প্রতীকী ছবি।
শহুরে কিছু সামাজিক সমস্যা এখন গ্রামেও আকছার দেখা যাচ্ছে। যেমন, বৃদ্ধবৃদ্ধাদের একা থাকা। এমনই বৃদ্ধবৃদ্ধাদের পাশে দাঁড়াতে কলকাতা পুলিশের ‘প্রণাম’ প্রকল্প রয়েছে। কয়েকটি জেলাতেও এমন প্রকল্প চলছে। এ বার এলাকার বৃদ্ধবৃদ্ধাদের জন্যে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিল বলাগড়ের গুপ্তিপাড়া-১ পঞ্চায়েতও। চালু হল পঞ্চায়েতের মোবাইল ফোন পরিষেবা। যে প্রকল্পের পোশাকি নাম— ‘আমার পঞ্চায়েত আমার পাশে’।
পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ জানান, এলাকার এমন অনেক বৃদ্ধবৃদ্ধা আছেন, যাঁরা নিঃসন্তান। আবার অনেকের সন্তানেরা কর্মসূত্রে বা বিয়ের পরে অন্যত্র থাকেন। ফলে, ওই সব বৃদ্ধবৃদ্ধাদের কার্যত নিঃসঙ্গ অবস্থায় দিন কাটাতে হয়। অনেক ক্ষেত্রেই তাঁদের সাহায্য করার কেউ থাকেন না। বিভিন্ন কাজে পঞ্চায়েতে বা অন্য দফতরে যেতে, সেখানে লাইন দিয়ে কাজ সারতে সমস্যা হয়। অসুস্থ হলে চিকিৎসকের কাছে বা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ারও কাউকে পাওয়া যায় না। রাতবিরেতে দরকার হলে মুশকিল বেশি। এই সমস্ত পরিস্থিতিতে নির্দিষ্ট মোবাইল নম্বরে ফোন করলেই পঞ্চায়েতের প্রধান, উপপ্রধান বা অন্য কোনও সদস্য অথবা কর্মী সাহায্যপ্রার্থী বৃদ্ধবৃদ্ধার কাছে পৌঁছে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবেন।
প্রধান অশোক সরকার জানান, নিঃসঙ্গ বৃদ্ধবৃদ্ধাদের পঞ্চায়েতের কোনও শংসাপত্র প্রয়োজন হলে, কর দিতে চাইলে বাড়িতে গিয়েই ব্যবস্থা করা হবে। বাড়িতে অ্যাম্বুল্যান্স পাঠানো থেকে ডাক্তারের কাছে বা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থাও করা হবে। শীঘ্রই পঞ্চায়েত ভবনে তথ্যমিত্র কেন্দ্রের সুবিধা মিলবে। এখানে ব্যাঙ্কের কাজকর্মও করা যাবে। প্রবীণদের যাতে লাইন দিতে না-হয়, সেই ব্যবস্থা করা হবে।
বাহাত্তর বছরের শিশিরনারায়ণ বিশ্বাস ওই পঞ্চায়েতের টেংরিপাড়ায় থাকেন স্ত্রী প্রণতিদেবীকে নিয়ে। রাজ্যের অর্থ দফতরের উচ্চ পদে চাকরি করতেন তিনি। ছেলে লন্ডনে এবং মেয়ে মুম্বইতে থাকেন। শিশিরবাবু বলেন, ‘‘পঞ্চায়েতের এই উদ্যোগ খুব ভাল। কলকাতা পুলিশের ‘প্রণাম’ প্রকল্পে মহানগরীর বহু প্রবীণ উপকৃত। পঞ্চায়েত হাত বাড়িয়ে দেওয়ায় এখানকার প্রবীণরাও সুফল পাবেন।’’ গুপ্তিপাড়া রায়পাড়ার বাসিন্দা, অবসরপ্রাপ্ত স্কুল-শিক্ষক দীপ্তেন্দু ভাদুড়ি একাই থাকেন। বছর দেড়েক আগে স্ত্রী-বিয়োগ হয়েছে। ছেলে-বৌমা অন্যত্র থাকেন। বছর বাহাত্তরের দীপ্তেন্দুবাবুর কথায়, ‘‘আমার হাঁটাচলা করতে সমস্যা হয় না। কিন্তু অনেকেই ভাল ভাবে চলাফেরা করতে পারেন না। তাঁদের জন্য এই প্রকল্প খুবই ফলপ্রসূ হবে।’’ তিনি যোগ করেন, ‘‘অসমর্থ বৃদ্ধবৃদ্ধাদের চিহ্নিত করে তাঁদের নাম নথিভুক্ত করলে ভাল হয়। ফোনের অপেক্ষায় না থেকে প্রয়োজনে পঞ্চায়েতই উদ্যোগী হয়ে নিয়মিত তাঁদের খোঁজখবর রাখুক।’’
উপপ্রধান বিশ্বজিৎ নাগ বলেন, ‘‘প্রকল্পটা সবে চালু হয়েছে। প্রবীণ গ্রামবাসীদের স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য সব চেষ্টাই করা হবে। নিঃসঙ্গতার কারণে অনেকে মানসিক অবসাদে ভোগেন। শুধু পরিষেবা দেওয়াই নয়, বছরে অন্তত এক বার শুধু প্রবীণদের জন্য কোনও অনুষ্ঠান করা যায় কি না, তা-ও ভাবা হচ্ছে। ওঁরা একা নন। পঞ্চায়েত পাশে আছে।’’