সৎ মায়ের হাতে মার, বাঁচাল চাইল্ড লাইন

প্রশাসনিক আধিকারিকরা জানান, মেয়েটার উপর বাড়িতে অত্যাচারের ধরন শুনে তাঁরা স্তম্ভিত। হরিপালের বিডিও বিমলেন্দু নাথ বলেন, ‘‘মেয়েটির সুরক্ষার দায়িত্ব প্রশাসন নেবে। হোমে থেকেই সে যাতে পড়াশোনা এবং স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে, সেই চেষ্টা করা হচ্ছে।’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

হরিপাল শেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০১৭ ১৯:০০
Share:

প্রতীকী ছবি।

স্কুলে ঢুকেই শিক্ষকের কাছে কাঁদতে কাঁদতে এগারো বছরের মেয়েটা জানিয়েছিল, বাবা আর সৎমা তাকে খুব মেরেছে। শুধু তাই নয়, দিন কয়েক আগে গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টাও করেছিলেন তাঁরা। এক ছুটে সে তাই চলে এসেছে স্কুলে। আর বাড়ি সে ফিরতে চায় না।

Advertisement

এমন ঘটনা শুনে প্রথমে থতমত খেয়ে যান স্কুলের শিক্ষকরা। তারপর স্কুল কর্তৃপক্ষ খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, আগের রাত থেকে মেয়েটাকে বাড়িতে কিছু খেতে দেওয়া হয়নি। স্কুলে তাকে মিড-ডে-মিল খাওয়ানো হয়। টিচার ইন-চার্জ বিডিও এবং চাইল্ড লাইনে খবর দেন। প্রশাসনের হস্তক্ষেপে মেয়েটিকে হোমে পাঠানো হয়েছে। স্কুল কর্তৃপক্ষের তরফে এ ব্যাপারে থানায় লিখিত অভিযোগ জানানোর পর গ্রেফতার করা হয়েছে মেয়েটির বাবা ও সৎমাকেও। মঙ্গলবার হরিপালের ঘটনা।

প্রশাসনিক আধিকারিকরা জানান, মেয়েটার উপর বাড়িতে অত্যাচারের ধরন শুনে তাঁরা স্তম্ভিত। হরিপালের বিডিও বিমলেন্দু নাথ বলেন, ‘‘মেয়েটির সুরক্ষার দায়িত্ব প্রশাসন নেবে। হোমে থেকেই সে যাতে পড়াশোনা এবং স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে, সেই চেষ্টা করা হচ্ছে।’’

Advertisement

মেয়েটি হরিপালের নারায়ণপুরে। নারায়ণপুরের একটি জুনিয়র হাইস্কুলের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী। মা মারা গিয়েছেন। বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন। সৎমা তার উপর দীর্ঘদিন ধরেই শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন করেন। বাবাও নেশা করে এসে মেয়েকে মারেন। মেয়েটি প্রশাসনিক আধিকারিকদের কাছে জানান, সোমবার রাতে তাকে খেতে দেওয়া হয়নি। মঙ্গলবার সকালে খিদে পাওয়ায় সৎমায়ের কাছে খেতে চায়। কিন্তু খাবার দেওয়া দূর অস্ত, দু’জনে মিলে তাকে মারতে শুরু করেন। এর আগে মেয়েটির গলায় দড়ির ফাঁস দিয়ে ঝুলিয়ে দেওয়ারও চেষ্টা করা হয়েছিস বলেও অভিযোগ।

খবর পেয়ে বিডিও তথা ব্লক চাইল্ড প্রোটেকশন কমিটির সচিব বিমলেন্দু নাথ বিষয়টিতে মধ্যস্থতা করেন। চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির (সিডব্লিউসি) নির্দেশে মেয়েটিকে উত্তরপাড়ার হোমে পাঠানো হয়। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক জানান, মেয়েটির গলায় কালশিটের দাগ ছিল। সিডব্লিউসি-র আধিকারিকরা জানান, পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে মেয়েটির বাবা এবং সৎমায়ের বিরুদ্ধে উপযুক্ত আইনি ব্যবস্থা নিতে। গোটা বিষয়টি তদন্ত করে কমিটির কাছে রিপোর্ট পাঠাতেও বলা হয়েছে।

জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, বাড়িতে শিশুর উপর অত্যাচার, বিশেষত সৎমা বা সৎবাবার হাতে নির্যাতনের ঘটনা প্রায়ই শোনা যায়। সম্প্রতি লিলুয়ায় সৎমায়ের বাপেরবাড়িতে অত্যাচারের জেরে একটি মেয়ে পালিয়ে আসে। ব্যান্ডেল স্টেশনে জিআরপি তাকে উদ্ধার করে। সে-ও হোমে রয়েছে। কয়েক মাস আগে পান্ডুয়ায় সৎমায়ের বিরুদ্ধে নাবালক দুই ভাইবোনকে মারধরের অভিযোগ ওঠে সৎমায়ের বিরুদ্ধে। মনোবিদ মোহিত রণদীপ এ বিষয়ে বলেন, ‘‘সমাজের একটা বড় অংশে বাড়িতে শিশুদের মারধর করা প্রচলিত ব্যাপার। আর সৎ ছেলে বা মেয়ে বিশেষত মহিলাদের কাছে বোঝা এবং স্বাভাবিক জীবনযাপনের পথে বাধা বলে মনে হয়। তাই, কারণে-অকারণে তাদের বেদম মারধর করতেও তাঁরা পিছুপা হন না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন