প্রহৃত তৃণমূল নেতা রামপদ আরামবাগ হাসপাতােল ভর্তি। — ছবি: মোহন দাস।
লোকসভা ভোটের ফল ঘোষণা হয়েছে বৃহস্পতিবার। তারপর দু’দিন পেরিয়ে গেলেও হুগলিতে রাজনৈতিক হিংসা থামল না। মারধর, পার্টি অফিস দখল, হুমকি—বাদ নেই কিছুই। প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে বিজেপির বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলেছে রাজ্যের শাসকদল।
সবচেয়ে বেশি অশান্তির অভিযোগ উঠছে হুগলির আরামবাগ থেকে। এই লোকসভা আসনে কোনও মতে মুখরক্ষা করেছে তৃণমূল। গণনায় গোলমালের অভিযোগ তুলেছে বিজেপি। নির্বাচন কমিশনের কাছে তারা পুনগর্ণনার আর্জিও জানিয়েছে। এ নিয়ে কমিশন এখনও কোনও সিদ্ধান্ত জানায়নি। এর মধ্যেই মহকুমার বিভিন্ন জায়গায় তৃণমূলের অন্তত ২০টি কার্যালয় দখলের অভিযোগ উঠেছে বিজেপির বিরুদ্ধে। শনিবার সকালে আরামবাগের সিয়ারা গ্রামের তৃণমূল নেতা রামপদ সাঁতরাকে রাস্তায় ফেলে লাঠি-বাঁশ দিয়ে বেদম মারধরের অভিযোগ ওঠে গ্রামেরই জনা পনেরো বিজেপি কর্মী-সমর্থকের বিরুদ্ধে। গুরুতর জখম ওই নেতাকে আরামবাগ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। রামপদর স্ত্রী তথা স্থানীয় আরান্ডি-২ পঞ্চায়েতের প্রাক্তন উপপ্রধান মিতা সাঁতরার অভিযোগ, “সিপিএমের ছেলেগুলো এখন নিজেদের বিজেপির দাবি করে গ্রাম তোলপাড় করছে।” পুলিশ জানায়, অভিযুক্তদের ধরার চেষ্টা চলছে।
সালেপুর, হেলারচক, নৈসরাই, তিরোল, বাতানল, চকফাজিল ইত্যাদি গ্রামেও তৃণমূল কর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি এবং কয়েকজনকে চড়-থাপ্পড় মারার অভিযোগ উঠেছে বিজেপির বিরুদ্ধে। গোঘাটেরও রঘুবাটী, বেঙ্গাই, মধুবাটী, হাজিপুর ইত্যাদি অঞ্চলে বিজেপি মারধর করছে এবং বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দিচ্ছে বলে তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের অভিযোগ। শুক্রবার আরামবাগের কাচগোড়িয়া গ্রামে কয়েকজন তৃণমূল সমর্থকের ঘর ভাঙচুর হয়।
গোঘাটের তৃণমূল বিধায়ক মানস মজুমদারের দাবি, ‘‘বিজেপি এলাকায় ভয়ঙ্কর সন্ত্রাস শুরু করেছে। ওদের ভোট দিয়ে যাঁরা ক্ষমতায় আনলেন সেই সাধারণ ভোটাররাই নিন্দা করছেন।” একই বক্তব্য দলের আরামবাগ ব্লক সভাপতি স্বপন নন্দীরও। বিশৃঙ্খলার কথা স্বীকার করে বিজেপির আরামবাগ সাংগঠনিক জেলা সম্পাদক বিমান ঘোষ বলেন, “ঘটনাগুলো প্রকৃতপক্ষে কারা ঘটাচ্ছে তা আমাদের কাছে পরিষ্কার নয়। দলের নেতাকর্মীদের বদলা না-নিতে সতর্ক করা হয়েছে। অশান্তি করলে দল থেকে বহিষ্কার করা তো হবেই, পুলিশকেও কঠোর ব্যবস্থা নিতে বলে দেওয়া হয়েছে।”
শুক্রবার রাতে জাঙ্গিপাড়ার রাজবলহাট-২ পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান সাধন ঘোষ আক্রান্ত হন। বিজেপি সমর্থকেরা তাঁকে বেধড়ক মারধর করেন বলে অভিযোগ। শনিবার অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবিতে থানায় থানায় বিক্ষোভ হয়। এ দিন সকালেই হরিপালের গোপীনগরের আশুতোষ পঞ্চায়েতের উপপ্রধান শঙ্করী মাঝির স্বামীকে বেধড়ক মারধর এবং তাঁর হোটেলে ভাঙচুর চালানো হয় বলে অভিযোগ। উপপ্রধান বলেন, ‘‘ওরা ৩০-৩৫ জন লাঠিসোটা নিয়ে বেমক্কা হামলা চালায়। হোটেলের টিভি, আলমারি ভাঙচুর করা হয়।’’
তারকেশ্বরের বিভিন্ন এলাকায় টাঙানো তৃণমূলের দলীয় পতাকা আবার বিজেপি-র মারমুখী কর্মীরা ফেলে দেয় বলে অভিযোগ। প্রতিবাদে তারকেশ্বর পুরসভার ১৩ জন কাউন্সিলর থানায় স্মারকলিপি দেন। বিজেপি-র হুগলি জেলার সাংগঠনিক সভাপতি সুবীর নাগ বলেন, ‘‘আমরা বারে বারেই দলের কর্মীদের সতর্ক করেছি। দলের কোনও স্তরের নেতা বা কর্মীরা গুন্ডামি করতে পারবে না। দল ব্যবস্থা নেবে। মানুষ আমাদের উপর যে আস্থা রেখেছেন, তাকে সম্মান জানাতে হবে।’’
হাওড়ার শ্যামপুরের ওসমানপুর গ্রামে আবার বিজেপির দলীয় কার্যালয়ে ভাঙচুর চালানোর অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। শুক্রবার রাতের ঘটনা। বিজেপির অভিযোগ, কার্যালয়ের টিভি, ঘরের দরজা ভেঙে দেওয়া হয়। প্রতিবাদ করায় কয়েকজন গ্রামবাসীকেও পেটানো হয়। বিজেপি নেতা স্নেহাশিস চক্রবর্তী বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত তৃণমূলের দখলে থাকা সত্ত্বেও এই এলাকার দু’টি বুথে বিজেপি প্রার্থী বেশি ভোট পেয়েছেন। সেই আক্রোশেই তৃণমূল আমাদের দলীয় কার্যালয়ে হামলা চালায়। বিষয়টি পুলিশকে জানিয়েছি।’’ অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে গ্রামীণ
জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান। তৃণমূল নেতা শ্যামসুন্দর মেটিয়া বলেন, ‘‘ছোট্ট একটা ভুল বোঝাবুঝির ঘটনা। মিটে গিয়েছে।’’