নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তায় স্বর্ণকাররা

প্রথমে সোনারপুর। তার পরে খড়দহ। পর পর দু’দিনে কলকাতা লাগোয়া দু’টি এলাকায় সোনার দোকান এবং স্বর্ণঋণ সংস্থায় যে ভাবে দুষ্কৃতীরা লুঠপাট চালিয়েছে, তা টিভিতে দেখে শিউরে উঠেছেন সাধারণ মানুষ।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০১৭ ০২:০৬
Share:

অরক্ষিত: হুগলির চুঁচুড়ায় সোনার দোকান। ছবি: তাপস ঘোষ

প্রথমে সোনারপুর। তার পরে খড়দহ।

Advertisement

পর পর দু’দিনে কলকাতা লাগোয়া দু’টি এলাকায় সোনার দোকান এবং স্বর্ণঋণ সংস্থায় যে ভাবে দুষ্কৃতীরা লুঠপাট চালিয়েছে, তা টিভিতে দেখে শিউরে উঠেছেন সাধারণ মানুষ। সোনারপুরের সোনার দোকানে দুষ্কৃতীদের গুলিতে প্রাণ গিয়েছে মালিকের। খড়দহের স্বর্ণঋণ সংস্থায় দুষ্কৃতীদের গুলিতে জখম হন এক মহিলা। কলকাতা লাগোয়া হুগলি জেলাতেও প্রায় সাড়ে চার হাজার সোনার দোকান রয়েছে। রয়েছে কিছু স্বর্ণঋণ সংস্থাও। কিন্তু সেখানে নিরাপত্তা ব্যবস্থা কেমন?

সাধারণ ক্রেতারা তো বটেই, জেলার বহু সোনার দোকানের কর্মীদের একাংশই স্বীকার করছেন, নিরাপত্তা রয়েছে নামেই। দুষ্কৃতীরা হামলা চালালে ঠেকানোর কোনও উপায় নেই। নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়ানো নিয়ে ওই সব দোকানের মালিকদের মাথাব্যথাও নেই বলে অভিযোগ। প্রশ্ন রয়েছে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও।

Advertisement

একটি সোনার দোকানে বা শোরুমে কী ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকা জরুরি?

পুলিশকর্তারা জানাচ্ছেন, ব্যাঙ্কে যে ধরনের আঁটোসাঁটো নিরাপত্তা থাকা দরকার, সোনার দোকানেও ততটাই নিরাপত্তা রাখতে হবে। সিসিটিভি, বার্গলারি অ্যালার্ম, আগ্নেয়াস্ত্রধারী অন্তত দু’জন নিরাপত্তা কর্মী। পাশাপাশি চূড়ান্ত সতর্কতা জরুরিও। দোকান বা শোরুমের লকার খোলার সময় কোনও বাইরের লোক যেন সেখানে না-থাকে। সব দিক নিশ্চিত করেই লকার খুলতে হবে ব্যবসায়ীদের।

হুগলির আরামবাগ, চুঁচুড়া, শ্রীরামপুর, চন্দননগর, উত্তরপাড়া, ডানকুনির বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে প্রচুর সোনার দোকান, শোরুম এবং স্বর্ণঋণ সংস্থা রয়েছে। এই ব্যবসায় লক্ষ লক্ষ টাকার পুঁজি খাটে। রয়েছে বেশ কিছু নামী সোনার দোকানের শোরুমও। তার অনেকগুলিতেই দেখা যায় গাদা বন্দুক হাতে বৃদ্ধ নিরাপত্তা কর্মী। কিন্তু তাঁরা প্রয়োজনে দুষ্কৃতীদের ঠেকাতে পারবেন কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন ক্রেতারাই। শ্রীরামপুর স্টেশন সংলগ্ন নেতাজি সুভাষ অ্যাভিনিউ, বি পি দে স্ট্রিট, বটতলা এলাকায় অলঙ্কারের শোরুম রয়েছে। সেখানকার এক ব্যবসায়ীই প্রশ্ন তুললেছেন, ‘‘প্রয়োজনে নিরাপত্তাকর্মীর বন্দুক থেকে গুলি বেরোবে কি না, তা আমরা জানি না। ওঁদের আর কতটা প্রশিক্ষণ রয়েছে?’’

বেশিরভাগ দোকানে সিসিটিভি রয়েছে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে দুষ্কৃতীরা সিসিটিভি-র ক্যামেরাও ভেঙে দিয়ে যায়। সে ক্ষেত্রে দুষ্কৃতীদের চিহ্নিত করা পুলিশের পক্ষে দুরূহ হয়। এই অবস্থায় কী করণীয়?

চুঁচুড়ার একটি সোনার দোকানের মালিক গণেশ দাস বলেন, ‘‘দুষ্কৃতীরা এখন সোনার দোকানে বেশি তাণ্ডব চালাচ্ছে। পুলিশি নজরদারি বাড়ানো দরকার।’’ বঙ্গীয় স্বর্ণশিল্পী সমিতির রাজ্য কমিটির সদস্য গোপালচন্দ্র দে বলেন, ‘‘পুলিশ দোকানে নিয়মিত ব্যবধান‌ে এলে ভাল হয়। সে ক্ষেত্রে নিরাপত্তায় গলদ রোখা যাবে।’’

জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান, সাধ্যমতো প্রতিটি থানা এলাকায় পুলিশি টহলদারি চলে। কিন্তু পুলিশকর্মীর সংখ্যা বা গাড়ি প্রয়োজনের তুলনায় নিতান্তই কম। পাশাপাশি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ব্যবসায়ীরাও সতর্ক নন। ব্যবসায়ীদের সংগঠনগুলিকে ডেকে বৈঠক করা হয়। কিন্তু তাঁরা অনেক ক্ষেত্রেই আমল দেন না। এরই সুযোগ নেয় দুষ্কৃতীরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন