সঙ্গী তরুণীকে কুকথার প্রতিবাদ করে থানায় রাতভর

পুলিশ অভিযোগ মানেনি। চন্দননগর কমিশনারেটের এক কর্তার দাবি, ‘‘ঘটনাটি নিয়ে এলাকায় উত্তেজনা ছিল। ওই চার তরুণ আক্রান্ত হতে পারেন, এই আশঙ্কাতেই পুলিশ ওঁদের থানায় নিয়ে আসে। অন্য কিছু নয়। কোনও হেনস্থা করা হয়নি।’’ একই সঙ্গে ওই পুলিশকর্তা জানিয়েছেন, যে যুবকের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠছে, তার বিরুদ্ধে থানায় কোনও লিখিত অভিযোগ হয়নি। পুলিশ সব দিক খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেবে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

উত্তরপাড়া শেষ আপডেট: ১৭ অগস্ট ২০১৮ ০২:১৪
Share:

সঙ্গী তরুণীকে কুকথার প্রতিবাদ করেছিলেন চার তরুণ। আর তাঁদেরই রাতভর ঠাঁই হল থানায়!

Advertisement

বুধবার থেকে এই ঘটনাকে ঘিরে সরগরম উত্তরপাড়া। বৃহস্পতিবার সকালে ওই চার তরুণ বাড়ি ফিরলেও পরিবারের লোকজন পুলিশের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। রাতভর থানায় চার তরুণকে হেনস্থার অভিযোগও তুলেছেন তাঁরা। এক অভিভাবক তো বলেই দিলেন, ‘‘এরপর তো আর কেউ কোনও অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে সাহস করবে না। এ কেমন বিচার পুলিশের!’’

পুলিশ অভিযোগ মানেনি। চন্দননগর কমিশনারেটের এক কর্তার দাবি, ‘‘ঘটনাটি নিয়ে এলাকায় উত্তেজনা ছিল। ওই চার তরুণ আক্রান্ত হতে পারেন, এই আশঙ্কাতেই পুলিশ ওঁদের থানায় নিয়ে আসে। অন্য কিছু নয়। কোনও হেনস্থা করা হয়নি।’’ একই সঙ্গে ওই পুলিশকর্তা জানিয়েছেন, যে যুবকের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠছে, তার বিরুদ্ধে থানায় কোনও লিখিত অভিযোগ হয়নি। পুলিশ সব দিক খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেবে।

Advertisement

কী হয়েছিল বুধবার?

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, উত্তরপাড়া টেলিফোন এক্সচেঞ্জ লাগোয়া এলাকায় ওই সন্ধ্যায় চার তরুণের সঙ্গে গল্প করছিলেন তাঁদের বান্ধবী। সেই সময় মদ্যপ অবস্থায় এক যুবক এসে তরুণীকে লক্ষ করে কটূক্তি করতে থাকে বলে অভিযোগ। চার তরুণ প্রতিবাদ জানান। তাতেও কটূক্তি থামেনি বলে অভিযোগ। এর পরে দু’পক্ষের বচসা এবং তার পরে ধাক্কাধাক্কি, হাতাহাতি হয়। এর মধ্যেই পুলিশে ফোন যায়। পুলিশ আসার আগেই অবশ্য অভিযুক্ত চম্পট দেয়। পুলিশ চার তরুণকে থানায় নিয়ে যায়। তরুণী বাড়ি ফিরে যান। খবর পেয়ে ওই চার জনের অভিভাবকেরাও থানায় যান।

যে যুবকটিকে নিয়ে গোলমাল, থানায় অবশ্য তার বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ হয়নি। তবে, স্থানীয় লোকজন এবং পুলিশের একটি অংশের দাবি, ওই যুবক শাসকদলের ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। ওই রাতে কিছু স্থানীয় তৃণমূল কর্মী-সমর্থকও থানায় যান। তা দেখে এক অভিভাবকের ক্ষোভ, ‘‘এখন শাসকদলের লোক হলেই সাত খুন মাফ! কোনও বিচার নেই! কমবয়সী ওই যুবক মামলা-মকদ্দমার জড়িয়ে যাবে, তাই চুপ করে আছি। এটা ঠিক হল না। তবে, শাসকদলের লোকেদের দেখা উচিত, অন্যায়টা কে করল।’’

ঘটনাটি নিয়ে শাসকদলের মধ্যে চাপান-উতোর শুরু হয়েছে। পুরপ্রধান দিলীপ যাদব বলেন, ‘‘দলের সঙ্গে যুক্ত থাকার অছিলায় এখন অনেকেই দেখছি, মানুষের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করাটা অভ্যাসে পরিণত করে ফেলেছেন। এটা ঠিক নয়। পুলিশ, প্রশাসনের কাছেও দেখছি দলের লোক হলেই সবাই চোখ বন্ধ করে রাখছেন। আইন সকলের জন্য সমান।’’

কিছুটা অন্য সুর শোনা গিয়েছে এলাকার তৃণমূল বিধায়ক প্রবীর ঘোষালের গলায়। তিনি বলেন, ‘‘শুনেছি, ওই তরুণদের ভূমিকাও ওই রাতে ঠিক ছিল না। ওঁরা ওখানে কী করছিলেন? সবটাই খতিয়ে দেখা উচিত।’’

যা শুনে অবাক এক অভিভাবক। তাঁর প্রশ্ন, ‘স্বাধীনতা দিবসের সন্ধ্যায় বন্ধুর সঙ্গে বন্ধু গল্প করতেও পারবে না?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন