হতাশ: মেয়ের স্বপ্নপূরণে ধাক্কা। কেঁদে ফেলেছেন এক অভিভাবিকা। —নিজস্ব চিত্র
কেউ জমি বিক্রি করে মেয়েকে নার্স হওয়ার প্রশিক্ষণ নিতে পাঠিয়েছেন। কারও জমানো সব টাকা চলে গিয়েছে মেয়ের ওই প্রশিক্ষণের কোর্স-ফি মেটাতে। তবু চোখে স্বপ্ন ছিল। নিজের পায়ে দাঁড়াবে মেয়ে। স্বপ্ন খান খান। সকলে দিশেহারা।
বেআইনি ভাবে চলা রাজ্যের যে ন’টি নার্সিং কলেজের বিরুদ্ধে এফআইআরের নির্দেশ দিয়েছেন রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী, তার মধ্যে রয়েছে উলুবেড়িয়ার ফুলেশ্বরের সঞ্জীবন হাসপাতালের নার্সিং কলেজও। সেইমতো তদন্ত শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন হাওড়ার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ভবানী দাস। বুধবার ওই কলেজের সামনে দাঁড়িয়েই নিজেদের অসহায়তার কথা বলছিলেন ছাত্রছাত্রী এবং তাঁদের অভিভাবকেরা। তাঁরা বিক্ষোভ দেখান। এক সপ্তাহের মধ্যে টাকা ফেরতেরও দাবি তোলেন।
ওই কলেজের ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ৩৫০। অনেকে দূরদূরান্ত থেকে এসেও ভর্তি হয়েছেন। তাঁদের অভিযোগ, কর্নাটক নার্সিং কাউন্সিলের অধীনস্থ বেঙ্গালুরুর একটি ভুয়ো কলেজে ভর্তির নাম করে লক্ষ লক্ষ টাকা নিয়েছে ফুলেশ্বরের বেসরকারি নার্সিং কলেজটি। বাস্তবে বেঙ্গালুরুর ওই কলেজের কোনও অস্তিত্বই নেই বলে এ দিন তাঁরা জানতে পেরেছেন।
যদিও ফুলেশ্বরের বেসরকারি নার্সিং কলেজের অধিকর্তা শুভাশিস মিত্রের দাবি ‘‘আমরা সমস্ত নিয়ম মেনে প্রশিক্ষণ চালাচ্ছি। ছাত্রছাত্রীদের বলা হয়েছে, নার্সিং পরীক্ষায় কর্নাটক নার্সিং কাউন্সিল থেকে পাশ করলে, সব জায়গায় চাকরির সুবিধা পাওয়া যাবে। যে সব ছাত্রছাত্রী টাকা ফেরত চাইছেন, তাঁদের আগামী তিন মাসের মধ্যে টাকা ফেরত দেওয়ার চেষ্টা করব।’’
খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন দেখে ফুলেশ্বরের ওই নার্সিং কলেজে ভর্তি হয়েছেন অনেকে। তাঁরা জানান, তিন বছরের ‘কোর্স-ফি’ ৩ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা। ভর্তির সময় অগ্রিম নেওয়া হয় দেড় লক্ষ টাকার কাছাকাছি। হস্টেল-ফি অতিরিক্ত। বিক্ষোভকারীদের দাবি, ভর্তির সময় বলা হয়েছিল, কর্নাটক নার্সিং কাউন্সিলের অধীনে ভর্তি করা হচ্ছে। সারা বছর ফুলেশ্বরের এই নার্সিং কলেজে ক্লাস হবে। শুধুমাত্র পরীক্ষার সময় একবার এক সপ্তাহের জন্য কর্নাটক যেতে হবে। প্রশিক্ষণ শেষে পাওয়া শংসাপত্র ওয়েস্ট বেঙ্গল নার্সিং কাউন্সিলে অন্তর্ভুক্ত করে দেওয়া হবে। সকলের চাকরি সুনিশ্চিত।
কিন্তু ফুলেশ্বরের নার্সিং কলেজ যে বেআইনি, এ কথা জানার পরেই ভেঙে পড়েন সকলে। ঝাড়গ্রামের দোয়েল মালাকার এখানকার ছাত্রী। আড়াই বছর আগে বাবা মারা গিয়েছেন। মা কষ্ট করে সংসার চালান। দোয়েল বলেন, ‘‘বাবার জমানো টাকা দিয়ে ভর্তি হয়েছি। ভেবেছিলাম চাকরি করে সংসার চালাব। এখন দেখছি সব টাকাটাই আমাদের থেকে আত্মসাৎ করে নিয়েছেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। এ বার কী করব, ভাবতে পারছি না।’’
ঝাড়গ্রামের গিধনির চাষি খোকন মাহাতো এক বিঘা জমি বিক্রি করে মেয়ে রেণুকাকে এখানে পড়তে পাঠিয়েছিলেন। তিনিও হতাশ। খোকন বলেন, ‘‘দেখছি পুরো টাকাটাই জলে গেল।’’
হুগলির চন্দননগরের সুপর্ণা মজুমদার কলেজে পড়া বন্ধ করে বাবার উপার্জনের সমস্ত টাকা ব্যয় করে নার্স হওয়ার জন্য ভর্তি হয়েছিলেন এখানে। সুপর্ণা দিশেহারা। একই অবস্থা অন্যদেরও।