অচেনা লাগছে।’’

ব্যান্ডেল স্টেশনেরও একই চেহারা। এই জংশন স্টেশন হয়ে প্রতিদিন বহু ট্রেন চলে। কাতারে কাতারে মানুষের আনাগোনা লেগে থাকে। প্ল্যাটফর্মে কার্যত সব দোকানেই তালা। কেটলি হাতে সুর করে ‘চায়ে গরম’ হাঁকও নেই। আছে শুধু পুলিশের নজরদারি। প্ল্যাটফর্ম থেকে বেরোতেই রাস্তায় যাওয়ার নির্দিষ্ট পথ দেখিয়ে দেন পুলিশকর্মী।

এই স্টেশনে যেন বজ্রআঁটুনি! করোনার ছোঁয়াচ এড়াতে তুঙ্গে তৎপরতা। স্টেশন চত্বর পুলিশে ছয়লাপ। নির্দিষ্ট পথ দিয়েই ঢুকতে হচ্ছে যাত্রীকে। শরীরের তাপমাত্রা না মেপে ভিতরে যাওয়ার জো নেই। মজুত রয়েছে মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজ়ার। তবে, দীর্ঘ সময়েও এমন কাউকে চোখে পড়ল না, যিনি মাস্ক ছাড়া ঢুকতে যাচ্ছেন। রেল পুলিশের কর্মী জানালেন, ভোর থেকে অনেক মানুষের তাপমাত্রা মেপেছেন। কারও তাপমাত্রা বেশি মেলেনি। কাউকে মাস্কও দিতে হয়নি। সবাই মাস্ক পরে আসছেন। পুলিশের মাস্ক পড়েই আছে।

স্টেশন চত্বরে করোনা বিধি নিয়ে পোস্টার সাঁটা। এ নিয়ে ক্রমাগত প্রচারও চলছে ‘পাবলিক অ্যাড্রেস সিস্টেম’-এ। কখনও হ্যান্ড মাইকে। রেল সুরক্ষা বাহিনীর আধিকারিকরা সরেজমিনে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। উটকো লোক দেখলে সরে যেতে বলা হচ্ছে।

সব দেখেশুনে অনেকেই মানলেন, প্রথম দিন ভালয় ভালয় উতরে গেল। তবে, ভিড় বাড়তে শুরু করলে এই ব্যবস্থা ‘ফুল প্রুফ’ হয় কিনা, সেই প্রশ্নও তাঁরা ছুড়ে দিলেন। কেউ বললেন, শুধু ব্যান্ডেলেই কড়া সুরক্ষা ব্যবস্থা নিলে হবে না, অন্য স্টেশনে ‘ফস্কা গেরো’ থাকলে সব মাঠে মারা পড়বে।

স্টেশনের বাইরে অপেক্ষমাণ অটো-টোটো-রিক্‌শার সারি। এই চেনা ছবি ফিরেছে সাড়ে সাত মাস পরে। চালকেরা হাঁক পাড়ছেন— ব্যান্ডেল মোড়, ডানলপ, চুঁচুড়া, ঘড়ির মোড়…।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন